সাতক্ষীরার ৪টি আসনের ৩০ প্রার্থীর মধ্যে জামানত হারালেন ২৩ প্রার্থী
সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরার চারটি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বি ৩০ প্রার্থীর মধ্যে ২৩ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির তিন প্রার্থীসহ দুইজন বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যও রয়েছেন। যদিও তারা দুইজন (সাবেক ও বর্তমান সাংসদ) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কয়েকদিন পর নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দেন।
কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই রোববার (৭ জানুয়ারি) শান্তিপূর্ণভাবে জেলার চারটি অসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দিনভর ভোট কেন্দ্রের বাইরে কর্মীসমর্থকদের বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও ভোট কেন্দ্রের অভ্যন্তরে তেমন ভিড় চোখে পড়েনি, ছিলো বেশ ফাঁকা। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জেলার ভোট গ্রহণের হার ছিলো শতকরা ৪২ ভাগের মতো।
বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা জোটের বর্জনের মুখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরার চারটি সংসদীয় আসনে ১০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের ২২ জন এবং ৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ৩০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রার্থীদের মধ্যে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজে প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এবং অপর একজনকে দলের পক্ষ থেকে প্রেসবিজ্ঞপ্তি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয় হয়।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি ৩০ প্রার্থীর মধ্যে ২৩ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
এরা হলেন সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি মনোনীত হাতুড়ি প্রতীকের প্রার্থী মুস্তফা লুৎফুল্লাহ প্রাপ্ত ভোট ৪৩১, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকের প্রার্থী ইয়ারুল ইসলাম প্রাপ্ত ভোট ৮৩৫, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ছড়ি প্রতীকের প্রার্থী শেখ মো. আলমগীর প্রাপ্ত ভোট ২৩৫, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আশ প্রতীকের প্রার্থী সুমি ইসলাম প্রাপ্ত ভোট ৪৪২, স্বতন্ত্র দোলনা প্রতীকের এসএম মুজিবুর রহমান ওরফে সরদার মুজিব ১৫হাজার ৭০৮, স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের প্রার্থী মো. নুরুল ইসলাম ২০৮, স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী শেখ নুরুল ইসলাম ৫ হাজার ৯৪৮ এবং স্বতন্ত্র কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী শেখ মুজিবুর রহমান ৩৫৩ ভোট পেয়েছেন।
এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফিরোজ আহমেদ স্বপন ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯৯ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। তার নিকটতম প্রার্থী জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গলের প্রার্থী সৈয়দ দিদার বখত পেয়েছেন ২৬ হাজার ৮২১ ভোট।
তবে এই আসনে প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক এমপি স্বতন্ত্র কাচি প্রতীকের শেখ মুজিবুর রহমান পত্রিকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এবং অচিরেই সাবেক হতে যাওয়া বর্তমান এমপি মুস্তফা লুৎফুল্লাহর পক্ষে জেলা ওয়ার্কার্স পার্টি প্রেসবিজ্ঞপ্তি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
সাতক্ষীরা-২ আসনে ন্যাশনাল পিপিলস পার্টির (এনপিপি) আম প্রতীকের প্রার্থী মোঃ আনোয়ার হোসেন প্রাপ্ত ভোট ৯৩৮, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এর নোঙ্গর প্রতীকের প্রার্থী মো. কামরুজ্জামান বুলু ৭২৫ ভোট, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকের প্রার্থী মোস্তফা ফারহান মেহেদী ৩০৩ ভোট, স্বতন্ত্র কাচি প্রতীকের এনছান বাহার বুলবুল ৪৮০ ভোট এবং স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী মো. আফসার আলী পেয়েছেন ৭ হাজার ৭৯৪ ভোট। তবে প্রার্থীদের মধ্যে কাচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এনছান বাহার বুলবুল লাঙ্গলের পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচার অভিযানে অংশ নেন।
এই আসনে জাতীয় পাটি মনোনীত লাঙ্গলের প্রার্থী মোঃ আশরাফুজ্জামান ৮৮ হাজার ৩৫৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের মীর মোস্তাক আহমেদ রবি পেয়েছেন ২৭ হাজার ৪৪৭ ভোট।
সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি-দেবহাটা ও কালিগঞ্জের আংশিক) আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গলের প্রার্থী মো. আলিফ হোসেন প্রাপ্ত ভোট ১২ হাজার ৪৭৩, ন্যাশনাল পিপিলস পার্টি (এনপিপি) আম প্রতীকের প্রার্থী মো. আব্দুল হামিদ ৪ হাজার ১৮৩ ভোট, জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকের প্রার্থী মো. মঞ্জুর হোসেন ১ হাজার ৮৫৫ ভোট, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকের রুবেল হোসেন ৮৪৭ ভোট এবং বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) এর চাকা প্রতীকের প্রার্থী শেখ তরিকুল ইসলাম পেয়েছেন ৭৭৮ ভোট।
এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আ ফ ম রুহুল হক ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৭৩ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন।
সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-কালিগঞ্জের আংশিক) নির্বাচনী এলাকায় তৃণমূল বিএনপির সোনালী আশ প্রতীকের আসলাম আল মেহেদী প্রাপ্ত ভোট ৫০৯, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মো. মাহবুবর রহমান ৩ হাজার ৩৩৯ ভোট, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকের মো. শফিকুল ইসলাম প্রাপ্ত ভোট ১ হাজার ৩২, ন্যাশনাল পিপিলস পার্টি (এনপিপি) এর আম প্রতীকের প্রার্থী শেখ ইকরামুল ৪৯৩ এবং স্বতন্ত্র কাচি প্রতীকের মো. মিজানুর রহমান পেয়েছেন ৫৮২ ভোট।
এই আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের এসএম আতাউল হক ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এর নোঙ্গর প্রতীকের প্রার্থী এইচএম গোলাম রেজা পেয়েছেন ৩৮ হাজার ৮৮ ভোট।
সাতক্ষীরা জেলায় মোট ভোটার ১৭ লাখ ৪৬ হাজার ২২৪ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৮ লাখ ৬৯ হাজার ২২৮ জন ও পুরুষ ভোটার ৮ লাখ ৭৬ হাজার ৯৮৪ জন এবং ১২জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন