ধর্ষণের শিকার মাহাফুজার দায়িত্ব নিলেন প্রধানমন্ত্রী
সাতক্ষীরার কলারোয়ার সেই মুক্তিযোদ্ধা স্ত্রী’র পাশে অতি. এ্যাটার্নি জেনারেল
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দেড় যুগ পূর্বে ধর্ষণের শিকার হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর খোঁজখবর নিতে আসলেন অতিরিক্ত এ্যাটার্নি জেনারেল এস এম মুনীর।
২৮ নভেম্বর শনিবার দুপুরের পর উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদী গ্রামে তার বাড়িতে যান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে অতিরিক্ত এ্যাটার্নি জেনারেল।
সেসময় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ধর্ষণের শিকার হিজলদী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমানের স্ত্রী মাহাফুজা খাতুনকে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী তুলে দেন অতিরিক্ত এ্যাটার্নি জেনারেল। ঘোষণা দেন পাশে থাকার, ধর্ষণের সেই মামলা পুনরুজ্জীবিত করে সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার আশ্বাস দেন।
ধর্ষণের শিকার মাহাফুজার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমান, তার পুত্রসহ স্বজনরা তখন উপস্থিত ছিলেন।
২০০২ সালে ২৬ আগস্ট রাত ২টার দিকে দূর্বৃত্ত কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন মুক্তিযোদ্ধা স্ত্রী মাহাফুজা। অসুস্থতাবস্থায় চিকিৎসা নিতে ভর্তি হন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। দেশব্যাপী সমালোচিত ওই ঘটনায় ধর্ষণের শিকার মাহাফুজাকে দেখতে ও খোঁজখবর নিতে ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা আসেন। ঢাকা ফেরার পথে সেদিন কলারোয়া তার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে খোঁজখবর ও শুভেচ্ছা উপহার দিতে এসেছি’ উল্লেখ করে অতিরিক্ত এ্যাটার্নি জেনারেল এস এম মুনীর বলেন, ‘২০০২ সালে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা উনাকে দেখতে আসছিলেন। তখন বিএনপি এবং এখানকার সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাকে প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছিল। ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এখানকার জনগণই তাকে বাঁচিয়েছিলেন। আপনারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে বাঁচিয়েছিলেন। সেজন্য আজকে আমরা তাদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা এখানে এসেছি। আমাদের বলেছেন যে মাহাফুজা বেগমের খোঁজখবর নেয়ার জন্য এবং সে কী অবস্থায় আছে, তার মামলা কী অবস্থায় আছে এই সব কিছুর খোঁজখবর নেয়ার জন্য আমাদের বলেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা তাকে উপহার প্রদান করেছি।’
তিঁনি আরো বলেন, ‘আপনার জানেন মাহাফুজা খুব গরীব লোক, তার মামলা পরিচালনা করার ক্ষমতা নেই। নেত্রী বলেছেন সমস্ত দায়-দায়িত্ব তিঁনি নেবেন। মুক্তিযোদ্ধা স্ত্রী সেজন্য উঁনি (প্রধানমন্ত্রী) মন কাঁদে। কিন্তু বিভিন্ন কাজে এতো ব্যস্ততার কারণে আপনার কাছে আসতে পারেন নাই। উঁনি বলেছেন বলেছেন শুভেচ্ছা থাকলো আপনার উপর এবং একটা ম্যাসেজ আমি দিতে চাই তখন যদি এই শ্লীলতাহানীর জন্য আমাদের নেত্রী আসছিলেন তাকে যদি আঘাত করা না হতো, তাকে ধর্ষকের পক্ষে এই বিএনপি এবং তার দোসররা যে সাহায্য সহযোগিতা করেছিলো তখন সেই সাহায্যের জন্য আজকে দেশে ধর্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সেদিন যদি ধর্ষিতার পক্ষে থাকতেন বিএনপি এবং তৎকালীন সরকার পক্ষ আমাদের আজকে এই ধর্ষণের কেস বৃদ্ধি পাইতো না। আমরা মনে করি এবং আপনারা জানেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ধর্ষকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন, জিরো টলারেন্সে আছেন এবং আগামিতে কাউকে ছাড়া হবে না ধর্ষকদের। আগামি দেখবেন যে, ধর্ষণের আর স্থান নেই এবং বিশেষ জিরো পজিশনে চলে আসছে।’
আ.লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত এ্যাটার্নি জেনারেল এস এম মুনীর বলেন, ‘আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হন। আপনারা এক হন, সামনে আরো কঠিন দিন আসবে। বিএনপি সন্ত্রাসী আছে তাদের নির্মূল করতে হবে। আ.লীগের মধ্যে যদি কোন কম্প্রোমিউজার থাকে তাহলে তাদের অনুরোধ করবো আপনারা মাফ করেন আমাদের। সাচ্চা লোক নিয়েই আ.লীগ হবে। যেখানে সৎ, নির্ভিক এবং দেশের জন্য যারা আত্মনিয়োগ করবেন, দলের জন্য যারা আত্মনিয়োগ করবেন তাদের নিয়েই আ.লীগ আবার নতুন করে শক্তি সঞ্চার করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আপনারা সহযোগিতা করবেন, সাহায্য করবেন।’
দেড়যুগ আগে ঘটে যাওয়া মাহাফুজা ধর্ষণ মামলা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিঁনি বলেন, ‘সেজন্য আমরা এসেছি, মামলা যেখানে শেষ হয়েছিলো সেখান থেকে আমরা খবর পেয়েছি সেটা হাইকোর্টে পেন্ডিং আছে এবং হাইকোর্টে আমরা যাওয়ার পরে এই মামলাটি তুলে যাতে ধর্ষকদের ন্যায় বিচার হয় সেই চেষ্টা করবো। আর আপনারা জানেন যে, তৎকালীন বিএনপি সরকারের ইন্ধনে এই মামলটি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো এবং সেই মামলটি যাতে সঠিক পথে আবার চালু হয় সেই প্রচেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ। তাদের প্রভাবেই বিলম্বিত হয়েছিলো এবং তারা চেষ্টা করেছিলো মামলটি নষ্ট করে দেয়ার জন্য কিন্তু মামলাটি শেষ মুহুর্তে সেটার বিচার হয়েছিলো। কিন্তু বিচারটি সঠিকভাবে হয়নি বলে সরকার পক্ষ আপিল করেছে এবং সেই মামলাটি আগামিতে আপিল অচিরেই শেষ হবে বলে আমি বিশ্বাস করি, আমরা সেই দিকে উদ্যোগ নেবো।’
আগামি ২/৩ মাসের মধ্যে মামলটি বিচারিক প্রক্রিয়া চালু করতে এবং শেষ করতে পারবো বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
কাগজপত্র পর্যালোচনা করে মামলা সংক্রান্ত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর বলেন।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু, উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মদ স্বপন, সহ.সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান সম মোরশেদ আলী ভিপি, সহ.সভাপতি শেখ জাকির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আলিমুর রহমান, সাবেক আহবায়ক সাজেদুর রহমান খাঁন চৌধুরী মজনু, পৌর আ.লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান, উপজেলা পরিষদের দুই ভাইস চেয়ারম্যান কাজী সাহাজাদা ও শাহনাজ নাজনীন খুকু, ঢাকা সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এড. মোহাম্মাদ হোসেন, সাতক্ষীরা জর্জ কোটের পিপি আব্দুল লতিফ, চন্দনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনি, আ.লীগ নেতা অধ্যাপক আমজাদ হোসেন, রবিউল আলম মল্লিক রবি, সাবেক চেয়ারম্যান ভুট্টোলাল গাইন, প্রেসক্লাবের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমএ কালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ মোসলেম আহম্মেদ, আ.লীগ নেতা অধ্যাপক আব্দুর রহিম, সাবেক চেয়ারম্যান অজিয়ার রহমান, মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম শিমুল, ডালিম হোসেন, দেয়াড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবর রহমান মফে, কয়লা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ইমরান হোসেন, মাস্টার রফিকুল ইসলাম, প্রভাষক আব্দুল মান্নান, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান তুহিন, ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম, এরশাদ আলী, নুরুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, আব্দুল আহাদ, সাংবাদিক সরদার জিল্লুর রহমান, সরদার ইমরান হোসেন, জুলফিকার আলী প্রমুখ।
হিজলদী যাওয়ার আগে কলারোয়া পৌছুলে অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেলকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান আ.লীগের নেতাকর্মীরা।
মাহফুজা খাতুন নিজেও তাকে নির্যাতনের ঘটনা বর্ননা করেন এবং এর সুষ্ট বিচার দাবি করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ২৬ আগস্ট হিজলদী গ্রামে নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমানের স্ত্রী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী মাহফুজা খাতুন। গভীর রাতে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নিকটস্থ একটি জঙ্গলে ফেলে তার শ্লীলতাহানি করা হয়। অচেতন অবস্থায় তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ ঘটনার পর ৩০ আগস্ট খুলনা সফররত তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা খুলনা থেকে তাকে দেখতে সাতক্ষীরা হাসপাতালে আসেন। পরে তিনি যশোর অভিমুখে ফিরে যাবার সময় তার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটে এবং তার সফর সঙ্গীদের কয়েকজন আহত হন।
এদিকে, মাহফুজা খাতুনের ধর্ষণ মামলায় সাতক্ষীরা আদালতে আমিরুল বৈদ্য, আসাদুজ্জামান, তোজাম্বর ও হাসান এর বিরুদ্ধে পুলিশ ২০০২ সালের ২১ নভেম্বর চার্জশীট দিলেও বিচারে সব আসামি খালাস পায়। এরপর থেকে মাহফুজা খাতুন আরও আতংকিত হয়ে পড়েন। পরে তিনি চলে যান যশোরের মনিরামপুরে। এরপর দীর্ঘসময় ঢাকায় কাটিয়ে স¤প্রতি ফিরেছেন নিজ বাড়িতে।
স্থানীয় চন্দনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনি জানান, শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমানকে ১৫ শতক জমি ৯৯ বছরের জন্য বন্দোবস্ত দেন। এই খাস জমিতেই তারা বসবাস করতেন। এই জমি কেড়ে নেওয়ার লক্ষ্যে মাহফুজা খাতুনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। একই সাথে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা চালানো হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন