সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের ভয়ঙ্কর প্রতিচ্ছবি : আ স ম রব
তথ্য প্রতিমন্ত্রীর আচরণ কোন একক ব্যক্তির নয়, এটা রাজনৈতিক সামাজিক ‘নৈতিক অবক্ষয়’এর ভয়ঙ্কর প্রতিচ্ছবি উল্লেখ করে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব গণমাধ্যমে নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেন।
‘একজন সাংবিধানিক পদাধিকারীর যে নৈতিক স্খলনের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, মানুষের মর্যাদা বিনষ্ট করার প্রশ্নে যে কুরুচিপূর্ণ মানসিকতার প্রতিফলন ঘটেছে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহারের যে দম্ভ প্রকাশিত হয়েছে তা আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের ভয়ঙ্কর প্রতিচ্ছবি। রাজনীতিকে যে কোন উপায়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত এবং অর্থ উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে গিয়ে জাতীয় জীবন থেকে নীতি-নৈতিকতা, ভব্যতা শিষ্টাচার, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও মর্যাদাকে বিদায় এবং সাংবিধানিক চেতনাকে কবর দেয়া হয়েছে।
গত ৫০ বছরে ক্ষমতা দখলের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় অহর্নিশ লিপ্ত থাকায় জাতি হিসেবে বিকশিত হওয়ার জন্য রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে জনগণকে কোন দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি। রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের এই নৈতিক অবক্ষয় প্রকাশিত হওয়ার পরও আমাদের কোন আত্মোপলব্ধি নেই, পর্যালোচনা নেই, আত্মসমীক্ষা নেই।
আমরা রাজনীতিতে এখনো সুস্থ প্রতিযোগিতা এবং গণতান্ত্রিক মানসিকতার সৃষ্টি করতে পারিনি। ক্ষমতা ও দলের প্রতি প্রশ্নহীন ও প্রতিবাদহীন অন্ধ আনুগত্য পোষণ করে যাচ্ছি। ফলে দুইজন নারীর মর্যাদা হরণ করার পরও তথ্য প্রতিমন্ত্রীর নৈতিক সংকট ধরা পড়েনি, নৈতিক স্খলন চিহ্নিত হয়নি বরং ব্যক্তিগত মতামত বলে দায়মুক্তি দেয়ার চেষ্টাও চলেছে। সামাজিক মাধ্যমে নারীবিদ্বেষী, মর্যাদা ও সাংবিধানিক চেতনাবিরোধী বক্তব্য প্রকাশ হওয়ার পরও মন্ত্রিত্ব ঝুঁকিতে পড়ে নি, অডিও ফাঁস নিয়ে সরকার গবেষণা করে মন্ত্রিত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
দু বছর পূর্বের একটি অডিও ফাঁস না হলে হয়তো প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান এর ‘নৈতিক জগত’ প্রশ্নবিদ্ধ হতো না, বরং ‘সে’ অনুকম্পা পেতো।
নারীর “তথা মানুষের” মর্যাদা সুরক্ষার চেয়ে তার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে অনেক তথাকথিত সংগ্রামী নারী নেতৃত্ব নীরবতার নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছেন, অনেক রাজনৈতিক দল ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মৌনতা অবলম্বন করে প্রতিবাদ থেকে বিরত থেকেছেন, এটা আমাদের আত্মঘাতী এবং চরম দৈন্য মানসিকতার জ্বলন্ত নিদর্শন।
এখন তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগকে কেন্দ্র করে সরকার আত্মতুষ্টির বয়ান প্রচার করবে, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে মূল সঙ্কটকে আড়াল করবে। বিরোধী দলও মন্ত্রীর পদত্যাগকে আত্মতৃপ্তির উপকরণ মনে করবে কিন্তু এটা যে সামাজিক রাজনৈতিক জীবন ধ্বংসের ‘ব্যাধি’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এটা কেউ বিবেচনায় নিচ্ছে না। এই অপসংস্কৃতির ভয়াবহতা এবং ধ্বংসলীলা প্রতিরোধে আমাদের বিবেকের কোন তাড়না নেই।
এই ধরনের জিঘাংসা, অসহিষ্ণুতা ও নিদারুণ অনৈতিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধ অব্যাহত থাকলে আমাদের জাতি হিসাবে টিকে থাকা চরম ঝুঁকিতে পড়বে, অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে, লাখো লাখো শহীদের আত্মদান বৃথা হয়ে যাবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের মনন থেকে অপসারিত হয়ে যাবে।
মানবিক, নৈতিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাঙালীর জাগরণে জোয়ার সৃষ্টি করতে হবে যে জোয়ারের মাধ্যমে জাতির ‘নৈতিক শক্তির’ পুনরুজ্জীবন ঘটবে। এ লক্ষ্যে বিরোধ বিভক্তি জিঘাংসার পরিবর্তে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার রাজনৈতিক কর্তব্য সম্পাদনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন