সংকট সমাধান না হলে ইবির ফার্মেসি বিভাগে ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞার হুশিয়ারি পিসিবির

ল্যাব সংকট কাটানো, ল্যাবের অকোজে যন্ত্রপাতি সরিয়ে রাখা, শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকট সমাধানসহ নানা প্রয়োজনীয় শর্ত না মানলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তিতে সতর্কতামূলক নিষেধাজ্ঞার হুশিয়ারি দিয়েছে ফার্মেসি কাউন্সিল অফ বাংলাদেশ।

গত জুন মাসে কাউন্সিলের কর্মকর্তারা বিভাগটি পরিদর্শন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। সেই সাথে কর্তৃপক্ষকে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্য এসব শর্ত পূরন করার জন্য নোটিশ দিয়েছে।

নোটিশে দেওয়া শর্তগুলো হলো- শিক্ষক সংকট কাটানো, প্রয়োজনীয় রাসায়নকি সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা রাখা, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি তৈরি, যন্ত্রপাতি, কেমিক্যাল, রিয়েজেন্ট ও জনবলসহ আটটি ল্যাব স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য হাতেকলমে গবেষণায় সুযোগ তৈরি এবং রিসার্চ ল্যাবরেটরি স্থাপন করতে হবে। প্রতিটি পরীক্ষাগারে কমপক্ষে ২৫ শিক্ষার্থী একত্রে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার উপযোগী ন্যূনতম ৫০০ বর্গফুট আয়তন থাকতে হবে। পরীক্ষাগারের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি আলাদা কক্ষ থাকতে হবে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি শর্ত আরোপ করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগটিতে শিক্ষক রয়েছেন চারজন। এর মধ্যে বিভাগে রয়েছেন দুইজন, অন্য দুইজন শিক্ষা ছুটিতে আছেন। পাঠদান স্বাভাবিক রাখতে ধার নিতে হচ্ছে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকদের। বর্তমানে বিভাগটিতে ল্যাব রয়েছে তিনটি। তবে ফার্মেসি কাউন্সিলের শর্ত অনুযায়ী আটটি ল্যাব থাকা দরকার। ল্যাবগুলোতে সহায়ক পদে কেউ না থাকায় ল্যাবগুলো দুইজন শিক্ষক দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরি থেকে রুম নিয়ে ল্যাব বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে বিভাগটির।

এদিকে নিষেধাজ্ঞা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব সংকট সমাধান করতে হবে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হলে আগামী ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে বি. ফার্ম কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে। কর্তৃপক্ষ ভর্তি নিলেও শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন দেবে না কাউন্সিলটি। এমনকি শিক্ষার্থী পাস করার পর ‘পেশাগত সনদ দেওয়া হবে না’ বলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি। তবে মানবিক দিক বিবেচনা করে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিভাগটি ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব, ল্যাব সহকারী, অফিস কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নানা সংকট এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিভাগটি। বিভাগটিতে বর্তমানে পাঁচটি ব্যাচে ২৫০জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এর মধ্যে শিক্ষক সংকটকে সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে দেখছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী বিভাগটিতে ১০ জন শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।

এর আগে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিক্ষক সংকটের কারণে বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে মানববন্ধন করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে ২০০ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দু’জন। বিষয়টি একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষক ও ল্যাব সহায়ক নিয়োগসহ চার দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা জানান, শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ না থাকায় ফ্লোরে বসে তাদের ক্লাস করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এর আগে অনেকবার জানালেও শুধু আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

শিক্ষার্থীদের সে দিনের মানববন্ধনের এক পর্যায়ে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য সেখানে গিয়ে সমস্যা সমাধানে আবারও আশ্বাস দেন। তবে এ আশ্বাস গত ১১ মাসেও কার্যকর হয়নি। এখনও শিক্ষক পাননি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বিভাগের বিভিন্ন সংকটের জন্য আমরা গতবছর বিভাগে তালা দিয়ে আন্দোলন করেছিলাম। কিন্তু তাতে তেমন কোনো সুরাহা মেলেনি। শুধুমাত্র শ্রেণিকক্ষে কিছু বেঞ্চ দিয়েছে। আমাদের বর্তমানে পাঁচটা ব্যাচ থাকায় একসঙ্গে সবাই কাজ করতে পারিনা । যেকোনো তিনটা ব্যাচ ক্লাস করতে পারে। এখনো বিভাগে নতুন কোনো শিক্ষক আমরা পাইনি । এছাড়া আমাদের ল্যাবে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই। একইসাথে ল্যাব টেকনিশিয়ান না থাকায় আমরা সঠিকভাবে শিখতে পারছি না।

এ বিষয়ে বিভাগটির সভাপতি সহকারী অধ্যাপক অর্ঘ্য প্রসূন সরকার বলেন, বিভাগ খোলার শুরু থেকেই আমাদের অনেক কিছুর প্রয়োজন ছিল। ২০১৭ সাল থেকে বিভাগ খোলার পর ৭ বছরেও বিভাগটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারেনি। প্রশাসন চাইলে বিভাগটিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে পারতো। কর্তৃপক্ষের স্বদিচ্ছা থাকলে অবশ্যই এতদিনে এই সংকটগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ফার্মেসি কাউন্সিল অব বাংলাদেশের শর্ত অনুযায়ী যে চার মাস সময় এখনো আছে আমরা সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আগামী মাসে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড আছে। আশাকরি সকলের সহযোগিতা পেলে সংকটগুলো কেটে যাবে।