সরোদ তবলার সুর মোহনায় প্রেমতরঙ্গ উতরে বেড়ায়
সরোদের তারে তখন জোর টান। সে টানে চিঁড় ধরছে হৃদয় জমিনও। ছয়টি তারের খেল। আর তাতেই এত মোহ! এক তার ছুঁয়ে আরেক তারে আঙ্গুলের ছোঁয়া লাগতেই সুর উতরে উঠছে। সে সুর তরঙ্গ এসে মিলছে ভাবনগরের কিনারে কিনারে।
সরোদ যখন খেলছে নিজের আবশে, তখন বেহালা সঙ্গম ঘটালো সুরের মোহনায়। সরোদ-বেহালার যুগলবন্দিতে ধানমন্ডির সুর নদীতে বইতে থাকলো প্রেমধারা। রাগ সিমেন্দ্রমধ্যমম। রাগে রাগে সরোদ প্রেম দরিয়ার ঢেউ ঠেলে দিচ্ছে বেহালার কোলে। বেহালা তা লুফে নিয়ে উতরে দিচ্ছে। আবার বেহালায় রাগ উঠিয়ে নিবেদন করছে সরোদে। দু’জনের চারটি হাতের পরশেই তুফান ওঠলো শীতবেলার মধ্য রাতেও।
গতরাতে এভাবেই পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার (সরোদ) এবং ড. মাইশুর মঞ্জুনাথ (বেহলা) মিলে প্রেমবাগানে রূপ দেয় ধানমন্ডির আবাহনী খেলার মাঠ। সুরের এ প্রেম মেলায় তবলায় সঙ্গত করেন পণ্ডিত যোগেশ শামসি আর মৃদঙ্গমে অর্জুন কুমার। সরোদ ও বেহালার সুর নদীতে শ্রোতারা যখন ডুবে থাকল, তখন এককভাবে মৃদঙ্গম প্রেমরস ঢালতে থাকল তাতে। খানিক পর এককভাবে তবলার ঝড়। ততক্ষণে শ্রোতারা প্রায় বেহুশ বনে। পরিবেশনার শেষবেলায় যখন সরোদ, বেহালা, মৃদঙ্গম আর তবলার যৌথ রাগ ফুটছে, তখন শ্রোতারা মুহুর্মুহু করতালিতে অভিবাদন জানাতে থাকলেন শিল্পীদের। এমন সুরের খেল ছিল গতকাল মধ্যরাতের।
পাঁচ দিনব্যাপী বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের চতুর্থ দিনের আয়োজন শুরু হয় বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের দলগত নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। ‘নৃত্য চিরন্তন : মনিপুরি, ভারতনাট্যম, কত্থক নৃত্যার্ঘ’ শীর্ষক দুই পর্বে ভাগ করা এ পরিবেশনাটির নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন গুরু বিপিন সিংহ, পণ্ডিত বিরজু মহারাজ, শিবলী মোহাম্মদ; এবং নৃত্য ভাবনা, সার্বিক নৃত্য পরিচালনা ও সম্বনয়কারী হিসেবে ছিলেন শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম পর্বে পরিবেশিত হয় মনিপুরি, ভরতনাট্যম, ও কত্থক নৃত্যের উপস্থাপনা।
নৃত্যের হাওয়া গায়ে লাগিয়ে এরপর মঞ্চ আলোকিত করেন এবারের উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ওস্তাদ রাশিদ খান। রামপুর-সহসওয়ান ঘরানার প্রবাদপ্রতিম এই শিল্পী পুরিয়া রাগে খেয়াল পরিবেশন করেন। এসময় তার সঙ্গে কণ্ঠ সহযোগী ছিলেন নাগনাথ আদগাঁওকার, তবলায় সঙ্গত করেন পণ্ডিত শুভঙ্কর ব্যানার্জি, হারমোনিয়ামে ছিলেন অজয় যোগলেকর এবং সারেঙ্গিতে ছিলেন ওস্তাদ সাবির খান। ওস্তাদ রাশিদ খানের মনোমুগ্ধকর খেয়ালে শ্রোতারা হারিয়ে থাকেন ঘণ্টাব্যাপী।
এরপর পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার (সরোদ)এবং ড. মাইশুর মঞ্জুনাথ (বেহলা) মনকাড়া পরিবেশনা। সে রেশ কাটতে না কাটতেই খেয়াল পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন পণ্ডিত যশরাজ। তিনি প্রথমে রাগ যোগ- এ খেয়াল পরিবেশন করেন এবং পরে দুর্গা রাগে ভজন পরিবেশন করেন। তাকে তবলায় সঙ্গত করেন রামকুমার মিশ্র, হারমোনিয়ামে পণ্ডিতা তৃপ্তি মুখার্জি, কণ্ঠে রত্তন মোহন শর্মা এবং মৃদঙ্গমে শ্রীধার পার্থসারথী।
পণ্ডিত যশরাজ খেয়াল শেষে চেলো’র পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন সাসকিয়া রাও দ্য-হাস। তিনি রাগ নন্দকোষ পরিবেশন করেন। এরপর তিনি ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে’ ও ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’- এ দু’টি রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন। তাকে তবলায় সঙ্গত করেন পণ্ডিত যোগেশ শামসি, তানপুরায় বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী অভিজিৎ কুণ্ডু ও টিংকু কুমার শীল।
উৎসবের চতুর্থ দিনের শেষ পরিবেশনা ছিল ইমদাদখানি ঘরানার শিল্পী পণ্ডিত বুধাদিত্য মুখার্জির সেতার। তিনি রাগ ললিত বিস্তার গৎ ঝালা পরিবেশন করেন। তাকে তবলায় সঙ্গত করে সৌমেন নন্দী অনবদ্য পরিবেশনা উপস্থাপনা করেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন