সাতক্ষীরায় নিজেকে বাঁচাতে পুলিশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রেড এ্যালার্ট জারি হওয়া আসামি
সম্প্রতি সাতক্ষীরার কুখ্যাত চোরাকারবারি ও বিএনপি নেতা শফিউল্লাহ মনিকে ধরার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ। এরপরই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সহযোগিতায় পুলিশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে আলোচিত শফিউল্লাহ মনি ওরফে গোল্ড মনি।
সে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও সদরের দক্ষিণ কাটিয়া গ্রামের শেখ মোশারফ হোসেনের পুত্র। তার বড় ভাই মাছুম বিল্লাহ শাহীন পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি। পুলিশের তথ্য বলছে মনির বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, চোরা চালান, ডাকাতি, দস্যুতা, চাঁদাবাজি, নাশকতা সহ মোট দশটি মামলা রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিএনপি সরকারের আমলে মনি তার ভাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে রমরমা বদলী বানিজ্য করত। এছাড়া তখন থেকে সে মাছ, চিনি, স্বর্ণ চোরাচালান করত। এমনকি সে শিশু পাচার করত বলে অনুসন্ধানে জানা যায় । আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শফিউল্লাহ মনি ওরফে গোল্ড মনি সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের এক সদস্যের সাথে আতাত করে জেলায় অস্ত্র, স্বর্ণ ও চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করে আসছে। আর মনির এই সকল অপকর্মের মাস্টার মাইন্ড সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক সংসদ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গাড়ী বহর হামলা মামলার প্রধান আসামী হাবিবুল ইসলাম হাবিব।
সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা গেছে সাতক্ষীরা শহরে কাটিয়া, নারকেলতলা, দাসপাড়া, ঋ-শিল্পি সহ শহরের বিভিন্ন এলাকা এবং ঢাকা শহরে বিপুল পরিমান সম্পত্তির মালিকানা বনেছেন এই চোরাকারবারি মনি। যেগুলো চোরাচালান মাদক ব্যবসা সহ অবৈধভাবেই বানিয়েছেন। শুধু সাতক্ষীরাতেই পৌরসভাধীন নারকেলতলার মোড়ে সাজিদ মটরস, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে সংগ্রাম মটরস, কালিগঞ্জের নলতায় বাজাজ মটরস এর শোরুম, বিনেরপোতা এলাকায় নির্মিত ১টি বিলাশ বহুল বাড়ী সহ নামে, বে-নামে লেটেস্ট মডেলের প্রাইভেট কার ও মালবাহী ট্রাকের মালিকানা রয়েছে তার।
সাংবাদিক, গোয়েন্দা সংস্থা সহ একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, শফিউল্লাহ মনি সিন্ডিকেটের আরেক এক সদস্য ডন খ্যাত আল ফেরদৌস আলফা। সে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য। সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান যোগদানের পর মাদকবিরোধী এক অভিযানে গত বছরের ২৬ নভেম্বর ফেনসিডিল সহ গ্রেপ্তার হয়। এরপর থেকে আলফা গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকায় দায়িত্ব বেড়ে যায় সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য শফিউল্লাহ মনির। তবে তিন মাস সিন্ডিকেটের দায়িত্ব পালনের পর নতুন করে পুলিশের সামনে আসে গোল্ড মনি। গত ৬ মার্চ রাত সাড়ে দশটার দিকে কলারোয়া থানার সাতক্ষীরা-যশোর হাইওয়ে রাস্তার ওপর পুলিশ চেকপোস্টে ডিউটি করছিল। সেদিন ইলিশপুর গ্রামের কোটার মোড়ে সাতক্ষীরা-যশোর হাইওয়ে পাঁকা রাস্তার ওপর ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল ডাকাত মনি। এমন সংবাদ পেয়ে পুলিশ সেখানে ছুটে যায়। ঘটনাস্থল ঘেরাও করলে ডাকাত দলের সদস্যদের মধ্যে শেখ শফিউল্লাহ মনি ওরফে গোল্ড মনি পুলিশের দিকে গুলি করতে থাকেন। এরপর সে সেখান থেকে পালিয়ে যায় বলে পুলিশ দাবি করেছে। পরে এ ঘটনায় গোল্ড মনির বিরুদ্ধে কলারোয়া থানায় ওই দিনই ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়।
এদিকে ডাকাতির প্রস্তুতির ঘটনাস্থল হতে আটক মনিরের সহযোগী বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দী প্রদান করেন। যেখানে তারা তাদের সর্দার হিসাবে গোল্ড মনিকে চিহ্নিত করে তার নাম ঠিকানা প্রকাশ করে। এর পর পুলিশ শফিউল্লাহ মনি ওরফে গোল্ড মনি কে গ্রেফতার করার জন্য দেশব্যাপি রেডএ্যালার্ট জারি করে। এছাড়া মনিকে গ্রেফতারের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেন।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, রেডএ্যালার্ট জারির পর থেকে গোল্ড মনির আশ্রয় নেন তার সকল অপকর্মের মাস্টার মাইন্ড সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক সংসদ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গাড়ী বহর হামলা মামলার প্রধান আসামী হাবিবুল ইসলাম হাবিবের ঢাকার বাসায়। সেখানে হাবিবুল ইসলাম হাবিবের স্ত্রী শাহনারা আক্তার বকুলের সহযোগিতায় বিএনপি’র সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানকে সাতক্ষীরা থেকে সরানোর জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করা হয়।
এই ষড়যন্ত্রের কারণ সম্পর্কে অনুসন্ধান করে জানা যায়, ১৪-১৫ সালে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসাবে কর্মরত ছিলেন বর্তমান পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান। সে সময় বিএনপি জামাতের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে বিরুদ্ধে তার দৃঢ় ভূমিকা ছিল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। এই নির্বাচনকে সাতক্ষীরায় বিএনপি ইতিমধ্যে নানা চক্রান্ত শুরু করেছে। যেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানের কারণে। এ কারণেই বিএনপি নেতাদের ওই বৈঠকে পুলিশ সুপারকে সরানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানকে সরাতে বৈঠকের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করেছে গোল্ডেন মনি। তারা ইতিমধ্যে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক স্বার্থ হাছিলের অপচেষ্টার কৌশলের অংশ হিসাবে পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে ও সংবাদ মাধ্যমে কে ব্যবহার করে প্রবাগান্ড ছড়াচ্ছে ।
এসব বিষয়ে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, একাধিক মামলার আসামি ও সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকা শফিউল্লাহ মনিকে গ্রেপ্তারের জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। বর্তমানে এসে পলাতক রয়েছে। পালিয়ে থেকেও সে সরকার বিরোধী বিভিন্ন কাজে লিপ্ত রয়েছে । ইতিমধ্যে সে পুলিশের বিরুদ্ধে নানান প্রবাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তাকে গ্রেপ্তার করার পর তাদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন