‘সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নাটক সাজান ফরহাদ মজহার’
কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করা হয়নি। তিনি সরকারকে বেকায়দায় ফেলা এবং কিছু টাকা নিজের জিম্মায় নেওয়ার জন্যই ‘অপহরণ নাটক’ সাজান। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল এসক কথা বলেন। এ সময় ফরহাদ মজহার তার প্রতিষ্ঠানের সাবেক এক নারী কর্মীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।
গত ৩ জুলাই ভোরে ফরহাদ মজহার শ্যামলীর বাসা থেকে নিখোঁজ হন উল্লেখ করে তার পরিবার আদাবর থানায় একটি জিডি করে। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে যশোরের নওয়াপাড়ায় ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে তাকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি বলেন, ‘যে সময় অপহরণ হয়েছেন, সে সময় থেকে উদ্ধার হওয়া পর্যন্ত ১৮/১৯ ঘণ্টায় ফরহাদ মজহার তার স্ত্রীর সঙ্গে অন্তত ১০বার কথা বলেছেন। একই সময়ে ৬বার কথা বলেছেন অন্য একটি নাম্বারে। সে নাম্বারে তিনি একটি ক্ষুদেবার্তাও পাঠিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘সঙ্গত কারণে তদন্ত কর্মকর্তা সেই নাম্বার ব্যবহারকারীর সন্ধান করেন, তিনি একজন নারী। তিনি রাজধানীর ভাটারায় ছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে চট্টগ্রাম চলে যান।’
আইজিপি বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম থেকে সেই মহিলাকে ঢাকা নিয়ে আসেন এবং আদালতে উপস্থাপন করলে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ওই মহিলার আগে ফরহাদ মজহারও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।’
‘ফরহাদ মজহারকে আদালতে নেওয়ার আগে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি’ আইনজীবী ও বিশিষ্ট নাগরিকদের এমন মন্তব্যের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘তিনি আসামি নন। মামলার ভিকটিম। বাদীপক্ষ। তার জন্য রাষ্ট্রের আইনজীবী ও পুলিশ আছেন। তাই তাকে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে দেওয়ার কোনো আইনি বিধান নেই।’
আইনজীবীদের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা কথা বলার সময় অন্তত আইনি দিকগুলো মাথায় রাখবেন।’
শহীদুল হক ওই মহিলার আদালতে দেয়া জবানবন্দির বরাতে ফরহাদ মজহারের সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্কের ইঙ্গিত দেন। বলেন, ‘ওই মহিলা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি ফরহাদ মজহারের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা উবিনীগে কর্মরত ছিলেন। তখন তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেটি এক সময় শারীরিক সম্পর্কে রূপ নেয়। এটি ফরহাদ মজহারের স্ত্রী জানার পর তার চাকরি চলে যায়। কিন্তু এরপরও তাদের মধ্যে সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। এক পর্যায়ে ওই মহিলা গর্ভবতী হন। পরে ফরহাদ মজহারের সহযোগিতায় তিনি গর্ভপাত করান।’
আইজিপি বলেন, ‘এবার আবারো গর্ভবতী হয়ে পড়লে ওই মহিলা তা ফরহাদ মজহারকে জানান। এতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় তিনি বিমর্ষ হয়ে পড়েন। তিনি তাকে আবারো বড় ডাক্তারের মাধ্যমে গর্ভপাত করানোর আশ্বাস দেন। তারপর থেকে তিনি কীভাবে কি করেছেন, তা সহজেই বোঝা যায়।’
পুলিশের এই শীর্ষকর্তা বলেন, ‘ফরহাদ মজহার ওই মহিলাকে ঘটনার দিন দু’দফায় মোবাইল একাউন্টের মাধ্যমে ১৫ হাজার টাকা পাঠান। এটার সঙ্গে তিনি সরকারকে বেকাদায় ফেলানো এবং কিছু টাকা নিজের জিম্মায় নেওয়ার জন্য অপহরণ নাটক করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘এটা ক্লিয়ার তিনি অপহৃত হননি, নাটক সাজিয়েছেন। সরকারকে বেকায়দায় ফেলা এবং বান্ধবীর সমস্যা সমাধানে তিনি এ নাটক সাজিয়েছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘তিনি বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে বের হয়েছিলেন। এটা আদালতেও স্বীকার করেছেন।’
ফরহাদ মজহার কীভাবে নিজ উদ্যোগে ঢাকা থেকে খুলনা গিয়েছিলেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কীভাবে নিজ উদ্যোগে ঢাকা থেকে খুলনা গিয়েছিলেন, তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে তিনি যে খুলনা গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে হানিফ পরিবহনের বাসের টিকেট কেটেছেন, মোবাইলে টাকা পাঠিয়েছেন সেসব কিছুর ভিডিও ফুটেজ পুলিশের হাতে এসেছে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন