সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে ইউপি সদস্যের স্ত্রীর আত্মহত্যা

আবু বক্কর সিদ্দিক, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি: কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগরে পারিবারিক কলহের জেরে নূরজাহান (৫১) নামে এক গৃহবধুর গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (১১ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউপির উত্তর রঘুনাথপুর (মোল্লারহাট) গ্রামে। সে কৃষ্ণনগর ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল গফফারের স্ত্রী।

নিহত নূরজাহান বড় ছেলে আব্দুল গফুর জানায়, সন্ধ্যা পর্যন্ত আব্বা, আম্মা স্বাভাবিক ছিল। মাগরিবের পরে আব্বা বাহিরে চলে যায় এবং পরে বাড়িতে এসে লাইট অফ করে ঘরের দরজা বন্ধ থাকতে দেখে। বাহির থেকে দোকানের লাইট জালিয়ে বসত ঘরের দরজা খুলে আম্মাকে দড়ির সাহায্য ঘরের আড়ার সাথে ঝুলে থাকতে দেখে চিৎকার করে এবং দ্রুত রশি কেটে নামায়। পরে পাশ্ববর্তী শ্যামনগর উপজেলা কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নূরজাহানকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পূর্বের দিন তার আব্বা, আম্মা ঝগড়াঝাটি মারামারি করেছিল এবং তার আম্মা বিভিন্ন সময়ে আত্নহত্যার কথা বলত বলে সে জানায়।

নুরজাহানের ভগ্নিপতি একই ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জব্বার বলেন আমি ঘটনাস্থলে আসার পরে স্থানীয়রা জানায় গতকাল তারা স্বামী-স্ত্রী ঝগড়াঝাটি করেছে এবং আজ নূরজাহান আত্মহত্যা করছে। আব্দুল গফফার নুরজাহানকে সব সময় মারধর সহ মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। এ বিষয়ে আমাদের কাছে নুরজাহান একাধিকবার অভিযোগ করলেও আমরা তাকে সান্তনা দিতাম এবং মানিয়ে নিয়ে সংসার করার জন্য পরামর্শ দিতাম। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আব্দুল গাফফারের নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে গিয়েছিল। এ বিষয়ে আমি প্যানেল চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছিলাম। অভিযোগ করায় আব্দুল গফফার আমার উপরও ক্ষিপ্ত ছিল।

অভিযুক্ত আব্দুল গফফারের বসত ঘরের সাথেই মুদি দোকান তার পাশ্ববর্তী একজন মুদি দোকানদার বলেন গত মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে আব্দুল গাফফার মেম্বার কৃষ্ণনগর বাজারের দিক থেকে আসে এবং মোকছেদ নামের এক ব্যক্তির সাথে আলাপচারিতায় যুক্ত হয়। ইতিমধ্য স্ত্রী নুরজাহান তাদের দোকানের মধ্য থেকে তার স্বামী মেম্বারকে উদ্দেশ্য করে বলেন বিচারটা ঠিক হয়নি এবং উভয়ই কথা কাটাকাটিতে লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে গফফার মেম্বর স্ত্রীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে জুতা ছুড়ে মারেন, স্ত্রীও পাল্টা ফ্যান ছুড়ে মারেন এবং দোকানের মধ্যে গফফার-নুরজাহান ধস্তাধস্তি শুরু করেন। তাদের দুই ছেলে আব্দুর রউফ ও আব্দুল গফুর ছুটে আসে এবং ছোট ছেলে আব্দুর রউফ তার বাবাকে আঘাত করে ছাড়িয়ে নেয়। তখন নূরজাহান পাশেই পড়েছিল। তারা ইতিপূর্বে অনেক বারই মারামারি করেছে এবং আব্দুল গফফার তার স্ত্রীকে বেদম প্রহারও করেছে বলে জানা গেছে।

অভিযুক্ত ইউপি সদস্যর বাড়িতে এবং মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুন রহমান বলেন, নূরজাহান শ্যামনগর হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। শ্যামনগর থানা পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।