সবজি চাষে ভাগ্য পরিবর্তন সাতক্ষীরার আব্দুস সাত্তারের

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ১২নং যুগিখালী ইউনিয়নের কামারালী বাজারে আলমগীর হোসেনের চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলাম। ওই গ্রামের মিজানুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী ওই চায়ের দোকানে বসে কয়েকজন লোকের সাথে গল্প করছেন আমাদের গ্রামের বদরউদ্দীন সানার বড় ছেলে আব্দুস সাত্তার সানা টমেটো, লাউ,শসাসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করে তার ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। তাছাড়া তিনি এলাকার দুইটি সবজি দল পরিচালনা করেন এবং তাদের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ জন কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়তা করেছেন।

শুনে আমার আগ্রহ জন্মালো ওই চাষীর নাম ঠিকানা জানার। মিজানুর রহমানের নিকট থেকে ওই চাষীর নাম-ঠিকানা নিয়ে ছুটে গেলাম তার বাড়িতে। বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম; আপনি কি আব্দুস সাত্তার ? উনি বললেন ঠিক বলেছেন। জানতে চাইলাম আপনি কি সবজি চাষ করেন? ওই সবজির জমিতে আমি একটু যাবো। তিনি আমাকে ওই সবজির জমিতে নিয়ে গেলেন, ঘুরে ঘুরে দেখার পরে তার কাছে জানতে চাইলাম আপনি কিভাবে এইসব সবজির চাষ করেন এবং আপনার ভাগ্য পরিবর্তনের কাহিনী ?

সবজি চাষী আব্দুস সাত্তার জানান, তিনি বেশী লেখাপড়া শিখতে পারেননি। বেকার জীবনে বিভিন্ন ব্যবসা বানিজ্য করে সামান্য আয় দিয়ে সংসার ও ছেলে মেয়েদের লেখা-পড়ার খরচ জোগাতে হিমসিম খাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি চিন্তা করতে থাকেন কিভাবে ছেলেমেয়েদের লেখা পড়ার খরচ জোগানোসহ সংসার ভালভাবে চালানো যায়। পরিকল্পনাও করলেন বাবার ১০ কাটা জমিতে টমেটোর চাষ করার।

সে মোতাবেক ২০০৮ সালে প্রথমে তিনি নিজ উদ্দেগ্যে ১০ টাকা জমিতে টমেটোর চাষ শুরু করলেন। প্রথম বছরে ওই ১০ কাঠা জমিতে তিনি খরচ-খরচা বাদ দিয়ে ভালই টাকা লাভবান হন। এরপর থেকে তার সবজি চাষের আগ্রহ বাড়লো। পরের বছর তিনি এনজিও উত্তরনের সফল প্রকল্প ও কলারোয়া কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে আরো দেড় বিঘা জমিতে টমেটো, লাউ ও শসাসহ বিভিন্ন জাতের সবজির চাষ করেন। সেসরকারী এনজিও উত্তরনের সফল প্রকল্প ও কলারোয়া কৃষি অফিসের সহায়তা নিয়ে ওই দেড় বিঘা জমিতে পরিস্কার-পরিচর্ষা করে,সার-মাটি খরচ-খরচা বাদ দিয়ে টমেটোসহ ওইসব সবজি বিক্রি করে তিনি প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা লাভবান হন। এভাবে তার সবজি চাষ করে ভাগ্য পরিবর্তন হতে থাকে। পাশাপাশি তিনি দুইটি সবজি দল পরিচালনা করে ৫০/৬০ জনের ভাগ্যবদলের সহায়তা করেন।

তিনি আরো জানান, এর পরের বছর তিনি সেসরকারী এনজিও উত্তরনের সফল প্রকল্প ও কলারোয়া কৃষি অফিসের আধুনিক প্রযুক্তি বা বিভিন্ন প্রশিক্ষনের সহায়তা নিয়ে আরো ৭০ শতক জমিতে টমেটো, লাউ, শসা ,ঢেঁড়সসহ বিভিন্ন জাাতের সবজি চাষ করেন। ওই ৭০ শতক জমি থেকে প্রায় ৩/৪ লক্ষ টাকার ফসল বিক্রি করে তিনি এখন স্বাবরম্বী হয়েছেন। বর্তমানে তিনি ১২০ শতক জমিতে টমেটোসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করেছেন। তবে এখনও পর্যন্ত পুরোদোমে বেচা-বিক্রি শুরু করেননি। তবে এবছর করোনার কারণে দেশে যদি আর লকডাউন না দেয় সরকার তাহলে এবছরও তিনি লাভবান হবেন বলে আশা করেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হাসান বলেন, বিগত ৫ বছর আগে আব্দুস সাত্তার ভাইয়ের সংসার ছিলো খুবই জরাজীর্ণ। তার ছেলেমেয়ের লেখা-পড়ার খরচ যোগানোসহ সংসার চালানো খুব কষ্ট হতো। কিন্তু বিগত কয়েক বছর তিনি টমেটোসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করে বর্তমানে তার সংসারে আর অভাব অনটন নেই বরং তার ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে তিনি মেয়ে বিয়ে দিয়ে জামাই ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুবই ভালো আছেন।