সাতক্ষীরায় ধ্বংসের পথে নকিপুর জমিদার বাড়ি

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঐতিহাসিক নকিপুর জমিদার বাড়ি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই স্থাপত্যশৈলী কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও সংরক্ষণের অভাবে দিন দিন জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে।

শ্যামনগর বাংলার বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম মহারাজ প্রতাপাদিত্যর স্মৃতি বিজড়িত স্থান। জমিদার হরিচরণ রায় বাহাদুরের প্রভাবশালী শাসনের সময় নির্মিত নকিপুর জমিদার বাড়িটি একসময় এলাকার গৌরবময় প্রতীক ছিল। ১৮৮৮ সালে নির্মিত তিনতলা বিশিষ্ট বিশাল এই ইমারতটি এখন প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় টিকে আছে।

স্থানীয়দের মতে, একসময় প্রজারা জমিদার বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় জুতা খুলে সম্মান জানাতো। কিন্তু আজ সেই বাড়িটি অযত্ন-অবহেলায় পরিণত হয়েছে ভুতুড়ে স্থাপনায়। জানালা-দরজা উধাও, দেয়ালে জন্ম নিয়েছে বটগাছ, ইট খসে খসে পড়ছে। অথচ বাড়িটির ঐতিহাসিক মূল্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এটিকে সংরক্ষণ করা হলে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারতো।

জমিদার হরিচরণ রায় বাহাদুর শুধু শাসকই ছিলেন না, তিনি জনহিতকর বহু কাজ করেছেন। তার উদ্যোগে নকিপুর মাইনর স্কুল (বর্তমানে নকিপুর সরকারি হরিচরণ পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়), রাস্তা, খাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়। জমিদারবাড়ি সংলগ্ন দুর্গামণ্ডপ, নহবতখানা, শিবমন্দির ও পুকুরঘাট এখনো তার অতীত ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে রয়েছে।

বাড়িটির নকশা ও নির্মাণশৈলী ছিল অনন্য। সাড়ে তিন বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এ ভবনে ছিল শক্তিশালী সিংহদ্বার, প্রশস্ত বারান্দা, ভূগর্ভস্থ কক্ষ, সুদৃশ্য পুকুর, নহবতখানা ও কারুকাজ খচিত কাঠের আসবাব। ১৯৫৪ সালে জমিদার পরিবার ভারতে পাড়ি জমানোর পর এই স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণ আর হয়নি।

সরকারিভাবে এটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা থাকলেও কার্যত কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপ ছাড়া নকিপুর জমিদার বাড়ির অতীত ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।