শেষবারের মতো স্বামী-মেয়ের লাশ দেখতে গেলেন অ্যানি
নেপাল বিমান দুর্ঘটনায় নিজে বাঁচলেও স্বামী ফারুক হোসেন প্রিয়ক ও একমাত্র সন্তান তামারা প্রিয়ন্ময়ীকে হারিয়েছেন আলিমুন নাহার অ্যানি। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গাজীপুরের শ্রীপুরে বাড়িতে গেছেন স্বামী ও সন্তানের মরদেহ শেষ বারের মতো দেখতে।
সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সংবাদ সম্মেলনে জানান, অ্যানীকে হাসপাতালে দিয়ে যাবেন এই কথা বলে স্বজনরা তাঁকে নিয়ে গেছেন।
এ ছাড়া বিমান দুর্ঘটনায় আহত কবির হোসেনের দুই পাই ভেঙে গেছে। তাঁর শরীরে আরো কিছু সমস্যা রয়েছে। তাঁর পায়ের মাংসপেশি বেরিয়ে গেছে। এজন্য প্লাস্টিক সার্জারি করতে হবে বলে জানিয়েছেন ডা. সামন্ত লাল।
বিকেল সাড়ে ৪টায় হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসা হয় কবির হোসেনকে। তাঁকে কেবিনে রাখা হয়েছে।
তাৎক্ষণিকভাবে কবির হোসেনকে দেখার পর সংবাদ সম্মেলনে ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, শাহীন ব্যাপারীর শরীরের দগ্ধ স্থানে ড্রেসিং করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাঁর শরীরের ১৬ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে জানা গেলেও ড্রেসিংয়ের পর দেখা গেছে ৩২ শতাংশ দগ্ধ রয়েছে। এখন পর্যন্ত শাহীন ও শাহরীন আহমেদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এই দুজনকে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বাকি সবাই ভালো আছে।
বাংলাদেশ থেকে মেডিকেল দল গেছিল নেপাল। এর সদস্য ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. হোসাইন ইমাম। আহত কবির হোসেনের সঙ্গে তিনিও দেশে ফেরেন আজ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে নেপালে যাওয়ার পর আমাদের মেডিকেল দল দুই ভাগে ভাগ হয়ে হতাহতদের নিয়ে কাজ করতে থাকি।’
নেপালের সংশ্লিষ্ট সব চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ডা. ইমান বলেন, ‘আমরা তাঁদের চিকিৎসা ও আন্তরিকতায় সন্তুষ্ট। তাঁরা আন্তরিকতার সঙ্গে সব রোগীর সেবা করেছেন।’
নেপালে আহত মালদ্বীপের এক নাগরিকও বাংলাদেশে এসেছেন। তবে তিনি সুস্থ থাকায় বাসায় চলে গেছেন। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বার্ন ইউনিটে ভর্তি আহত ব্যক্তিরা দ্রুত সময়ে সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন চিকিৎসকরা।
ডা. সেন জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বুধবার আহত শাহীন ও শাহরীনের অস্ত্রোপচার করা হবে। এ ছাড়া আজ আহত মেহেদী হাসান নিহতদের জানাজায় অংশ নেওয়ার জন্য আর্মি স্টেডিয়ামে যান। জানাজা শেষে তিনি আবার হাসপাতালে ফিরবেন। আর স্বামী ও মেয়ের লাশ দেখানোর জন্য স্বজনরা অ্যানিকে গাজীপুরের শ্রীপুরে নিয়ে গেছেন। তাঁর স্বজনরা তাঁকে আবার হাসপাতালে নিয়ে আসবেন বলে জানিয়ে গেছেন।
মাদারীপুর শিবচর উপজেলার বাজিদপুর গ্রামে বাড়ি কবির হোসেনের (৫৩)। দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী হেনা কবিরকে নিয়ে ঢাকার দক্ষিণখান কুড়িপাড়ারটেক এলাকায় থাকতেন তিনি।
স্ত্রী হেনা কবির জানান, তাঁর স্বামী কবির হোসেন কসমেটিক ব্যবস্থায়ী। দুদিনের জন্য ব্যবসায়িক কাজে তিনি নেপাল যাচ্ছিলেন। এ ছাড়া প্রতি মাসে চার-পাঁচবার নেপাল, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড যান কসমেটিক সামগ্রী আনার জন্য।
স্ত্রী জানান, ওইদিন বিকেলে টিভির সংবাদের মাধ্যমে তার দুর্ঘটনার কবলে পড়ার খবর পান তিনি। এর পরের দিনই বড় ছেলে আল হেলাল ইবনে কবির নেপাল যান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন