সাতক্ষীরায় অন্যের জমি নিজের নামে রেজিষ্ট্রি করতে বেপরোয়া প্রধান শিক্ষক হাফিজ
সাতক্ষীরার তালায় অন্যের ক্রয় সম্পত্তি জোরপূর্বক নিজের নামে রেজিষ্ট্রি করে না দেওয়ায় স্থাপনা ভাংচুর সহ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে হাফিজুর রহমান নামের এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। হাফিজুর রহমানের নামে জমি রেজিস্ট্রি করে না দেওয়ায় জমির ক্ষমতাপ্রাপ্ত মালিক মনিরুল ইসলামকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে কয়েকবার।
এ ঘটনায় বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলাম। যে মামলাটি বর্তমানে সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্তাধীন রয়েছে। একই সঙ্গে প্রশাসনের সাহায্য চেয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মনিরুল ইসলাম।
এদিকে, প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে বাড়ী-ঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়ায় রিতিমত ভাইরাল হয়েছে।
অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান (৪৫) তালা সদরের আটারই গ্রামের মৃত ইসাক সরদারের ছেলে। একই সঙ্গে তিনি মুড়াকলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন। অপরদিকে, ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলাম (৩০) একই এলাকার হাজরাকাঠি গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, আশাশুনি উপজেলার দিঘালরআইট গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে কহিনুর আলম আমার মামা। বর্তমানে তিনি ঢাকার ধানমন্ডিতে চাকরি করেন। কহিনুর আলম তালা উপজেলা সদরের আটারই গ্রামের মোসলেম গাজী এবং তার স্ত্রী জামিলা খাতুনের নিকট হতে আটারই মৌজার ১২ শতক জমি ক্রয় করেন।
কহিনুর আলম চাকরীর সুবাদে ঢাকায় থাকার কারণে জমি ঠিকঠাক দেখাশুনা করতে না পারায় গত বছর ১১ ফেব্রুয়ারি উল্লেখিত জমি সাতক্ষীরার বিজ্ঞ নোটারি পাবলিক কার্যালয় থেকে এফিডেফিট করে সম্পত্তির ক্ষমতা আমার নামে হস্তান্তর করেন। সেই থেকে সেখানে বসতবাড়ী তৈরী করি আমি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পত্তি ভোগদখল করে আসছি।
জমিটি ক্রয় করার পর থেকে উক্ত সম্পত্তি নিয়ে স্থানীয় হাফিজুর রহমানের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিরোধকে কেন্দ্র করে হাফিজ প্রায় সময়ে আমার সম্পত্তি জবরদখল করার চেষ্টা করেন এবং সম্পত্তি তাদের নামে রেজিস্ট্রি করে দিতে হবে বলে নানা ধরনের জীবননাশের হুমকি দিতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাফিজ জমিতে গিয়ে তার নামে জোরপূর্বক রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার কথা জানায়।
এক পর্যায়ে আমাকে বেদঢ়ক মারপিট করেন। স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে তালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এসময় হাফিজ সহ তার লোকজন বাড়ীতে হামলা করে ভাংচুরসহ লুটপাট করে যেটা ভিডিও রয়েছে। একজন প্রধান শিক্ষকের এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে জঘন্যতম অপরাধের আওতায় পড়ে। উল্লেখিত সমস্ত বিষয়াদি উল্লেখ করে সাতক্ষীরা বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছি মামলাটি বর্তমানে ডিবি পুলিশের তদন্তাধীন রয়েছে।
জমিটি’র পূর্বের মালিক জামিলা খাতুন বলেন, দীর্ঘ বছর যাবত জমিটি তারা ভোগ দখল করে আসছিলেন। টাকার প্রয়োজন হওয়ায় জমিটি বিক্রি করেছেন। তবে জমির মালিকের সঙ্গে স্থানীয় হাফিজুর নামের এক ব্যক্তির বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। হাফিজুর জমিটি নিজের নামে রেজিষ্ট্রি দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন।সেখানে তৈরি হওয়া বাড়ি ঘরে ও প্রাচীরে সম্প্রতি ভাংচুর করে অনেক টাকার জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে আদালতে মামলা করা হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রধান শিক্ষক হাফিজের নেতৃত্বে একটি বাহিনী কয়েক দফায় ভাঙচুর চালায়। ভাঙচুরের পাশাপাশি জীবননাশের হুমকি এবং অনেক প্রয়োজনীয় মালামাল লুটপাট করে নিয়েছে তারা। হাফিজের নামে জমি রেজিস্ট্রি করে দিলে তিনি কোন প্রকার হামলা কিংবা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবেন না বলে জানায়। ক্রয়কৃত সম্পত্তি ভোগ দখল থাকা অবস্থায় একজন প্রধান শিক্ষকের এমন কর্মকাণ্ড সমাজের জন্য ভাল কিছু বয়ে আনতে পারেনা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান বলেন, জমিটি নিয়ে ইতিপূর্বে জটিলতা ছিল। জমিটি তাদের ভিটাবাড়ীর সম্পত্তির মধ্যে পড়ে এজন্য সেখানে কয়েকবার বাঁধা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অবগত রয়েছেন। এসময় তিনি মালামাল লুটপাট এবং ভাঙচুরের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মুহাঃ আবুল খায়ের বলেন, এ বিষয়ে অফিসে লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হবে। যদি ওই শিক্ষকের কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন