সাতক্ষীরায় ‘একটি বাড়ী, একটি খামার’ প্রকল্পের ৬৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, ২জন বহিস্কার ও ৪জনকে শোকজ
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের উপকারভোগী সদস্যদের সঞ্চয়ের টাকা জমা না দিয়ে ও সদস্যদের নামে ঋণ উত্তোলন করে ৬৬ লক্ষ ৬৪ হাজার ২৫০ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে।
অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক ও উপজেলা সমন্বয়কারী বদরুল আলম ও ফিল্ড অফিসার রিজিয়া পারভীন কে সাময়িক বরখাস্ত ও জুনিয়র অফিসার সালমা খাতুন, অফিস সহকারী কামরুজ্জামান ও শিব প্রসাদ বৈদ্য কে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছে কর্তৃপক্ষ।
সূত্র মতে, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় ২০১৪ সালে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’। সরকারিভাবে পরিচালিত হওয়ায় উপজেলার গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে এই সমিতি।
সর্বশেষ অডিট অনুযায়ী, উপকারভোগী সদস্যদের সঞ্চয়ের টাকা জমা না দিয়ে ও সদস্যদের নামে ঋণ উত্তোলন করে গ্রাহকদের ৬৬ লক্ষ ৬৪ হাজার ২৫০ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে।
কলারোয়া উপজেলার পাচপোতা গ্রামের মোখলেসুর জানান, তিনি ২০১৪ সালে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ সমিতির সদস্য হন। প্রতি মাসে সঞ্চয়ের টাকাও জমা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে অফিস থেকে টাকা জমা দেওয়ার বই আজও পাননি। উল্টো অফিস থেকে এসে বলে গেছে তার নামে ৪৫০০০ হাজার টাকার ঋণ উঠানো হয়েছে। কিন্তু ঋণের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
একই গ্রামের শাহিনুর জানান, সমিতির কর্মকর্তারা তার বাবা, ভাই ও বোনের নামে ঋণ তুলে আত্মসাৎ করেছেন। তারা কোন ঋণ নেননি।
হরিণা গোয়লচাতর গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি কখনও অফিসে যাননি। কোন কাগজপত্রে স্বাক্ষরও করেননি। অথচ তার নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। সদস্য বই তার বাড়িতে আছে। কিভাবে এই ঋণের টাকা দেওয়া হলো? আর কে উঠালো? তা তিনি জানেন না।
রিক্তা খাতুন নামে আরও একজন জানান, তার নামেও ঋণ উঠানো হয়েছে। কিন্তু তিনি জানেন না।
আবার ফাহিমা ইয়াসমীন ও আজিজুর রহমান নামে দু’জন জানান, তারা ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণের টাকা সুদসহ পরিশোধও করেছেন। কিন্তু টাকা অফিসে জমা হয়নি।
একই অভিযোগ করলেন কলারোয়া উপজেলার কেড়াগছি ইউনিয়নের লাভলী, কবিরুল, হালিমা খাতুন, শাহিনুর, কবিরুল সহ ১৩২৪ জন সদস্য। তাদের সবার নামেই ঋণ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা জানেনই না।
সম্ আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের ঢাকা অফিস থেকে অডিট অফিসাররা উপকারভোগীদের এলাকা পরিদর্শন করলে গ্রাহকরা এসব তথ্য জানতে পারেন।
এদিকে, অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় বরখাস্ত সাবেক কলারোয়া শাখা ব্যবস্থাপক ও উপজেলা সমন্বয়কারী বদরুল আলম জানান, তিনি কোন টাকা আত্মসাৎ করেননি। যারা টাকা নিয়েছে তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তবে তার মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বল ছিল বলে তিনি স্বীকার করেন।
তবে ফিল্ড অফিসার রিজিয়া পারভীন জানান, বদরুল আলম শাখা ব্যাবস্থাপকের দায়িত্বে থাকাকালিন তিনি তার শশুরবাড়ী লোহাগড়ার নড়াইলে কেড়াগাছি সমিতি থেকে ১৬ লক্ষ ৮৫০০০ টাকা তিনি ভুয়া ঋণের টাকা সদস্যদের নামে তাকে উত্তোলন করে দেন।
বরখাস্ত হওয়া ফিল্ড অফিসার রিজিয়া পারভীন জানান, ইতোমধ্যে কিছু টাকা ফেরতও দিয়েছেন। তবে তার নিকট অতিরিক্ত টাকা দাবি করা হচ্ছে। তার পক্ষে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব না। তিনি সর্বমোট ৩৭ লাখ টাকার মত নিয়েছেন। এর মধ্যে ৫,৫০,০০০ টাকা তার কাছ থেকে ধার হিসেবে ও ১৬ লক্ষ ৮৫০০০ টাকা তিনি ভুয়া ঋণের টাকা দিয়েছেন সাবেক কলারোয়া শাখা ব্যবস্থাপক ও উপজেলা সমন্বয়কারী বদরুল আলম ও জুনিয়র অফিসার সালমা পারভীনের কাছে, তারা দুজনে এখন আর রিজিয়া পারভীনের মোবাইল কল রিসিভ করেন না। সে কারণে ভুয়া ঋণের টাকা তিনি পরিশোধ করতে পারছেন না।
জুনিয়র অফিসার সালমা খাতুনের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তিনি বিভিন্ন দুর্ণীতির মাধ্যমে কলারোয়া শাখা থেকে ২০ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাত করে তালা উপজেলার ইসলামকাঠি ইউনিয়নের কাজীডাঙ্গা সুজনশাহ গ্রামে ও খুলনার ময়লাপোতা এলাকায় জমি ক্রয় করেছেন। ইতোমধ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থপনা পরিচালক শেখ আমনুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রে তাকে ৯,৯৯,৬৩৮ টাকা অনিয়োমের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে প্রধান শাখা থেকে কারন দর্শানোর নোটিশ দেওয়াা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কলারোয়া উপজেলার ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী ও শাখা ব্যাবস্থাপক শিরীন সুলতানা জানান, কেড়গাছি ইউনিয়ন ভুয়া ঋণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আত্মসাৎকৃত গ্রাহকদের ৬৬ লক্ষ ৬৪ হাজার ২৫০ টাকার বিষয়ে ইতোমধ্যে ০২ জনকে সাময়িক বরখাস্ত ও ০৩ জনার নামে কারন দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে, আমি অফিসে যোগদান করার পরে অত্র কার্যালয়ের সার্বিক শৃঙ্খলা আনয়ন করেছি। পাশাপাশি অফিসে কর্মরত জুনিয়র অফিসার, ফিল্ড অফিসার ও অফিস কর্মচারিদের সমিতির সদস্যদের সঞ্চয় ও ঋণের টাকা এখন নিয়ম অনুযায়ী বিতরণ করা হচ্ছে।
‘একটি বাড়ী একটি খামার’ প্রকল্পের জেলা সমন্বয়কারী বিশ্বজিত সরদার সমিতির সদস্যদের নামে সঞ্চয় ও ঋণের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে জানান- কলারোয়া শাখার কেড়াগাছি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম সমিতি থেকে ৬৬ লক্ষ ৬৪ হাজার ২৫০ টাকা তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক ও উপজেলা সমন্বয়কারী বদরুল আলম ও ফিল্ড অফিসার রিজিয়া পারভীন কে সাময়িক বরখাস্ত ও জুনিয়র অফিসার সালমা খাতুন, অফিস সহকারী কামরুজ্জামান ও শিব প্রসাদ বৈদ্য কে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছে শৃঙ্খলা ও আপিল বিভাগ। এর পরবর্তীতে বিভাগীয় মামলা হবে। তাদের নামে ফৌজদারি মামলারও প্রস্ততি চলছে। এই টাকা উদ্ধার করার জন্য সব ধরনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন