সক্রিয় কূটনীতিকরা, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দফায় দফায় বৈঠক
বাংলাদেশে ৩০ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে ঢাকায় নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার এরই মধ্যে তিনদফা বৈঠক করে ফেলেছেন। প্রতিটি বৈঠকেই নির্বাচনি সহিংসতা পারিহারের আহ্বান জানিয়েছেন সবাইকে।
সর্বশেষ বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারসহ বিদেশি কূটনীতিকরা ঢাকার একটি হোটেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, তুরস্ক, ডেনমার্ক, ফিলিপাইন্স, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মকর্তারা ছিলেন।
ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ছিলেন ড. কামাল হোসেন, বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান, তাবিথ আউয়াল, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, জেবা খানসহ আরো কয়েকজন।
বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বিরোধী নেতা-কর্মী ও প্রার্থীদের গ্রেপ্তার, হামলা ও সহিংসতার কথা তুলে ধরা হয়। বৈঠকের পর ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘‘নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকদের পর্যবেক্ষণে মিল আছে।’
কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে বৈঠকের পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার বলেন, ‘আমরা আশা করি নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে। নির্বাচনের পরিস্থিতি ঠিক রাখতে সব দলকে সহিংসতা পরিহার করতে হবে।’
এর আগে ১৭ ডিসেম্বর মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন৷ নব নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এই সৌজন্য সাক্ষাতের সময় আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু , গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এহসানুল করিম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘নির্বাচনি প্রচারণায় হামলা হচ্ছে বলে বিরোধী রাজনৈতিক দলের অভিযোগ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান নির্বাচনকালীন সন্ত্রাসের শিকার হয়ে তার দলেরও দুজন কর্মী প্রাণ হারিয়েছে।’ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তার দলের নেতা-কর্মীদের ধৈর্য ধারণের আহবান জানিয়েছেন বলে মার্কিন দূতকে জানান।
দেখা করার সময় মার্কিন দূত প্রধানমন্ত্রীকে জানান, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য তার দেশ ৩২ জন পর্যবেক্ষক পাঠাবে৷ মার্কিন দূতাবাসের ১১টি দল নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে।
এছাড়া গত ১৮ ডিসেম্বর মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও দেখা করেন। সেই বৈঠকে রবার্ট আর্ল মিলার বলেছেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব পক্ষকে সহিংসতা পরিহার করতে হবে এবং সহিংসতাকে নিন্দা জানাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, নির্বাচনের পদ্ধতি কার্যকর হবে না, যদি নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় সবাই সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে না পারে।’
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মিলার আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রণমূলক ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন হোক৷’ তিনি নির্বাচনি সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগও প্রকাশ করেন।
এর আগে বিদেশি কূটনীতিকরা আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও একাধিকবার বৈঠক করেছেন। বৈঠক করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিধিরা।
কূটনিতিকদের এই সাম্প্রতিক তৎপরতা নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন-এর সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচন তো সবাই চায়। একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, আমরা জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো মানবাধিকার, গণতন্ত্রসহ আরো অনেক বিষয়ে অঙ্গীকারাকদ্ধ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলতেই পারে৷ তবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করে এমন কোনো কিছু আমরা তাদের কাছে আশা করি না।’
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তাদের এই তৎপরতার ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা তা তো আরো অনেক পরের ব্যাপার৷ তবে প্রভাব পড়তে পারে, কারণ, তাঁরা কংগ্রেসে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রেজ্যুলেশন পাশ করেছে৷ তাঁরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে আগ্রহী।’
তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনের পর প্রভাব আরো বেশি পড়বে৷ যদি নির্বাচন সুষ্ঠু না হয়, তাহলে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে।’
আর জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ জানিপপ-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘সহমর্মিতার প্রশ্নে আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র এবং উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশের ক্রান্তিলগ্নে পাশে দাঁড়িয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় একাদশ সংসদ নির্বাচনে তারা যে আমাদের পাশে আছেন, তা জানান দিচ্ছে। এতে উদ্বেগের কিছু নেই। তাঁরা যে উদ্বেগ দেখাচ্ছেন যে, তারা সহিংস নির্বাচন চান না, এটা সবারই প্রত্যাশা, সব মহলের প্রত্যাশা৷ এমনকি যারা সহিংসতা করে, তারা তা স্বীকার করতে চায় না।’
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এটার একটা ধারাবাহিক অতীত আছে৷ তাই তাদের এই তৎপরতা নেতিবাচক হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন