শেরপুরের শ্রীবরদীতে ভুয়া কাজীর প্রতারণা: জাল বালাম বহি ও কাবিননামায় হয়রানির অভিযোগ

শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলা ৪ নং তাতীহাটী ইউনিয়নের রাফিউল ইসলাম নামে এক ভুয়া কাজী জাল সৃজনকৃত বালাম বহি ব্যবহার করে বিবাহ রেজিস্ট্রি করেছেন এবং কাবিননামার নকল কপি বরপক্ষের কাছে সরবরাহ করেছেন।

জানা গেছে, ছেলে পক্ষ বিদেশ যাওয়ার জন্য উক্ত কাবিননামা অনলাইনে সত্যায়নের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে জমা দেন। মন্ত্রণালয় জেলা রেজিস্ট্রার, শেরপুরকে সত্যায়ন করার জন্য নির্দেশ দিলে জেলা রেজিস্ট্রার ভূয়া কাজী রাফিউল ইসলামের কাছে সরকার অনুমোদিত বিবাহ ও তালাক নামা বহি দেখানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি কোনো বৈধ প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ফলে জেলা রেজিস্ট্রার তার ব্যবহার করা কাবিননামা বহি জব্দ করেন। এর কারণে বিদেশগামী পক্ষের জন্য বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা ঝামেলার সৃষ্টি হয়।

৪নং তাতীহাটী ইউনিয়নের সাবেক নিকাহ রেজিস্ট্রার মরহুম কাজি শামিমুর রহমানের ছেলে মো. সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, “ভুয়া কাজী রাফিউল ইসলাম গত দুই বছর ধরে তাতীহাটী ইউনিয়নের বটতলা উত্তর বাজার এলাকায় সাইনবোর্ড টানিয়ে অবৈধভাবে বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন করে আসছে। আমি বিষয়টি দুদকের গণশুনানিতে অভিযোগ করলে দুদক মহাপরিচালক বর্তমান জেলা রেজিস্ট্রারকে তদন্তের দায়িত্ব দেন।

পরবর্তীতে জেলা রেজিস্ট্রার রাফিউল ইসলামের কাছ থেকে বৈধ লাইসেন্স চান, কিন্তু তিনি তা দেখাতে ব্যর্থ হন। ফলে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে তার বালাম বহি জব্দ করা হয় এবং বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর প্রতিবেদন আকারে পাঠানো হয়।”

এর আগে রাফিউল ইসলাম জেলা রেজিস্ট্রার শেরপুরের স্বাক্ষর জাল করে ইন্ডেন্ট মহাপরিদর্শক নিবন্ধন অফিসে জমা দেন। তবে জেলা রেজিস্ট্রার তা পাঠাননি, প্রতিবেদন প্রেরণ করলে তার ইন্ডেন্ট পাশ হয়নি। সরকারি প্রেস তেজগাঁও, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিবাহ ও তালাক নামা বহি সংগ্রহ করতে না পারায় তিনি নিজেই জাল কপি তৈরি করে আসল হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছেন।

রাফিউল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, “আমি মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চিঠি পাইনি। আমি লাইসেন্স পাওয়ার পর ইন্ডেন্ট জমা দিয়েছিলাম, কিন্তু হাতে বই পাইনি। অন্য এক কাজীর কাছ থেকে বই নিয়ে বিবাহ সম্পন্ন করে যাচ্ছি।”

ভুয়া প্যানেলে তার নামে ইস্যুকৃত লাইসেন্স বাতিলের জন্য জেলা রেজিস্ট্রার শেরপুর ১৬/০৯/২০২৫ তারিখে এবং সাব-রেজিস্ট্রার, শ্রীবরদী ৯/১১/২০২৩ তারিখে ৪২৮(৮) নম্বর স্বারকের মাধ্যমে আইন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। মন্ত্রণালয় তাকে ৪/০১/২০২৪ তারিখে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছে এবং বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করেছে।

তবুও রাফিউল ইসলাম অবৈধভাবে নিবন্ধন করে যাচ্ছেন। তার দ্বারা করা সব বিবাহ ও তালাকনামা সরকারি দৃষ্টিকোণ থেকে অবৈধ। জেলা রেজিস্ট্রার, শেরপুর এবং জেলা কাজী সমিতি সাধারণ জনগণকে সতর্ক করে বলেছেন, তার কাছে কোনো রেজিস্ট্রেশন করাবেন না।