সাতক্ষীরার কলারোয়ায় স্কুল ছাত্রী হত্যার ঘটনায় মামলা, প্রেমিক আটক

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় চাঞ্চল্যকর স্কুল ছাত্রী সঞ্চিতা হোসেন সেঁজুতি (১৩) হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আটক হয়েছে কথিত প্রেমিক আব্দুর রহমান।
আটক আব্দুর রহমান (১৮) নিহত প্রেমিকার প্রতিবেশি উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের জালালাবাদ গ্রামের আলতাফ হোসেনের পুত্র। সে কলারোয়া সরকারি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

নিহত সঞ্চিতা হোসেন সেঁজুতি ওই গ্রামের সোহরাব হোসেন পলাশ ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী লায়লা পারভীনের একমাত্র কন্যা। সে কলারোয়া গার্লস হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।

নিহত সেজুতির মা বাদি হয়ে কলারোয়া থানায় এ মামলা দায়ের করেন সোমবার। মামলায় আব্দুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে কলারোয়া থানার ওসি নাসির উদ্দীন মৃধা জানান, ‘সেজুতি হত্যার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। র‍্যাব সদস্যরা রহমানকে আটক করেছে।’

উল্লেখ্য, কৃষি ক্ষেতের কুল বাগানে সেঁচের ড্রেন থেকে উপুড় করা অবস্থায় সোমবার (২৮ মার্চ) সকালে সেঁজুতির মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত সেজুঁতির মা ঢাকায় থাকতো। তার পিতা ও সৎমা থাকতো কলারোয়ায়। সে তার দাদা-দাদীর সাথে জালালাবাদ গ্রামের বাড়িতে বসবাস করতো বলে স্থানীয়রা জানায়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মশিয়ার রহমান বলেন, গত ছয় মাস আগে আব্দুর রহমান নামের ওই যুবকের সাথে এই মেয়ের ভালোবাসা সম্পর্কের জেরে পরিবারের থানা পুলিশের মাধ্যমে এটি মীমাংসা হয়। সোমবার ড্রেনে উপুড় করা অবস্থায় মেয়ের মৃতদেহ পাওয়া যায়। মঙ্গলবার প্রেমিককে আটক করেছে র‌্যাব।

মেয়ের পিতা সোহরাব হোসেন পলাশ বলেন, আফিল কোম্পানিতে চাকুরির সুবাদে যশোর বারান্দীপাড়ায় ১৩ বছর আগে জন্মগ্রহণ করে সেঁজুতি। সে দ্বিতীয় স্ত্রীর মেয়ে। গত ১ বছর আগে প্রতিবেশী আলতাফ হোসেনের ছেলে আব্দুর রহমানের সাথে সেঁজুতির সক্ষতা গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে গভীর সম্পর্কে রূপ নেয়। এমনকি গত ছয় মাস আগে সেঁজুতিকে ফুসলিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় আব্দুর রহমান। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও থানা পুলিশের সহযোগিতায় মীমাংসা করা হলেও তার রেশ কাটেনি।
এর জের ধরেই পরিকল্পিত ভাবে এই হত্যা হতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।

তিনি আরো বলেন, ঘটনার দিন এশার নামাজের পর থেকে মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। এক পর্যায়ে মধ্য রাতে থানার শরণাপন্ন হয়ে মেয়ে নিখোঁজের ঘটনায় একটি ডায়েরি করে বাড়ি ফেরেন তিনি। ভোরে খবর পান মেয়ের মৃতদেহ পার্শ্ববর্তী বাগান সংলগ্ন ক্ষেতের ড্রেনে পড়ে আছে।
এ হত্যার সাথে যেই জড়িত থাকুক তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।

মেয়ের দাদা আবুল হোসেন বলেন, নাতনি সব থেকে সুন্দরী মেয়ে ছিল। তাকে অনেক ছেলে যেমন পছন্দ করতো তেমনি বিরক্তও করতো। তবে সেঁজুতিকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে।

আটক যুবক আব্দুর রহমানের পিতা আলতাফ হোসেন বলেন, আমার ছেলে কখনোই হত্যা করতে পারে না। অন্য কেউ হত্যা করে দোষ আমার ছেলের ঘাড়ে চাপাচ্ছে। পুলিশ তদন্ত করে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করবে এবং যেই জড়িত এ হত্যার পেছনে সে অবশ্যই শাস্তি পাবে।
তার মা জানান, নিখোঁজের সন্ধ্যারাতে বাজারের মোড়ের একটি দোকানেই ছিলো আব্দুর রহমান। সেঁজুতির পিতা আমাদের বাড়িতে তাকে খুঁজতে আসলে ছেলেকে ডেকে তার সামনে উপস্থিত করা হয়। রাতে বাড়িতেই ছিলো আব্দুর রহমান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা বলেন, মেয়ের সাথে প্রতিবেশী এক ছেলের যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তা এলাকাবাসী সবাই জানে। তারা একে অপরকে ভালোবাসতো তার বিবাহ করতে চেয়েছিল। একবার পালিয়েও গিয়েছিল। কিন্তু পরিবার তাদের সম্পর্ক মেনে নেইনি। এই হত্যা যেই করুক অনেক বড় রহস্য রয়েছে এই হত্যার পিছনে।

পারিবারিক কলহ নাকি সম্পর্কের টানাপোড়নে হত্যার শিকার অল্প বয়সী স্কুল পড়ুয়া মেয়ে সেঁজুতি? যেই হত্যা করুক তাকে আইনের আওতায় এনে ফাঁসির দাবি করেছেন এলাকাবাসীরা।

কলারোয়া থানার ওসি নাসির উদ্দীন মৃধা বলেন, প্রাথমিক তদন্তে শ্বাসরোধ করে মেয়েকে হত্যার পর বাগানের সেঁচের পানি যাতায়াতের ড্রেনের মধ্যে উপুর করে ফেলে রাখা হয়। ঘটনাস্থল থেকে সাদা ও নেবিব্লু রং এর দুটি ওড়না এবং নতুন লাল ধরনের জুতা উদ্ধার করা হয়। শ্বাসরোধ করে হত্যার গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মীর আসাদুজ্জামান জানান, এ ঘটনায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।