সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব কমিটি পাল্টা কমিটির বারংবার সাংবাদিকদের সাথে প্রতারণা

সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের কমিটি পাল্টা কমিটির বারংবার সাংবাদিকদের সাথে প্রতারণা করার প্রতিবাদে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকাল ১১ টায় সাতক্ষীরা নিউ মার্কেট মোড়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাপ্তাহিক সূর্যের আলো পত্রিকার বার্তা সম্পাদক মোঃ মুনসুর রহমান।

তিনি বলেন, ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব কখনো পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন হয়ে উঠতে পারেনি। তবে প্রতিষ্ঠানটির একটি গঠনতন্ত্র রয়েছে, তা উপেক্ষা করেই বারবার কতিপয় সাংবাদিক মহল দখল করেছে। বানিয়েছে একই নামে কমিটি পাল্ট কমিটি।

ওই কমিটির নেতৃবৃন্দ তাদের পছন্দে কোনো কোনো ব্যক্তি’র কোনো পত্রিকা না থাকলেও সদস্যপদ দিয়ে প্রেসক্লাবে গ্রুপ সাংবাদিকতার বিচরণ ঘটিয়েছে, এমনকি অনেকের ধারাবাহিক কাগজপত্রাদি যাচাই-বাছাই করে সদস্যপদ দিয়ে কিছুদিন পরে স্থগিতও করেছে। সম্প্রতি উভয় গ্রুপ নতুন করে সদস্য ফরম বিতরণ করছেন।

এই কার্যক্রম স্থগিত রাখা এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

তিনি আরও বলেন, এই জনপদ কালের বিবর্তনে হারিয়েছে তার জৌলুস। মুছে গেছে অনেক কীর্তি। তবে জনমানুষের সামনে তুলে ধরতে ভুল করেনি সাংবাদিকরা। তাদের কোনো সংগঠন ছিলো না। সেই প্রয়াসে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব গঠিত হওয়ার পর থেকে তার কোন ধারাবাহিক কার্যক্রম ছিল না।

এমনকি সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক নাম-পরিচয় মুছে যেতে থাকে এবং পূর্বের ন্যায় প্রেসক্লাব কুক্ষিগত করে রাখার মানসে সভাপতি-সম্পাদক সাংবাদিকদের নতুন করে সদস্যপদ প্রদান করেনি। তাই সাংবাদিকরা নিজেদের ঐক্য ধরে রাখার মানসে উপজেলা ভিক্তিক পৃথক পৃথক সাংবাদিক সংগঠন গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন নামে ৮৫ এর অধিক ভিন্ন ভিন্ন নামে সাংবাদিক সংগঠন গড়ে তোলেন সাংবাদিকরা।

উক্ত সাংবাদিক সংগঠনগুলোর মধ্যে সাংবাদিক ছাড়াও সংগঠন সদস্য হয়ে বসে আছে অনেকে। এমনকি এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় কিনেছেন অখ্যাত পত্রিকা, অনলাইন পত্রিকা ও অনলাইন টিভির সাংবাদিক কার্ডও। তারা সাংবাদিক সেজে মোটরসাইকেলে ‘প্রেস’ ও ‘সাংবাদিক’ লিখে বোকা বানাচ্ছে বিভিন্ন মহলকে। অনেকে রীতিমতো মাদক সেবন এবং বহনের কাজও করছে।’ এই নাম ধারী সাংঘাতিকদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন প্রকৃত ও পেশাদার সাংবাদিকরা।

এছাড়াও মতৈক্য না হওয়ায় সংগঠন বিমুখ অধিকাংশ সাংবাদিক। এই সাংবাদিকরা সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব নামক সংগঠনের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সদস্যভুক্ত হলে তৈরি হতো একটি শক্তিশালী সাংবাদিক নেটওয়ার্ক। কমে যেতো অনেকাংশে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানিও।

সেমতে এই সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র সংশোধন করা সময়ের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা সংশোধনপূর্বক আগামীতে কোনো পাল্টাপাল্টি কমিটির নেতৃবৃন্দ যেন প্রেসক্লাবে সদস্য অন্তর্ভুক্তি’র নামে বারংবার সাংবাদিকদের সাথে প্রতারণা ও তাদের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলা না করতে পারে তার নিশ্চয়তা প্রদান, গঠনতন্ত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিধান যুক্ত করার পাশাপাশি কম শিক্ষিত অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের সদস্যপদ দেওয়া, ইতিপূর্বে জেলার স্থানীয় পত্রিকায় যারা পাঁচ বছরের অধিক সাংবাদিকতা করেছেন বা করছেন।

তবে এখন করছেন না এমন সাংবাদিকদের অভিজ্ঞতা সনদের ভিক্তিতে সহযোগী সদস্যপদে অন্তর্ভুক্ত এবং পত্রিকা বিলিবন্টনকারীদের জন্যই সাংবাদিকরা আজ সাংবাদিক। তাই উক্ত পত্রিকা বিলিবন্টকারীদের সহযোগী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার নিশ্চয়তা প্রদান।

একটি যৌক্তিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত প্রেসক্লাবের কমিটি পাল্টা কমিটির সদস্য ফরম বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত রাখা, সরকার নিবন্ধিত প্রত্যেক স্থানীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক বা অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক কর্তৃক নিয়োগকৃত সাংবাদিকদের মধ্য থেকে কমপক্ষে ১০জনকে অত্রক্লাবের সদস্যপদের নিশ্চয়তা প্রদান সর্বশেষ প্রেসক্লাবের নির্বাচিত কমিটির কাছে প্রত্যাশা করেন।

মোঃ মুনসুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত পত্রিকার পাশাপাশি বাইরেও জেলার প্রায় ১৩৫ এর অধিক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক, বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বা অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমের জেলা প্রতিনিধি/সংবাদদাতাসহ ৬৫০ জনের অধিক সাংবাদিক রয়েছে (স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ)।

এরমধ্যে অধিকাংশই সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সদস্যভুক্ত হতে পারেনি। তবে ২০২২ সালের ০১ জানুয়ারি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের (বাপী-সুজন) কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় ১৩ জনকে নতুন সদস্যর্ভুক্ত করতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং একই বছরের ২৩ জানুয়ারি তাদেরকে অবগত করতে প্রেসক্লাবের প্যাডে সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ আলী সুজন স্বাক্ষরিত চিঠি প্রেরণ করেন।

তবে ২২ মার্চ ২০২২ খ্রিঃ প্রেসক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভায় নতুন সদস্যর্ভুক্ত ১০ জনকে বাদ দিয়ে ওই কমিটির নেতৃবৃন্দ ১০০ সদস্যের নামীয় একটি খসড়া ভোটার তালিকা প্রস্তুত করে ২১ এপ্রিল ২০২২ ভোট গ্রহণের দিন ধার্য্য করেন। তিন সদস্য বিশিষ্ট সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব নির্বাচন ২০২২-২০২৩ কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচিত করেন আব্দুল গফুর সরদারকে, সদস্য নির্বাচিত করেন-মোঃ জাকির হোসেন লস্কর শেলী ও খন্দকার আনিসুর রহমানকে।

এই হঠকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে নিজেদের সম্মান ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে ওই সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব নির্বাচন ২০২২-২০২৩ কমিটির প্রধান কমিশনারকে বিবাদী করে সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন দৈনিক আমার সংবাদের সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী নাসির উদ্দীনসহ ১০ জন সাংবাদিক। মামলা নং-২০৩/২২। উক্ত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ২২ মার্চ ২০২২ স্বাক্ষরিত ভোটার লিস্ট এবং ০৯ এপ্রিল ২০২২ প্রকাশিত তফসিল অনুসারে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের ২০২২-২৩ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে নিষেধ করতে আদেশ প্রদান করেন সদর সিনিয়র সহকারী জজ মোঃ নাছিরউদ্দীন ফরাজী।

এই আদেশ না মেনেই নির্বাচন বর্হিভূতভাবে কমিটর নেতৃবৃন্দ প্রেসক্লাবে একক আধিপত্য বিস্তর করতে থাকে। পরবর্তীতে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের ভোটার তালিকায় ওই বাদ দেওয়া ১০ জন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচন পরিচালনা করার আদেশ প্রদান করেন আদালত। বিপরীতে মমতাজ আহমেদ বাপী জজকোর্টে আপীল করেন। ওই আপীল মামলায় এই ১০ জনের পক্ষে রায় হয়। এরপর মমতাজ আহমেদ বাপী মহামান্য হাইকোর্টে একটি পিটিশন দেয়।

সেই পিটিশন মোতাবেক এক বছর স্টে হয়। অতঃপর সময় অতিক্রম হয়ে যাওয়ায় নিয়ম মাফিক তা অকার্যকর হয়ে যায়। সেমতে ওই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় এখনো সর্বশেষ প্রেসক্লাবের নির্বাচিত কমিটি বহাল।

মোঃ মুনসুর রহমান আরও বলেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা মারফত জানা গেছে বিগত সময়ের সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী কুচক্রিদের পদের লোভে ২৪ আগস্ট-২৪ তারিখে এক বছর মেয়াদি পূর্ণাঙ্গ ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এনিয়ে সম্মানিত সাধারণ সদস্যদের ব্যাপক ক্ষোভ পরিলক্ষিত হয়।

পরবর্তীতে সাধারণ সদস্যদের সুখ-দু:খ দেখাসহ সাংবাদিকতার উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা প্রেসক্লাব সংগঠনের মুল কাজ হলেও তারা এসবের তোয়াক্কা না করে প্রেসক্লাব বিধ্বংসী কর্মকান্ডে মেতে উঠায় প্রেসক্লাবকে রক্ষা ও সদস্যদের সম্মান বজায় রাখার স্বার্থে ১৬ মে ২০২৫ তারিখে কতিপয় সাংবাদিক মহল সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নামে একটি কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করে, সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটির সভাপতির কাছ থেকে তারা দায়িত্ব গ্রহণও করেছে।

তবে কমিটিকে (কাশেম-আসাদ) ভূয়া বলে দাবি করেন জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত কমিটির নেতৃবৃন্দ। এই কমিটি শনিবার (১৭ মে ২০২৫) বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে একটি সভা করেন। ওই সভায় নেতৃবৃন্দ দাবি করেন-পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন আঙ্গিকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মমতাজ আহমেদ বাপী, হাবিবুর রহমান হাবিব ও মোহাম্মদ আলী সুজন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র লংঘন করে প্রেসক্লাবকে সাড়ে তিন বছর দখলে রেখে জেলাব্যাপী প্রেসক্লাবের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে।

তারা প্রেসক্লাবের দীর্ঘদিনের লালিত গণতন্ত্র চর্চাকে হত্যা করেছে। সেই থেকে রক্ষা করতে নতুন করে অত্র ক্লাবে সদস্যপদ গ্রহণ করতে সাংবাদিকদের কাছে দরখস্ত আহবান করেছেন বলে গুঞ্জন চাউর হয়েছে। অপরদিকে কাশেম-আসাদ কমিটির নেতৃবৃন্দও একই ভাবে প্রেসক্লাবে সদস্যপদ গ্রহণ করতে সাংবাদিকদের কাছে দরখস্ত আহবানের পাশাপাশি ফরম বিতরণ করছেন। এতে সাংবাদিকরা উভয় সংকটে, কে যাবেন কোন গ্রুপে তা নিয়ে দোলাচলে..?

মোঃ মুনসুর বলেন, সর্বসময়ে অত্রক্লাবের সদস্যরা সরকারি-বেসরকারি সকল পর্যায়ের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছে, জেলার বাকি সাংবাদিকরা বরাবরই বঞ্চিত। সম্প্রতি প্রেসক্লাবকে নিয়ে পূর্বের মতো সাংবাদিকদের মধ্যে একটি সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশংকা দেখা যাচ্ছে। যেকোনো সময়ে ঘটতে পারে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি।

তাই বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা বিভাগের ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, জেলা তথ্য অফিসারসহ সরকারের উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিরাজমান সমস্যা নিরসন হয় তার বিহীত ব্যবস্থা করতে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।