সাতক্ষীরায় শুরু হলো অনলাইন পশুর হাট
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বন্ধ করতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুরু করা হয়েছে অনলাইন কোরবানি পশুর হাট। বিক্রেতাগণ উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ওয়েবসাইটে তাদের বিক্রয়যোগ্য পশুর ছবি, ভিডিও, বর্ণনা, দাম, মালিকের ঠিকানা, উক্ত ওয়েবসাইটে আপলোড করতে পারবেন। ক্রেতারা সাতক্ষীরা জেলা অথবা দেশের যে কোন জায়গা হতে অর্ডার করতে পারবেন। প্রচলিত বাজারে না যাওয়ার ফলে মানুষ একদিকে করোনা ভাইরাস হতে রক্ষা পাবে, অন্যদিকে সাতক্ষীরা জেলার কোরবানির পশু জেলার বাইরে বিক্রির সুযোগ তৈরি হবে।
এমনটি জানিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
করোনা ভাইরাসের কারণে বিপাকে পড়েছেন জেলার পশু খামারীরা। বিপাকে পড়া খামারীদের কথা চিন্তা করে বুধবার (৭ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পশুরহাট। তবে এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ও পশু বিক্রেতাদের অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। জেলায় লকডাউন ভঙ্গ করে পশুর হাট বসানো চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমনটি জানানো হয়েছে।
তবে ভিন্নকৌশলে সরকার ঘোষিত লকডাউন উপেক্ষা করে কোথাও কোথাও বসছে গরুর হাট। মঙ্গলবার (৬ জুলাই) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আবাদের বাজারে বিক্ষিপ্তভাবে এ হাট বসানোর অভিযোগ ওঠে বাজার কমিটি ও হাট ইজারাদারদের বিরুদ্ধে।
এদিকে গরু ব্যবসায়ীদের দাবি-পেটের টানে সরকার ঘোষিত লকডাউন অমান্য করতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ী ও খামারীরা। কারণ হিসেবে বলছেন, গতবছর অনলাইনে গরু কেনাবেচার সুবিধা ছিলো। এখন আমাদের বউ, বাচ্চার মুখে খাবার তুলে দেওয়াই এখন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আমরা বউ, বাচ্চার মুখে খাবার তুলে দিতে পারছিনা।
দেবহাটা উপজেলার কোমপুরের খামারি আসাদুজ্জামান বলেন, এবার কোরবানির আশায় ১৬টি গরু লালন-পালন করেছি। এখন করোনা নিয়ে খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি। তাছাড়া প্রতিদিন খামারে প্রায় কয়েক হাজার টাকা খরচ হয়। যদি ঈদে গরু বিক্রি না হয় তাহলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
একই উপজেলার খামারি দেবপ্রসাদ ঘোষ দেবু বলেন, গরু মোটাতাজাকরণ করে আতঙ্কে আছি। তিনি বলেন, আমরা যারা খামারি, তারা সারাবছর গরু মোটাতাজাকরণ করে কোরবানির ঈদের অপেক্ষায় থাকি। ৩-৪ লাখ টাকা বিক্রির আশায় গরু পালন করি। যদি সেগুলো কোরবানিতে বিক্রি না হয় তাহলে আমরা নি:স্ব হয়ে যাবো।
এদিকে খুলনা বিভাগের অন্যতম বৃহৎ পারুলিয়া গরুহাটের ইজারাদার জেলা পরিষদ সদস্য আলফেদৌস আলফা জানান, করোনায় কারণে গরুহাট বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতি হাটে আমার কয়েক লক্ষাধীক টাকা লোকসান হচ্ছে। প্রান্তিক কৃষক বা অসহায় নারীরা গরু পালন করে ঈদেরহাটে বিক্রি করে লাভবান হয়। কিন্তু করোনার কারণে প্রশাসন হাট বন্ধ করে রাখায় উভয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, জেলায় কোনপ্রকার গরুর হাট বসবেনা। তবে কোন জনপ্রতিনিধি, বাজার কর্তৃপক্ষ, হাট ইজারাদারসহ যেকোন রাজনৈতিক দলের নেতারা যদি হাট বসানোর চেষ্টা করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি গরু খামারীসহ ব্যবসায়ীদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বুধবার (৭ জুলাই) থেকে জেলা প্রশাসকের ব্যবস্থাপনায় ‘সাতক্ষীরা হাট’ নামে অনলাইন হাটে পশু ক্রয় বিক্রয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং তারা অনলাইনের মাধ্যমে গরু বিক্রয়ের নিবন্ধন করতে পারবেন। তাই আতঙ্কের কারণ নেই। হাট বন্ধ থাকলেও অনলাইনে এবার পশুর কেনাবেচার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে খামারিদের বাড়তি খরচ কমবে। অনলাইনে পশু কিনতে ফেসবুক পেইজে বিভিন্ন দামের পশুর বিবরণ দেওয়া আছে। পছন্দ মতো পশু কেনা বেঁচা করা যাবে। জেলার সাতটি উপজেলা প্রশাসন এবং প্রাণিসম্পদ অফিসের উদ্যোগে অনলাইনে কোরবানীর পশুর হাট শুরু হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন