সাতক্ষীরায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ৪৮ টি অভিযানে জরিমানা ১৪ লাখ টাকা

সাতক্ষীরায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের প্রয়োগ দিন দিন বাড়ছে। প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে এ আইনে ৪৮টি অভিযান পরিচালনা করে ১২৮টি প্রতিষ্ঠানকে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওজনে ও পরিমাপে কম দেওয়া, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য পণ্য বিক্রয়, নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রয়, খাবারে বিষাক্ত বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার, মিথ্যা বা চাতুর্যপূর্ণ বিজ্ঞাপনে নিম্নমানের পণ্য বিক্রয় করা, বিএসটিআই’র অনুমোদনহীন পণ্য বিক্রয় করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে এ অর্থ জরিমানা করা হয়। তবে, জনসচেতনতার অভাবে ভোক্তারা এ আইনের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, ২০২০-২১ অর্থ বছরে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সাতক্ষীরায় ৪৮টি অভিযানে ১২৮টি প্রতিষ্ঠানকে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ জেলা থেকে ভোক্তা অধিকার-বিরোধী কাজের জন্য ১১ টি লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব অভিযোগের মধ্যে থেকে তদন্ত সাপেক্ষে একটি প্রমানিত হলে পঁাচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

বর্তমানে আরও একটি অভিযোগের তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া বাকি অভিযোগগুলোর মধ্যে পঁাচটি অভিযোগ উভয় পক্ষ নিজেদের মধ্যে মিমাংসা করে নিয়েছে। বাকি চারটির নাম ঠিকানা সঠিকভাবে খুজে না পাওয়ার কারণে বাতিল কারণে হয়েছে।

কোনো দোকানে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে পণ্য বা সেবা বিক্রয় করা ভোক্তা অধিকার-বিরোধী কাজ। শুধু এটিই নয়, খাবারে বিষাক্ত বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা নিষেধ। মিথ্যা বা চাতুর্যপূর্ণ বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাকে নিম্নমানের পণ্য কিনতে উদ্বুদ্ধ করা, দাম অনুযায়ী মান বা সেবা প্রদান না করা, ওজনে বা পরিমাপে কম দেওয়া বা এ সংক্রান্ত কোনো জালিয়াতি করা, নকল এবং মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য তৈরি বা বিক্রি করা ভোক্তা অধিকারে বিরোধী কাজ বা দণ্ডনীয় অপরাধ।

এমনকি সরকারি যেসব সেবা আপনাকে দেওয়া হয় যেমন যোগাযোগ, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পয়োনিষ্কাশন এসব নিয়েও আপনি অভিযোগ করতে পারবেন ভোক্তা অধিকার আইনে। খাবার দোকান, আবাসিক হোটেল বা স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সেবা নিয়েও অভিযোগ থাকলেও এ আইনে মামলা করার সুযোগ রয়েছে। একই আইনে এ সংক্রান্ত ভোক্তাবিরোধী কাজের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে সাজা এবং নগদ অর্থ জরিমানা করার সুযোগ রয়েছে।

প্রতারিত হওয়ার এক মাসের মধ্যে ভোক্তা অধিদপ্তরে বিনা মূল্যে লিখিত অভিযোগ করতে হবে। প্রাথমিক তদন্ত করবে ভোক্তা অধিদপ্তর এবং তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে করা হবে মামলা। অভিযোগ প্রমাণিত হলে যে পরিমাণ আর্থিক জরিমানা করা হবে, তার ২৫ শতাংশ অভিযোগকারী ভোক্তাকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হয়।

ধরুন, আপনি বাজারে পন্য ক্রয় করার জন্য গেলেন। এসময় বিক্রেতা পণ্য সরকারি নির্ধারিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। তাহলে আপনি সেই ক্রয় রসিদসহ ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারেন। কারণ, বেশি মূল্যে বিক্রি করা আপনার ভোক্তা অধিকারের লঙ্ঘন বা কোনো পণ্য কিনলেন। আবার পণ্য ক্রয়ের পর দেখা গেল সেটা ভেজাল বা নকল পণ্য, সে ক্ষেত্রেও আপনি অভিযোগ করতে পারেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা জেলার সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শিকদার শাহীনুর আলম বলেন, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইনটি ২০০৯ সালের হলেও এ আইনের বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। সে কারণে এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া যায় কম। এ বিষয়ে যত বেশি অভিযোগ পাওয়া যাবে আমরা তত বেশি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

তিনি আরও বলেন এ আইনে অভিযোগকারী দুই দিক থেকে লাভবান হয়। প্রথমত, ভোক্তা তার চাহিদা মাফিক সেবা পায়। দ্বিতীয়ত, অভিযোগ প্রমানিত হলে যে অর্থিক জরিমান করা হয়, তার ২৫ শতাংশ অভিযোগকারী ভোক্তাকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, এ আইন বাস্তবায়নের জন্য এখনো সকল জেলায় জেলা অফিস চালু করা সম্ভব হয়নি। খুলনা থেকে সাতক্ষীরা জেলার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সাতক্ষীরায় জেলা কার্যালয় চালু হলে এ আইনের প্রয়োগ আরও বাড়বে। সে সময় এ আইনের সুফল আরও বেশি পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।