সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি

সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. শিহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুস সামাদ ১৪/১০/২০২৪ তারিখে জাতীঃ বিঃ/কঃ পঃ/কোড-০২০৩/৩৯৩৮ স্মারকে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. শিহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক এর বরাবর তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করেছেন।

তদন্ত রিপোর্টে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তের জন্য আমি ২৪/১০/২৪ তারিখে সিটি কলেজে গমন করি। কলেজের অধ্যক্ষ শিহাব উদ্দীন বিগত ৫/৮/২০২৪ তারিখ থেকে কলেজে অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনি কাউকে কোন অফিসিয়াল কাগজপত্র, হিসাব পত্র ও দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি। তাঁর অনুপস্থিতিতে কলেজের উপাধ্যক্ষ আলতাফ হোসেন কলেজের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তদন্তের লক্ষ্যে অধ্যক্ষকে বর্ণিত তারিখে কলেজে উপস্থিত হওয়ার জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়। তদন্তের দিন কলেজের উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষকের এ বিষয়ে লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করা হয়। বিগত ১৪/৯/২০২৪ তারিখ কলেজের গভর্নিং বডির সভায় উপাধ্যক্ষ আলতাফ হোসেনকে প্রশাসনিক দায়িত্ব¡ পালনের জন্য মৌখিকভাবে অনুরোধ করা হলে তিনি অসুস্থ জনিত কারণে অপারগতা প্রকাশ করেন। গভর্নিং বডির সভায় অধ্যক্ষ শিহাব উদ্দিনকে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাবেক অধ্যক্ষ শিহাব উদ্দিনকে অনুপস্থিতি জনিত বিষয়ে ৬/৯/২০২৪ ও ২৯/৯/২০২৪ পরপর দুটি কারণ দর্শানো পত্র প্রেরণ করা হয়। ২৯/৯/২০২৪ তারিখ তাকে অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটি কর্তৃক উত্থাপিত অর্থ আত্মসাৎ এর ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য আরো একটি কারণ দর্শানো হয়। কিন্তু তিনি জবাব দেননি এবং কোন যোগাযোগ করেননি। ৫/১০/২০২৪ তারিখ কলেজ গভর্নিং বডির সভায় মো. শিহাব উদ্দিনকে অধ্যক্ষ পদ হতে সাময়ীকভাবে বরখাস্ত করা হয়।

একই সভায় কলেজের শিক্ষকদের আবেদন এবং গভর্নিং বডির সভার মতামতের ভিত্তিতে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মনিরুজ্জামানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কলেজ শিক্ষক হাজিরা খাতা অনুযায়ী সাবেক অধ্যক্ষ মো. শিহাব উদ্দিন ৫/৮/ ২০২৪ তারিখ থেকে অদ্যাবধি অনুপস্থিত রয়েছেন। অধ্যক্ষ শিহাব উদ্দিনের বিভিন্ন অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার প্রভৃতি বিষয়ে বিভিন্ন শিক্ষক লিখিতভাবে বক্তব্য প্রদান করেছেন।

অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী সাবেক অধ্যক্ষ শিহাব উদ্দিন কলেজ তহবিলের প্রায় ৮৫ লক্ষ টাকা তছরুপ/ আত্মসাৎ করেছেন। ৫ আগস্ট ২০২৪ এর পর থেকে কলেজের সকল কার্যক্রমে সাবেক অধ্যক্ষ শিহাব উদ্দিন অনুপস্থিত রয়েছেন। কলেজের গভর্নিং বডি কর্তৃক শিহাব উদ্দিনকে প্রেরিত কারণ দর্শানো পত্রসমূহের কোন জবাব প্রদান করেননি কিংবা স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে কোন ব্যাখ্যা প্রদান করেননি।

সাবেক অধ্যক্ষ মো. শিহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে প্রতীয়মান হয় যে, তার অজ্ঞাত অনুপস্থিতির কারণে কলেজের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি কলেজ তহবিলের টাকা তছরুপ/ আত্মসাৎ করেছেন। অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত কার্যক্রম পরিচালনা করতেন এবং কলেজের সবাইকে চাপ ও ভীতির মধ্যে রাখতেন।

শিক্ষকদের মতামত এবং আলোচনায় দেখা যায় কলেজের সাথে যোগাযোগবিহীন অনুপস্থিতি শিহাব উদ্দিনের অনিয়ম ও দুর্নীতির বহিঃপ্রকাশ। অভিযোগের বিষয়ে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ শিহাব উদ্দিন জানান, গত ইং ০৫/০৮ /২০২৪ তারিখে থেকে আমি মেডিকেল ছুটিতে ছিলাম। এ বিষয়ে ছুটির সময়সীমা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছুটির সময়সীমা আমি আন্দাজে কিভাবে বলব, ওটা দেখে বলতে হবে।

অডিট কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী কলেজ তহবিলের প্রায় ৮৫ লক্ষ টাকা তছরুপ/আত্মসাৎ এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক আমার বিরুদ্ধে একতরফা রিপোর্ট প্রদান করেছেন। অর্থের বিষয়ে আমি হাইকোর্টে জবাব দেব। আমি কোন নোটিশ পাইনি, তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শকের সাথে আমার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয়েছিল।

গত- ইং- ০৫/১০/২০২৪ তারিখ কলেজ গভর্নিং বডির সভায় আপনাকে সাময়ীকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এবিষয়ে তিনি বলেন, আহ্বায়ক কমিটি বরখাস্ত করতে পারবেনা। ৫ তারিখের পরে দেশের কি অবস্থা সবাই ভালো জানেন, সেসময় জোর করে ধরে ধরে সই করে নিয়েছে। সেজন্য আমি আর কলেজে যাইনি। কলেজের অধিকাংশ শিক্ষকরা আপনার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটির নিকট লিখিত অভিযোগ প্রদান করা বিষয়ে তিনি বলেন, সব শিক্ষকরা তো এক মতাদর্শী হতে পারেনা, ওখানে ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শী রয়েছে বলে জানান তিনি।