সম্পর্ক ছিন্ন পরিস্থিতি কাতারকে কতটা ভোগাবে?
সৌদি আরবসহ আরব বিশ্বের ৬টি দেশের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া কাতারকে কতটা ভোগাবে? প্রায় ৩০ লাখ জনসংখ্যার এই দেশটিতে এর নেতিবাচক প্রভাব কিন্তু কম না। কয়েক বছরের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সঙ্কট হিসেবেই দেখা হচ্ছে সাম্প্রতিক এই পরিস্থিতিকে।
সৌদি আরব, মিশর, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), ইয়েমেন এবং লিবিয়া কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। কাতারের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদ সমর্থন করে উপসাগরীয় অঞ্চল অস্থিতিশীল করার অভিযোগ তুলে দেশগুলো এই সিদ্ধান্ত নেয়। আরব উপদ্বীপের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত ছোট এই রাষ্ট্রটিতে এর প্রভাব কেমন হবে, দেখে নেওয়া যাক। (সূত্র: সিএনএন, বিবিসি বাংলা)
খাবার
কাতারের প্রাকৃতিক গ্যাস বা তেল থাকতে পারে, কিন্তু তারা নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করে না। দুধ, ডিম, পনির এমনকি মুরগিও তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সৌদি আরব থেকে আমদানি করে। এখন সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তীব্র খাদ্য সংকটের মুখোমুখি দেশটি, খাদ্যমূল্যও ব্যাপক হারে বাড়তে পারে।
স্থলপথে দেশটিতে প্রবেশ করার একমাত্র পথ সৌদি আরব সীমান্ত। প্রতিদিন শত শত ট্রাক এই সীমান্ত দিয়ে আসে এবং খাদ্যদ্রব্য তাদের মালামালের একটি বড় অংশ। ধারনা করা হয় কাতারের খাদ্য আমদানির ৪০ শতাংশ এই পথে আসে। ইতিমধ্যে সৌদি আরব সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় কাতারগামী খাদ্য ভর্তি অনেক ট্রাক সৌদি সীমান্তে সারিবদ্ধ থেমে আছে।
এতে করে কাতার বিমান এবং সমুদ্রপথে মালামাল আমদানির ওপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য হবে। যা দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে।
বিমান সেবা
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এয়ারলাইন্স কাতার এ্যায়ারওয়েজ। কিন্তু এরা এখন থেকে আর সৌদি আরব, মিশর, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে না। তাই আফ্রিকা, এমনকি নর্থ আমেরিকায় যাত্রার ক্ষেত্রেও এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পথ পাড়ি দিতে হবে। এর মানে অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ, যাত্রার সময় প্রলম্বিত হওয়া এবং কারও কারও মতে এতে করে টিকেটের মূল্যও বাড়বে।
আবু ধাবির এতিহাদ এয়ারওয়েজ এবং দুবাই-ভিত্তিক এমিরেটস মঙ্গলবার থেকে তাদের দোহাগামী বা দোহা থেকে সকল ফ্লাইট স্থগিত করবে। বর্তমানে এই দুই বিমান সংস্থা দোহাতে দিনে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করে। মঙ্গলবার থেকে মিশরের কোন বিমান কাতারে যাতায়াত করবে না বলে জানিয়েছে দেশটির বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
এর আগে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মিশর ঘোষণা করে যে তারা কাতারের সাথে বিমান যোগাযোগ ছিন্ন করবে এবং নিজেদের আকাশপথ কাতার এয়ারওয়েজের জন্য বন্ধ করে দেবে।
এর ফলে দুবাই, আবু ধাবি, রিয়াদ এবং কায়রোর মত জায়গায় ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে কাতারের জাতীয় বিমান সংস্থা। তারা ইতোমধ্যেই সৌদি আরবের সাথে তাদের সকল ফ্লাইট বাতিল করেছে।
তেল দাম বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কা
কাতারের স্টক প্রাইস ইতিমধ্যে কমতে শুরু করলেও তেলের ক্ষেত্রে তা উর্ধ্বগামী। অপরিশোধিত তেল এখন ব্যারেলপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ ইউএস ডলারে। মধ্যপ্রাচ্যে কোন ধরনের অস্থিতিশীলতা তেলের দাম বাড়িয়ে দিবে।
নির্মাণ শিল্প
কাতারে এই মুহূর্তে কয়েকটি বড় নির্মাণ প্রকল্প চলছে, যাদের মধ্যে আছে একটি নতুন বন্দর, মেডিকেল এলাকা, মেট্রো প্রকল্প এবং ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য আটটি স্টেডিয়াম। নির্মাণ শিল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন কনক্রিট এবং ইস্পাত জাহাজে আসলেও, স্থলপথ দিয়ে সৌদি আরব হয়েও আসে।
সীমান্ত বন্ধ হলে খাদ্যদ্রব্যের মত নির্মাণ উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাবে এবং কাজ সময়মত শেষ করা কঠিন হয়ে যাবে। দীর্ঘ সময়ের জন্য আকাশপথ এবং স্থলপথ বন্ধ হলে বিশ্বকাপ প্রস্তুতির সময়সীমা হুমকির মুখে পরতে পারে।
জনগণ
সৌদি সরকার বলেছে সম্পর্ক ছিন্ন করার অংশ হিসেবে, সৌদি আরব, মিশর, বাহরাইন, আরব আমিরাত, লিবিয়া এবং ইয়েমেনের নাগরিকদের কাতারে যাওয়া, সেখানে বসবাস করা বা কাতার হয়ে অন্য কোন দেশে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদেরকে ১৪ দিনের মধ্যে কাতার ছাড়তে বলা হয়েছে।
একই সাথে, সৌদি আরব, আরব আমিরাত এবং বাহরাইনে বসবাসরত কাতারিদেরও একই সময়ের মধ্যে চলে যেতে বলা হয়েছে।
তবে মিশর যদি একই রকম নিষেধাজ্ঞা জারি করে তাহলে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, কাতারে এক লক্ষ আশি হাজার মিশরীয় নাগরিক বাস করছে, যাদের বেশিরভাগ নির্মাণ শিল্পের পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি এবং আইন পেশায় কর্মরত।
এই বিশাল কর্মী বাহিনী কাতার ছেড়ে চলে গেলে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো কঠিন সমস্যার মধ্যে পরবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন