সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ জনপদে জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে কৃষি ও সবুজায়ন বৃদ্ধির বিকল্প নেই

সাতক্ষীরার বিনায় বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এর মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম কৃষকের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, কৃষককেই উৎপাদিত ধান থেকে বীজ সংরক্ষণ হবে।

এজন্য ভালো বীজ ও ভালো জাত সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। গুণগত মান সম্পন্ন বীজ কৃষকের সম্পদ। মনে রাখতে হবে হাইব্রিড বীজ রাখা যায় না। বাজারে কিনতে গেলেও এর দাম বেশি। তাই নিজের বীজ নিজে সংরক্ষণ করতে হবে।

বুধবার (১ মে) সাতক্ষীরায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিস্থিতিতে বিনা উদ্ভাবিত বোরো ধানের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ কৌশল বিষয়ক কৃষক প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) পরমাণু কৌশলের মাধ্যমে হাওর, চরাঞ্চল, লবণাক্ত জমিতে অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করে।

ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম আরও বলেন, দেশে ৩০টির মতো জেলা আছে লবণাক্ত। এর মধ্যে সাতক্ষীরায় লবণাক্ততার প্রকোপ খুবই বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিস্থিতিতে অভিযোজনের জন্য সকলকেই নিজ নিজ জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে।

প্রশিক্ষণে প্রকল্প পরিচালক ও বিনা ধান ২৫ এর উদ্ভাবক ড. সাকিনা খানমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ সাইফুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ, বিনা সাতক্ষীরা উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিলন কবীর প্রমুখ।

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়িদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে কোন কাজ হবে না। আজকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চলমান বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাংলাদেশের মানুষকে যেভাবে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে তাতে এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় দরকার কৃষির বিস্তৃতি। দরকার ব্যাপক সবুজায়ন।

এর জন্য একযোগে কৃষকের পাশে দাঁড়াতে হবে। কৃষিকে চুড়ান্ত সফলতার দিকে এগিয়ে নিতে হবে। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কৃষক আমিনুর রহমান তার অভিব্যাক্তিতে এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে জলবায়ু পরির্তনের পরিস্থিতি মোকাবেলা ও অভিযোজন বিষয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত কৃষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এসব কথা বলেন ওই কৃষক।

বিনা ধান ২৫ চাষের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন কালিগঞ্জের তাপস ঘোষ, দেবহাটার আব্দুল খালেক প্রমুখ।

দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিনা সাতক্ষীরা উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম। অতিথি’র বক্তব্য রাখেন বিসিসিটিএফ’র প্রকল্প পরিচালক ড. সাকিনা খানম, দেশ টিভির সাংবাদিক শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিলন কবীর, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সাংবাদিক আমিনা বিলকিস ময়না।

বিনা সাতক্ষীরা উপকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণে বলা হয়, ভালো ফসলের জন্য ভালো বীজ দরকার। একই সাথে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ। মাটির স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে ফসল ভালো হয় না। তাই জৈব সার ব্যবহারে মনোযোগী হতে হবে। উৎপাদিত ফলস থেকে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে। বিনা ধান ১০, বিনা ধান ২৫ উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকার জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। ইতোমধ্যে কৃষকরা বিনা উদ্ভাবিত নতুন নতুন জাত চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন।

প্রশিক্ষণে কৃষকদের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণের নানা কৌশল সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।