সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভুল সিদ্ধান্তে যমুনা খাল খননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ
সাতক্ষীরার ঐতিহাসিক যমুনা খালের কালিগঞ্জ থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার খাল খননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
দয়সারা খননের জন্য বিশাল এলাকাকে মরুকরণের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে বলে ধারণা করছে সচেতন মহল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে যে প্রক্রিয়ায় খাল খনন করা হচ্ছে তাতে উপকারের পরিবর্তে কালীগঞ্জ ও শ্যামনগরের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে চরম ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে এমন আশঙ্কায় প্রতিবাদমূখর হয়ে উঠছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ও জনপ্রতিধিবৃন্দ। এলাকার সার্বিক কল্যাণের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে যাতে অতিদ্রুত প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সে ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বেলা ১২ টার দিকে সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী ও উপজলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাঈদ মেহেদী জানান, আদি যমুনা একটি ঐতিহ্যবাহী নদী। এই নদীর পানি ব্যাবহার করে হাজার হাজার বিঘা জমিতে কৃষি কাজে ব্যবহার করা হয়। ১৯৯০ সাল থেকে দখলদারদের কবল পড়ে আদি যমুনায় পানিপ্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয় যায়। বর্ষা মৌসুমে কয়েকটি ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশন বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং বহু মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হন।
তিনি আরো বলেন, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগরকে রক্ষা করতে এবং সুন্দরবনকে বাঁচাতে এই আদি যমুনা নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইছামতি নদীর মিষ্টি পানি এসে এলাকার কৃষিকাজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপকার করে। প্রায় কুড়িবছর আন্দোলনের পরে মাননীয় প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে ২০১০ সালে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে যমুনা নদী ৮০ ফুট প্রশস্ত করে খনন করা হয়। পরবর্তীতে একটি সার্ভে চক্র চক্রান্তের মাধ্যমে এখানে ব্রীজের অজুহাত দিয়ে ৬০ ফুট প্রশস্ত ও ৩০ ফুট গভীরতায় খননের জন্য প্রস্তাবনা তৈরী করেন। সেই অনুযায়ী পরবর্তীতে কার্যাদেশ পাওয়ার পর কিছুদিন পূর্বে ঠিকাদার খনন কাজ শুরু করেছে। এর ফলে যমুনা খাল এখন আরো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
যে উদ্দশ্যে যমুনা খনন করা হচ্ছিল সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন তা হবেই না, বরং আরও ক্ষতি হবে। এ ঘটনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় দুষ্টুচক্রের হাত আছ বলে আমি মনে করি। তিনি আরো বলেন, যমুনা খাল পুন:খনন সংক্রান্ত বিষয়ে আমি ইতামধ্যে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে অবগত করেছি। কিন্তু তারা এ পর্যন্তঘ টনাস্থলে আসেননি। অথচ এর মধ্যে ঠিকাদার অর্ধেক খনন কাজ সম্পন করে ফেলছে। এ কাজ বন্ধ রেখে পুনরায় এস্টিমেট তৈরী করে আদি যমুনার ৩২ কিলামিটার খনন করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
এ ব্যাপার মৌতলা ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদাউস মোড়ল জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ যমুনা খাল শ্যামনগর থেকে কালিগঞ্জ পর্যন্ত কাটানো হচ্ছে। সার্ভে করে এখন যেভাবে খাল কাটানা হচ্ছে তাতে স্থানীয় জনগণের কল্যাণে আসবে না। এই খালটা আগে প্রসস্ত ছিল ৮০ থেকে ১০০ ফুট। বর্তমান ৬০ ফুট প্রসস্ত করে খনন করা হচ্ছে, আর গভীর করা হচ্ছে ৩০ ফুটের মতো। বর্তমান যে ভাবে খালটা পুন:খনন করা হচ্ছে তাতে এলাকার মানুষ খুব ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বিশাল এলাকা মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাবে। প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যায়ের এই খনন কাজ সম্পূর্ণ টাকা অপচয় হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আদি যমুনা বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. জাফরুল্যাহ ইব্রাহিম বলেন, অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে যমুনা খাল এখন ড্রেন-নর্দমায় পরিণত হয়েছে। কয়েক বছর পূর্বে খালটি ১শ’ ফুটের বেশী প্রশস্ত ছিলা। ২০১০ সাল ৮০ ফুট প্রশস্ত করে পুন:খনন করা হয়। অজ্ঞাত কারণ সম্প্রতি ৬০ ফুট প্রশস্ত করে যেনতেন ভাবে খাল পুন:খনন করা হচ্ছে। এভাবে খনন করলে জনগণের কল্যাণ আসবে না বরং এতে অবৈধ দখলদাররা আরও সুবিধা পাবে। খালটি রক্ষা না করলে অদূর ভবিষ্যতে এটি বিলীণ হয়ে যাবে। আর যমুনায় পানিপ্রবাহ না থাকলে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ চরমভাব ক্ষতির সম্মুখীন হবে। সময়াউপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান।
খাল খননের নামে এখানে হরিলুট চলছে। ঠিকাদারের লোকজন ইচ্ছামতো কাজ করছে। খাল খনন করে যেভাবে খালপাড় মাটি ফেলা হচ্ছে তাতে খাল আরো ভরাট হয়ে এলাকার মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তারা এই খনন কাজ বন্ধ রেখে আবারও যথাযথ ভাবে খনন কাজ করার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছেন।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের ৫ নং পোল্ডারের সেকশন কর্মকর্তা তনয় হালদারের নিকট জানত চাইলে তিনি বলেন, ৩ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা ব্যায়ে কালিগঞ্জ স্লুইস গেইট থেকে যমুনা খালের ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত খনন কাজ চলছে। ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পেয়েছেন। সিডিউল অনুযায়ী ঠিকাদার কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
কালিগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজাহার আলী বলেন, খাল খনন সংক্রান্ত বিষয়ে আমাকে কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে কিছু জানায়নি। তাছাড়া এ বিষয়টি আমার এখতিয়ারভুক্ত নয় বলে জানান তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন