সাতক্ষীরার দেবহাটায় ৬ শিক্ষিত যুবকের প্রচেষ্টায় পতিত জমিতে কৃষি বিপ্লব

সাতক্ষীরার দেবহাটায় শিক্ষিত ৬ যুবকের প্রচেষ্ঠায় মৎস্য ঘেরের ভেড়িতে ফসলের বিপ্লব ঘটেছে। মাত্র ৪ মাসের ব্যবধানে ব্যাপক সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছে তারা। তাদের পরিশ্রমে এলাকাবাসীদের তাগ লাগিয়ে দেওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে।

চাকুরির পেছনে না ঘুরে স্ব উদ্যোগে কর্মসংস্থান তৈরি করায় প্রশংসায় ভাসছে ওই ৬ যুবক।

অবাক করার মত এ ঘটনাটি দেবহাটা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী ভাতশালা গ্রামের।

এ কাজের নেতৃত্ব দিয়েছেন মেডিকেল শিক্ষার্থী সুজন হোসেন নামের এক যুবক।

সুজনের সাথে আরো যোগ হয়েছে অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র আসলাম পারভেজ, ২য় বর্ষের ছাত্র আসিফ হোসেন, উচ্চ মাধ্যমিক পড়–য়া ইমন হোসেন, শাওন হোসেন এবং শিক্ষিক বেকার যুবক মহিদুল ইসলাম। শিক্ষিত এই যুবকদের ছিল না জমি, ছিল না মূলধন। অন্যদিকে ভাতশালার স্থানীয় সমাজসেবক আব্দুল জলিলের দেড় শত বিঘা জমির মৎস্যঘের রয়েছে। উক্ত ঘেরের প্রায় ৫০ বিঘা ভেঁড়িবাধ দিনের পর দিন ফেলে রাখা ছিল। তাই তাদের সাথে কথা বলে ওই ঘেরের ভেঁড়িতে সফল ফলনোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই মোতাবেক ফসল চাষ করে এখন তারা সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছে। এর পেছনে সার্বিক সহযোগীতা দিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। প্রয়োজনীয় বীজ ও সার সরবাহ করেছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফা মোস্তাক আহম্মেদের মাঠ পর্যায়ের পরামর্শে যুবকদের প্রচেষ্টায় বর্তমানে সেখানে ৭শতার্ধীক টমেটো, শিম, লাউ, কুমড়া, নতুন ফল স্কশ সহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়েছে মৎস্যঘেরে ভেড়িতে। ফেলানো প্রায় ৬ বিঘা মাছের ঘেরের ভেড়িতে প্রায় ৪/৫ লাখ টাকার সবজী উৎপাদন হবে। যা থেকে মোটা টাকা লাভের আশা দেখছেন ওই ৬ যুবক। আর তাই তাদের এই সফলতায় সম্মিলিত এই উদ্যোগের নামে দেওয়া হয়েছে “ ভাতশালা নবীন কৃষি সমবায়।”

উদ্যোক্তা সুজন হোসেন জানান, আমরা ৬ জন যুবক একটি ব্যবসার উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমরা প্রথমে মশলার ব্যবসা করব বলে ঠিক করি। তখন আমরা বিভিন্ন বাজার পরিদর্শন করে কাজ শুরু করি। কিন্তু পাশ্ববর্তী একটি মসলা মিল মালিক আমাদের ব্যবসা যাতে না সামনে এগুতে পারে সেজন্য তিনি বিভিন্ন বাজারে মসলার দাম কমিয়ে দিয়ে আমাদের ক্ষতির মুখে ফেলে। এতে আমরা অনেক ক্ষতিরমুখে পড়ি। কিছুদিন পরে কাঁচা সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা সিদ্ধান্ত করি যদি যে আমরা কিছু উৎপাদন করব। কিন্তু আমাদের তেমন কোন জমি ও মুলধন ছিল না। আমরা সবই শিক্ষিত হয়ে চাকুরি না করে তখন সিদ্ধান্ত নেই যে কৃষি ভিত্তিক কিছু করা যায় কি না। সেজন্য আমরা উপজেলা কৃষি অফিসে যাই। কৃষি অফিস থেকে আমরা অনুপ্রেরণা নিয়ে বাড়িতে ফিরি। পরে কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রয়োজনী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। কিন্তু আমাদের কোন জমি ছিল না। তাই স্থানীয় জলিল সাহেবের ছেলে অনিকাত আলমের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের উদ্যোগ দেখে খুশি হয়ে তার ঘেরের ভেড়িবাধে আমাদের চাষের অনুমতি প্রদান করে। সেই মোতাবেক সেখানে ফসল চাষে নেমে পড়ি আমরা।

আসলাম পারভেজ জানান, আমরা কয়জন মিলে চাকুরির পিছনে না ঘুরে নিজেরদের উদ্যোগে সম্মলিত একটি উদ্যোগে গ্রহণ করি। যেখানে আমাদের উৎপাদিত ফসল এলাকার চাহিদা মেটাতে পারে। সেই লক্ষে আমরা কৃষিতে মনোনিবেশ করি এবং কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় আমরা সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা প্রাথমিক চেষ্টায় সফলতা পেয়ে আগামীতে ওই ঘেরের পুরো ভেঁড়িবাধে জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে বিষমুক্ত সবজি চাষ করা হবে। তাছাড়া আগামী রমজান মাস উপলক্ষে সবজি ও খিরাই চাষ করা হবে। যা আমাদের এলাকার চাহিদা মেটাতে পারে এবং কোন সিন্ডিকেটের হাতে মানুষকে জিম্মি না হতে হয়। প্রয়োজনীয় সহযোগীতা পেলে আমরা এই চাষ আরো বিস্তার ঘটাতে পারব।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফা মোস্তাক আহম্মেদ জানান, ওই যুবকেরা কৃষি অফিসে এসে তাদের আগ্রহের কথা বলে। আমরা তাদেরকে সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করছি। তাদের এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত আছে। এমন উদ্যোক্তাদের জন্য আমাদের সেবা অব্যাহত থাকবে। তাদের এই চাষের পাশাপাশি কৃষি অফিস থেকে ৪ কেজি শরিষার বীজ প্রদান করা হয়েছে। অন্য ফসলের সাথে এটিও প্রাথমিক ভাবে তারা চাষ করছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরীফ মোহাম্মাদ তিতুমীর জানান, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষের উপযুক্ত জমি যাতে খালি পড়ে না থাকে সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় মাছের ঘেরের ভেড়িতে সবজি চাষ হচ্ছে। নতুন করে ভাতশালা এলাকায় ৬ যুবকের প্রচেষ্টায় অনাবাদি ভেড়িতে চাষের আওতায় এসেছে। তাদের উদ্যোগের কথা মাথায় রেখে সার্বিক সহযোগীতা প্রদানের মাধ্যমে প্রায় ৬ বিঘা মাছের ঘেরের ভেড়ি চাষ হচ্ছে। আগামীতে তাদের এই প্রচেষ্টা আরো বাড়বে সেই সাথে তাদের দেখে এলাকাবাসী উদ্বুদ্ধ হবে বলে আশা করি।