সন্তান জন্মদানের অপেক্ষায় ৭০ হাজার নারী!
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ঠাঁই হয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গার। তাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু। মিয়ানমার থেকে আসার সময় রোহিঙ্গারা তাদের শরীরে বয়ে নিয়ে এসেছে নানা রোগ। ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। আর অধিকাংশ বিবাহিত নারী সন্তানসম্ভবা।
উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুরে এসে লিখেছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ। সহযোগিতায় ছিলেন মোসলেহ উদ্দিন, সৈয়দ ঋয়াদ ও বলরাম দাশ অনুপম।
গত এক মাস ধরে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম। তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালের হয়ে এখানে এসেছেন। তিনি জানান, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যেসব নারী রোগী দেখেছেন, তাদের বেশির ভাগই সন্তানসম্ভবা। দেখা গেছে, একজন মায়ের কোলে শিশু আছে। তিনি শিশুটিকে বুকের দুধ দিচ্ছেন। আবার জিজ্ঞাসা করার পর জানা গেল, তিনি আবার মা হতে যাচ্ছেন।
বেসরকারি একটি সংস্থার তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত ৭০ হাজারের বেশি নারী পেটে সন্তান নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এদের মধ্যে বেশির ভাগই আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সন্তান প্রসব করতে পারেন। এরই মধ্যে গত দুই মাসে অনেক নারী মা হয়েছেন। এই নবজাতকদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে। তার ওপর নবজাতকের সংখ্যা বাড়লে তাদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
এনজিও কর্মী নুরুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গারা পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে মোটেও সচেতন নয়। পরিবার পরিকল্পনা কী তাদের অনেকে সেটা জানেনই না। এ কারণে রোহিঙ্গা জনসংখ্যার বিস্ফোরণ মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
রামুর সমাজসেবা কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলাম রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন অনেকদিন হলো। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা বিবাহিত নারীদের মধ্যে যার সন্তান কম, তারও দুটো সন্তান। অনেক মা গর্ভবতী। এদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে কয়েক বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা আতঙ্কের জায়গা গিয়ে পৌঁছতে পারে। এতে তারাসহ এই অঞ্চলের মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা দারুণভাবে বিঘ্নিত হবে।’
বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে এদেশে আসার সময় সঙ্গে করে অনেক রোগব্যাধিও নিয়ে এসেছে। দীর্ঘদিন স্বাস্থ্যসেবা থেকে দূরে ছিল এই জনগোষ্ঠী। রাখাইন প্রদেশে তারা ছিল এক ধরনের গৃহবন্দি। এ অবস্থায় নাওয়াÑখাওয়ার নিশ্চয়তা খুঁজতে গিয়ে ভুলেছিল স্বাস্থ্যসেবার কথা। এখন তাদের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ব্যাধির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। সেসব রোগ ছড়াতে পারে নিঃশ^াসের মাধ্যমে। থুতু, কফ থেকেও হতে পারে নানা রোগ। জ¦র, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, কলেরায় আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক লাখ। শিশুদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া ও চর্মরোগ; নারী ও মধ্যবয়সী পুরুষদের মধ্যে যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, আমাশয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। নারীদের অনেকে প্রজননতন্ত্রে সংক্রমণ নিয়ে দীর্ঘদিন ঘুরে বেড়াচ্ছে। আতঙ্কের বিষয় হলো মরণঘাতী রোগ এইডসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৯ জন। এর মধ্যে ১৬ জন চিকিৎসারত অবস্থায় নির্দিষ্ট ক্যাম্প থেকে অন্যত্র চলে গেছেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। এই রোগীরা যদি কারো সঙ্গে অনিরাপদ যৌনমিলন বা রক্ত দেয় তাহলে তাদেরও এইডসে আক্রান্ত হওয়ার শতভাগ ঝুঁকি থাকে।
লেদা ত্রাণক্যাম্পে ওষুধ বিতরণ করছিলেন সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের সদস্য নূর। তিনি বলেন, ‘এদের মধ্যে চর্মরোগ অনেক বেশি। একেকজন রোগী কাছে এলে বিদঘুটে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। বছরের পর বছর দাউদ, একজিমার মতো অপরিচ্ছন্ন রোগ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এখানে ওষুধ নিতে আসে বেশির ভাগ মায়েরা। যাদের কোলের সন্তানটিও চর্মরোগ অথবা শ্বাসযন্ত্রে নানা প্রদাহে আক্রান্ত।’
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম বলেন, ‘রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে রোগেশোকে কাতর ছিল। অথচ চিকিৎসা করতে পারেনি। আমরা ক্যাম্পকেন্দ্রিক সরকারি ২০টি এবং বেসরকারি ২৫টি মেডিকেল ক্যাম্প বসিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছি। মোবাইল টিমও কাজ করছে। তাদের এই অসুস্থতা স্থানীয়দের জন্য মোটেও ঝুঁকিপূর্ণ নয়, এটা আমি বলব না। কারণ অনেক সংক্রামক ব্যাধি তাদের শরীরে আছে। তবে সরকার কিছু সংক্রামক রোগের টিকা এরই মধ্যে রোহিঙ্গাদের দিয়েছে। তবুও স্থানীয়দের সতর্ক থাকার জন্য আমি অনুরোধ করব।’ সূত্র : ঢাকাটাইমস
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন