শেখ হাসিনার চিন্তার ফসল পঞ্চগড়ের চা বাগান
বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে যে চা চাষ করা সম্ভব, সে চিন্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাথা থেকেই এসেছিল। ‘বাংলাদেশ চা প্রদর্শনী- ২০১৮ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেই কাহিনি তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী।
রোববার রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) এ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে চা বাগান গড়তে নিজের অবদানের কথা উপস্থিত সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধায় যাওয়ার সময় আমি দেখলাম সীমান্তের ওপারে ভারতের দিকে প্রচুর চায়ের বাগান। কিন্তু বাংলাদেশের এদিকে কোনো চা বাগান নেই। আমি বললাম একই মাটি, ওখানে চা হলে আমাদের এখানেও সম্ভব। তখন পঞ্চগড়ের ডিসি ছিলেন যিনি তাকে বললাম, ওখান থেকে একটা চারা এনে আমাদের এখানে লাগিয়ে আপনারা পরীক্ষা করে দেখেন আমাদের মাটিতে হয় কি-না।
‘আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই, আমি পরামর্শ দেয়ার পর সেই উদ্যোগটা নিলেন। তারা (ভারতীয় কর্তৃপক্ষ) চাওয়ার পর একটা চারা দিল এবং ডিসি নিজের বাংলোয় চারাটা লাগালেন। তারপর সেই চারা টবে করে আমার কাছে নিয়ে এসে দেখালেন যে, আমাদের মাটিতে চা উৎপাদন করা সম্ভব। তারপরই আমরা উদ্যোগ নিলাম’- বলেন তিনি।
সরকারিভাবে বাগান গেতে গেলে জটিলতা থাকায় বেসরকারি উদ্যেক্তাদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে উদ্যোগ নেয়া হয় জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারিভাবে করতে গেলে কখনও এটা হবে না। ওটা করতে গেলে অনেক প্রজেক্ট করো, এটা করো, ওটা করো..। বললাম, বেসরকারি খাতে কারা আছে, তাদের সুযোগটা করে দেয়া হোক। সেই সুযোগ করে দিয়েই পঞ্চগড়ের চা বাগান শুরু।’
‘কাজী শাহেদ সাহেব তখন সেখানে ব্যবসা করতেন, খাম্বা বানাতেন। আমি তখন তাকে বললাম যে, ইট, সিমেন্টের খাম্বা না বানিয়ে চা বাগান করেন। তিনি বললেন, আপনি বললে করতে পারি। বললাম, আপনি করেন, আমরা সব সুযোগ করে দিচ্ছি। এখন তো সেই চা সব জায়গায় চলে এসেছে। আজ তো পঞ্চগড়ের চা আমরা দেখতে পাচ্ছি ইংল্যান্ডেও পাওয়া যাচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, পঞ্চগড়ের পাশাপাশি ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটেও চা উৎপাদন করার একটা ভালো সুযোগ আছে।
বন্যা ও খরা সহিষ্ণু ধান উৎপাদনে সাফল্য পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, অল্প বৃষ্টিতে, খরায় চাও যেন হতে পারে, সে গবেষণা আমরা করতে পারি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ চা বোর্ড (বিটিবি) যৌথভাবে তিনদিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। দেশ-বিদেশের চাপ্রেমীদের কাছে চায়ের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরা হচ্ছে এ প্রদর্শনীতে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু এবং চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যান আরদাশিল কবির অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বিটিবির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। দেশের চা শিল্পের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়। শেখ হাসিনা অনুষ্ঠান স্থল থেকে মতিঝিলে ৩০তলা বিশিষ্ট ‘বঙ্গবন্ধু চা ভবন’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর আগে চা বহুমুখীকরণসহ সাতটি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য শ্রেষ্ঠ সাত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন