আম্মা ভাত রান্না করে রাখিও রাতে এসে খাবো

শেরপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সবুজ

ছেলেকে হারিয়ে কান্না থামছেই না হতদরিদ্র মায়ের। মাকে বলে গেছেন আম্মা ভাত রান্না করে রাখিও, রাতে এসে খাবো। কিন্তু আর ফেরা হলো না ছেলের। পড়ার টেবিলে ছড়িয়ে আছে বই ছিটিয়ে আছে কত ছন্দ, মোটিভেশনাল বাক্য। টেবিল আছে চেয়ার আছে নাই শুধু ছেলে।

বলছি, কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত শেরপুরের শ্রীবরদীর রুপারপাড়া গ্রামের সবুজ হাসানের কথা। রুপার পাড়া গ্রামের প্যারালাইজড রোগী আজাহার আলীর ছেলে সবুজ। যার আয়ে চলতো পাঁচ সদস্যের পরিবার। কিন্তু তাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে পরিবার। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবুজ ছিলো দ্বিতীয়। বড় বোনটির বিয়ে হওয়ার পরে বাবা প্যারালাইজড হয় এরপর পরিবারের দায়িত্ব নেন নিজেই। স্থানীয় এক ফার্মাসিতে পার্টটাইম কাজ করতেন সবুজ। পরিবার চালানোর পাশাপাশি নিজের আয়ে পড়াশোনা করতেন শ্রীবরদী সরকারি কলেজে। সেখান থেকেই এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় বসছিলেন।

গত ৪ই আগস্ট কোটা সংস্কার আন্দোলনে শেরপুর জেলা শহরে খরমপুর মোড়ে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হোন সবুজ। এরপর থেকেই পরিবারের কারো মুখে নাই হাসি। চলে শুধু কান্নার আহাজারি।

স্থানীয়রা জানান, শহীদ আবু সাঈদের বেশ ধরেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন সবুজ। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন সে।

তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন শ্রীবরদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ কে এম আলিফ উল্লাহ আহসান। তিনি জানান, নিহত সবুজ ওই কলেজ থেকেই এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। সে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। তার অকাল মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হলো। আমরা যেমন একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে হারালাম, ঠিক তার অসহায় পরিবার পরিবারের উপার্জনশীল ব্যক্তি সবুজকে হারালেন। আমরা তার শোকাহত অসহায় পরিবারের পাশে আছি এবং থাকবো। সবুজের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেল।

শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন জানায়, নিহত সবুজ লেখাপড়ার পাশাপাশি কবিতা লিখতেন এবং খেলাধোলাতেও তিনি সেরা ছিলেন। তার অকাল মৃত্যু আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না। সবুজর হত্যার বিচার দাবি জানাই।

খড়িয়াকাজির চর ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি আশরাফুল কবির মেম্বার জানায়, সবুজের মৃত্যুতে তার পুরো পরিবার আজ অসহায়। মেধাবী শিক্ষার্থী সবুজ লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি ওষুধের দোকানে অবসর সময়ে চাকুরি করে তার পরিবার চলাতেন। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অবৈধ অস্ত্রের গুলিতে প্রাণ হারাতে হয় মেধাবী শিক্ষার্থী সবুজকে। সবুজের রক্তের বিনিময়ে সোনার বাংলাদেশ আজ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সবুজ কে গুলি করে কে হত্যা করেছে , তাদের অতি অবিলম্বে চিহ্নিত করে। বিচারের আওতায় আনার জোর দাবী জানায়।