সংসদ নির্বাচন: মহাজোটে কেন ভিড়তে চাইছে যুক্তফ্রন্ট?
নির্বাচনী রাজনীতিতে আবারও আলোচনায় এসেছে যুক্তফ্রন্ট। আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে জোটের পরিসর বাড়াতে দলটির সঙ্গে দেন দরবার শুরু করেছে।
গতকাল আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডির কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন বিকল্প-ধারার দুই নেতা মহাসচিব আবদুল মান্নান ও যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী।
সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে পারে বলে ওই বৈঠকে আভাস পাওয়া যায়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মাহী বি. চৌধুরী বলেন, “আমরা নির্বাচনে আসছি সেটা শতভাগ নিশ্চিত। আর জোটগত নির্বাচনে আসা অসম্ভব নয়।”
“এজন্য আমরা আলোচনা কবে হতে পারে সে বিষয়ে কথা বলেছি। তবে আনুষ্ঠানিক আলোচনার আগে এর চেয়ে বেশি খুলে বলা যাবেনা।”
এর আগে রোববার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের মহাজোটের সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট যুক্ত হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
যুক্তফ্রন্ট কেন মহাজোটে?
এতদিন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিপরীতে অবস্থান নিলেও এখন তাদের সাথেই কেন জোট বাঁধতে চাইছে যুক্তফ্রন্ট?
এ ব্যাপারে মাহী বি চৌধুরী বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাতকারে জানান, “আমরা সবসময় বলেছি, আমরা বিরুদ্ধবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে… বিকল্প ধারা তো জন্মের পর থেকে কখনোই বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কারো বিরুদ্ধে রাজনীতি করে নাই।”
“আমরা তো একসময় বিএনপি থেকে বেরিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। পরে সেই বিএনপির সাথেও তো আমরা এতদিন আলোচনা করেছি যে আমাদের নীতির ওপর ভিত্তি করে বৃহত্তর ঐক্য গঠন করা যায় কিনা। সেটা হয়নি। কিন্তু আমরা আমাদের চেষ্টা থেকে সরে যাইনি।”
রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনে আওয়ামী লীগসহ মহাজোটে সম্পৃক্ত হওয়া ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি।
এছাড়া দেশ বিরোধী শক্তিকে রুখে দেয়ার পাশাপাশি গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং গণতন্ত্রবিরোধী সব ধরণের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে মহাজোটের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন মাহী বি চৌধুরী।
বিবিসিকে তিনি বলেন, “সাংবিধানিক এই সরকার যেন হঠাৎ হোঁচট না খায়, এইজন্য আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনায় বসেছি।”
তবে এখনও আনুষ্ঠানিক কোন আলোচনা না হওয়ায় কোন কিছুই নিশ্চিত নয় উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “মহাজোট সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা নিজেদের দাবি আদায়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। দেশের যে দুটো প্রধান দল তাদের মাঝামাঝি থেকেই দাবি আদায়ের চেষ্টা করেছি আমরা।”
মহাজোট সম্প্রসারণের মধ্যে দিয়ে যদি শরীকদের একটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে নিয়ে আসা যায় তাহলে এতে বাংলাদেশের মানুষ এতে উপকৃত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কোন বিষয়ে হবে আলোচনা?
ঐক্যফ্রন্টের সামনে যুক্তফ্রন্ট যে দাবি ও লক্ষ্যগুলো রেখেছিল, এবার সেই একই বিষয়গুলো নিয়ে মহাজোটের সঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে আলোচনা করার কথা জানান মাহী বি চৌধুরী।
মহাজোটের সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে প্রধান তিনটি বিষয়কে বিবেচনায় রাখার কথা জানান তিনি। সেগুলো হল:
- গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অক্ষুণ্ণ রাখা
- সাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ণ রাখা
- স্বেচ্ছাচারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করা
এছাড়া আর কী কী বিষয়ে আলোচনা হতে পারে সেগুলো আজকের দলীয় বৈঠকে চূড়ান্ত করার কথা জানান তিনি।
তবে মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচনে আসার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলেই আসন নিয়ে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছে যুক্তফ্রন্ট।
জোটবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টা বিফলে গেলে?
তবে মহাজোটের সঙ্গে এই জোটবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি বিফলে যাবে এমনটা এখনই ভাবতে চান না মাহী বি চৌধুরী।
তিনি বলেন, “যখন আমরা কোন কাজ শুরু করি তখন তো অকৃতকার্য হওয়ার মানসিকতা নিয়ে শুরু করি না। আমরা এখন পর্যন্ত আশাবাদী বলেই মহাজোট গঠনের বিষয়ে আমাদের প্রত্যাশা রয়েছে।”
“বিএনপির সঙ্গে যখন আমরা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া চালাচ্ছিলাম, তখন আমরা পুরো আশাবাদ ব্যক্ত করে আলোচনা চালিয়েছি। ঐক্যফ্রন্ট ভেঙ্গে যেতে পারে এমন কোন চিন্তা করিনি। কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট ভেঙ্গেছে।”
এক্ষেত্রে রাজনীতির দেখানোর পথে চলার কথা জানিয়েছেন মাহী বি চৌধুরী। তার মতে, “পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে সেটা রাজনীতিই বলে দেবে এবং আমরা সে অনুযায়ী এগিয়ে যাব।”
যুক্তফ্রন্ট এতদিন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ১৩ অক্টোবর বি. চৌধুরীকে বাদ দিয়েই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন হয়। এরপর দল ভেঙে একটি অংশ ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট “বাংলাদেশ বিরোধীদের সঙ্গ ত্যাগ না করায় যুক্তফ্রন্ট বেরিয়ে এসেছে” বলে গণমাধ্যমকে জানায় যুক্তফ্রন্ট।
-বিবিসি বাংলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন