সংসার ভাঙার খবরে মিডিয়ার অনেকেই খুশি হয়েছে : শ্রাবন্তী

‘আমার সংসার ভাঙার গুঞ্জনে মিডিয়ার অনেককেই খুশি হতে দেখলাম। কেউ কেউ তো আবার ফেসবুকে ইনিয়ে বিনিয়ে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। কী আজব দুনিয়া রে ভাই! অথচ আমি কিন্তু এখনো মনে প্রাণে চাই আমার সংসারটা টিকে যাক। অন্তত বাচ্চাদের মুখের তাকিয়ে আলমের সঙ্গে একই ছাদের নিচে থাকতে চাই।’

অনেকটা আক্ষেপের সুরে কথা বলার সময় এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন শ্রাবন্তী।

সম্প্রতি তার দাম্পত্যে ফাটলের খবরটি ছড়িয়ে পড়ে মিডিয়াপাড়ায়। এমনকি শ্রাবন্তীর সংসারের মামলা-মোকদ্দমার বিষয়টিও প্রকাশ্যে আসে। ২০১০ সালের অক্টোবর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের সঙ্গে বিয়ে হয় শ্রাবন্তীর। এই দম্পতির ঘরে দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে রাবিয়াহর বয়স ৭ আর ছোট মেয়ে আরিশার সাড়ে ৩ বছর।

শ্রাবন্তীকে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছেন তার স্বামী মোহাম্মদ খোরশেদ আলম। শ্রাবন্তীর দাবি, নোটিশটি তার হাতে পৌঁছায়নি। পৌঁছেছে তার বোনের বাসার ঠিকানায়। শ্রাবন্তীও আলমের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে ‘নারী নির্যাতন আর যৌতুক’ আইনে মামলা করেছেন।

মূলত পারস্পরিক সন্দেহ ও মনোমালিন্যের কারণে শ্রাবন্তী-আলমের সংসারে বিচ্ছেদের এই স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠেছে বলে জানা গেছে। মূল অভিযোগ তাদের এই ভালোবাসার বন্ধনে তৃতীয় ব্যক্তির আগমন।

শ্রাবন্তী বলেন, মালয়েশিয়ায় এক নারীর সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠে আলমের। মায়ের চিকিৎসার জন্য আলম সেখানে গিয়েছিল। কিন্তু এরপর সেই সখ্যতা অনেকদূর এগিয়েছে। তাদের কল রেকর্ড ও মোবাইল চেক করেও আমি অনেক কিছুর প্রমাণ পেয়েছি। অথচ সেই মেয়েটি বিবাহিত। খুব সুখেই কেটেছে বিয়ের পর আমাদের জীবন। অথচ গত একটি বছর ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে সেই মেয়ের কারণে।

শ্রাবন্তী আরও বলেন, আলমের সাথে সেই মেয়ের সম্পর্ক জানার পর আমাকে বেশ কয়েকবার হুমকি দেয়া হয়েছে। সেই মেয়ে নিজেই আমাকে হুমকি দিয়েছে প্রতিনিয়ত। এমনকি তার স্বামীকেও বিষয়টি জানিয়েছি। তারপরেও বিষয়টি সুরাহা হয়নি। অথচ মেয়েটি আমাকে বলেছে আলমের পরিবারের সাপোর্ট রয়েছে।

যদি সুরাহা হয়, তাহলে আলমের ঘরে ফিরবেন কী না জানতে চাইলে শ্রাবন্তী বলেন, দোষ আমারও আছে তারও আছে। আমিও রক্তে মাংসের মানুষ। এখন আমাদের দু’জনেরই উচিত বিষয়গুলোকে বিবেচনা করা। অন্তত বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও আমাদের সংসার যেন না ভাঙে এটা খোরশেদের ভাবা দরকার। আমি সংসার করবো বলেই আমার অভিনয়ের জ্বলজ্বলে ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে এসেছি। সেখানে আমি ফিরতেও চাই না। এখন আমি চাই আমার সংসার টিকে থাকুক। কারণ আমি ওভারস্মার্ট কোনো মেয়ে না। আমি তথাকথিত ‘ক্ষ্যাত’ একটা মেয়ে। বাচ্চাদের জন্য হলেও সংসারটা টিকিয়ে রাখতে চাই।

যদি ফিরতেই চান তাহলে নোটিশ পাওয়ার মামলা করলেন কেন? এবার শ্রাবন্তী বলেন, বাধ্য হয়ে করেছি। আলম আমাকে না জানিয়ে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছে। সে এমন সিদ্ধান্ত নেবে আমাকে একবারও বলবে না? অন্তত আমার সাথে আলোচনা করত? প্রয়োজনে মুরব্বীদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বসতাম। আমাকে না জানিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে আমি থানায় মামলা করেছি। এটা বাধ্য হয়েই করেছি। আমার কোনো উপায় ছিল না।

মুখের কথা শেষ না হতে প্রশ্ন ছোড়া হলো- বলছেন বাধ্য হয়ে, কিন্তু মামলা করেছেন নারী নির্যাতন ও যৌতুক আইনে। আলম কী সত্যিই আপনাকে নির্যাতন করতো? শ্রাবন্তী বলেন, আপনার প্রশ্ন যৌক্তিক। সে আমাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতো। এমনকি এটাও আমার ভাইকে বলতো তোমার বোনের পেছনে এত এত খরচ করেছি। কিছু একটা করো। বিভিন্ন সময় পরোক্ষভাবে আমাকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে গেছে।

তাহলে এতদিন কেন মামলা করেননি? এবার শ্রাবন্তী বলেন, আমি একটু ‘ক্ষ্যাত’ ধরনের। চেয়েছি সব সময় স্বামী-সংসার নিয়ে ঘর করতে। চেষ্টা করেছি ঘরের কথা ঘরেই রাখতে। কিন্তু সেটা আর থাকলো কই। এখন তো সবাই জেনে গেল।

এদিকে, শ্রাবন্তীর এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে তার স্বামী মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি বেশ কিছু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ডিভোর্স পেপার পাঠানো তথ্য সত্যি। তবে আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়েছে কি-না এখনও জানি না।’

খোরশেদ আলম আরও বলেন, ‘আমাদের ভেতরে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আস্থার জায়গাটা নষ্ট হয়ে গেছে। যেটা একসঙ্গে থাকলে আরও ধ্বংস হবে। আরও খারাপ দিকে যাবে বলে আমি মনে করছি। সরে আসাই দুজনের জন্য ভালো হবে।’ উল্লেখ্য, গত ২৫ জুন দুই সন্তানসহ শ্রাবন্তী বাংলাদেশে এসেছেন। এখন তিনি বগুড়ায় রয়েছেন।সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন