সংসদ সদস্য তবিবর রহমান সরদারের ১৩ম মৃত্যু বার্ষিকী আজ
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক যশোরের প্রবীণ রাজনীতিবিদ, যশোর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও শার্শার সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা তবিবর রহমান সরদারের ১৩ম মৃত্যু বার্ষিকী আজ। ২০১০ সালের (৩ এপ্রিল) এই দিনে তিনি এ ধরণীর মায়া ত্যাগ করে চিরবিদায় নিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী তবিবর রহমান সরদার “বাংলার মজিবর শার্শায় তবিবর” খ্যাত এই কিংবদন্তী রাজনৈতিক ১৯৩২ সালের ১মে যশোর জেলার শার্শা উপজেলার সরদার বারিপোতা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।
মরহুম মতিয়ার রহমান সরদার ও মরহুমা রাবেয়া খাতুনের জৈষ্ঠ্য পুত্র তবিবর রহমান সরদার এর বাল্যকাল কেটেছে বারিপোতা গ্রামে। শিক্ষার হাতে খড়ি নাভারণ বুরুজবাগান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সম্পন্ন করেন মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা মেট্রিকুলেশন।
এরপর খুলনার দৌলতপুর ব্রজলাল (বিএল) কলেজ থেকে সম্পন্ন করেন উচ্চ মাধ্যমিক ও বি এ পরীক্ষা। ছাত্রজীবন থেকে জড়িয়ে পড়েন আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে।
৫২ এর ভাষা আন্দোলনে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ১৯৫৪ সালে যুক্ত ফ্রন্টের শার্শা থানার আহবায়ক এবং মহকুমার আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ২০০২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৫৮ সালে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়ে শুরু হয় তার জন প্রতিনিধিত্ব। এরপর ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিপুল ভোটের ব্যবধানে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন ও ৬৯ গণঅভ্যুথানে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭০ সালে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে গণ পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যশোরের এক সমাবেশে তাকে “বাংলার মুজিবর শার্শায় তবিবর” খ্যাত স্লোগান উপাধী দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতেই তিনি ভারত যেয়ে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুটিং, তাদের দেখভাল, শরণার্থী শিবিরে খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন।মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট এই সংগঠক ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি তাজউদ্দীন আহমেদের সাথে যশোর টাউন হল ময়দানের এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। এরপর ১৯৭৩, ৯১ ও ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ছাত্রজীবনে তিনি যে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছিলেন, মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত তা থেকে তিনি বিচ্যুতি হননি। দলে গ্রুপিং থাকলেও তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়।
নতুন প্রজন্মের আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই জানেন না কেমন মানুষ ছিলেন তবিবর রহমান সরদার। তবে এটুকু বলা যায় ইতোমধ্যে তার প্রমাণ তিনি রেখে গেছেন।সংসদ সদস্য থাকা কালীন সময় এলাকায় যত স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা হয়েছে সব গুলো প্রত্যক্ষ ভাবে তার তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়েছে।
এরমধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ কলেজ, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজ, নাভারণ ডিগ্রি কলেজ, বুরুজবাগান উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বুরুজবাগান গালর্স হাইস্কুল ও ধলদা তবিবর রহমান সরদার মাধ্যমিক বিদ্যালয় (টিআরএস) সহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
পর পর ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েও তিনি অর্থের পিছনে দৌঁড়াননি। তাই শার্শা বাসি তার মৃত্যুর ১৩ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও তাঁকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন