সাত কারণে বিশ্বকাপে ফেবারিট ব্রাজিল
বিশ্বকাপ ফুটবল মৌসুম আসবে আর ফেবারিটের তালিকায় ব্রাজিল থাকবে না, সেটা সম্ভবত এখনও পর্যন্ত ঘটেনি। দেশটির মানুষের ফুটবলের প্রতি তুমুল ভালবাসা, আগ্রহ ও আকর্ষণ এবং ফুটবলে সাফল্য, বিশ্বকাপে অন্যতম ফেবারিটের আসনে বসিয়ে দেয় ব্রাজিলকে। তবে এবার ব্রাজিল রয়েছে ফেবারিটের তালিকায় বলতে গেলে শীর্ষে। যে দু’তিনটি দেশকে কোনোভাবেই বিশ্বকাপের ফেবারিটের তালিকা থেকে বাদ দেয়া যায় না, তাদের মধ্যে অন্যতম ব্রাজিল। এর একটাই কারণ, কোচ তিতে যেভাবে দলটিকে গড়ে তুলেছেন, তাতে বরং ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিততে না পারাটাই হবে আশ্চর্যজনক বিষয়।
তো তিতের এই ব্রাজিলকে কেন এবার এতটা ফেবারিট ধরা হচ্ছে? কি আছে এই দলটিতে? ব্রাজিলের শক্তির জায়গাটাই বা কি? কিংবা অন্যদের সঙ্গে তাদের মূল পার্থক্যটাই বা কোন কোন জায়গায়? আসুন জেনে নেয়া যাক এমন সাতটি বিষয়, যে গুলোর কারণে ব্রাজিলকে চোখ বন্ধ করে আপনি ফেবারিট বলে দিতে পারেন।
শক্তিশালী ডিফেন্স
তিতে তার ডিফেন্সকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলার দিকেই প্রথম নজর দিয়েছিলেন। তার প্রথম কাজই ছিল থিয়াগো সিলভার মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা। গত বিশ্বকাপে বিধ্বস্ত হওয়ার পর নতুন কোচ হয়ে আসা দুঙ্গা প্রথমেই থিয়াগো সিলভার কাছ থেকে নেতৃত্ব ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। তিতের এই উদ্যোগের ফলে থিয়াগো সিলভার নেতৃত্বে এখন সেন্টার হাফে মিরান্দা এবং মার্কুইনহোসকে নিয়ে পৃথিবীর সেরা এবং শক্তিশালী ডিফেন্স লাইন তৈরি করে ফেলেছে ব্রাজিল। এই ডিফেন্স ভাঙা যে কারও জন্য সত্যিই হবে খুব কঠিন।
থিয়াগো-মিরান্দা এবং মার্কুইনহোসের সামনে তিতে রেখেছেন কাসেমিরো এবং পওলিনহোকে। এ দু’জন যেমন ভারসাম্য তৈরি করতে পারছেন, তেমনি রক্ষণভাগকে তৈরি করে দিচ্ছেন দারুণ এক নিরাপত্তা। সেটা কেমন? তা পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। কারণ, এই ডিফেন্স লাইন এখনও পর্যন্ত ১৯ ম্যাচে মাত্র ৫টি গোল হজম করেছে এবং বিপরীতে দিয়েছে ৩৯টি গোল।
বিশ্বসেরা গোলরক্ষক
২০০২ বিশ্বকাপের পর সম্ভবত এই প্রথম একজন বিশ্বসেরা গোলরক্ষককে পেয়েছে ব্রাজিল। তিনি অ্যালিসন। ইতালিয়ান ক্লাব রোমা এবং জাতীয় দল ব্রাজিলের হয়ে যে তিনি কতটা নির্ভরশীল গোলরক্ষক- সেটা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছেন। যে কারণে, এখন থেকেই অ্যালিসনের দিকে নজর দিতে শুরু করেছে স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ। অ্যালিসনের ব্যাকআপ হিসেবে রয়েছেন অ্যাডারসন। যাকেও ভাবা হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক হিসেবে।
প্রায় প্রতিটি খেলোয়াড়ই রয়েছেন ফর্মে
কোচ তিতে তার নিয়মিত লাইনআপ তৈরি করছেন ফর্মে থাকা ফুটবলারদের নিয়ে। ব্রাজিল ফুটবলাররাও জানেন, যদি তারা ভালো পারফরম্যান্স করতে পারেন, তাহলে তিতের দলে পরের সুযোগটা পাবেন। পারফরম্যান্সে কোনো ঘাটতি থাকলেই পড়ে যাবেন বাতিলের খাতায়। গত আট বছরের এই উদাহরণটা তৈরি হচ্ছিল না ব্রাজিল দলে। এবার যেটা করতে পেরেছেন তিতে। ২০১০ বিশ্বকাপে সর্বশেষ এই উদাহরণ তৈরি করতে পেরেছিলেন দুঙ্গা। তিনি তার দলে ঠাঁই দেননি মার্সেলোকে।
নেইমার নির্ভরতা আর নেই
নেইমার হচ্ছেন ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় তারকা ফুটবলার। তিনিই দলের নেতা। তবে বর্তমান ব্রাজিল দলটিতে তিনিই একমাত্র বিশ্বসেরা ফুটবলার নন। দলটিতে রয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন বিশ্বসেরা ফুটবলার। যেমন কৌতিনহো, উইলিয়ান, ডগলাস কস্তা, গ্যাব্রিয়েল জেসুসরা এখন নেইমারকে ছাড়াও জেতাতে পারেন দলকে।
নাম্বার নাইন, যিনি হয়ে ওঠেন দলের ত্রাতা
ব্রাজিলের হাতে রয়েছেন একজন বিশ্বসেরা সেন্টার ফরোয়ার্ড। গোলের সামনে যার ওপর আস্থা রাখতে পারেন তিতে থেকে শুরু করে পুরো ব্রাজিল। এই একজন মানুষের অভাবেই গত কয়েকটি বছর ভুগতে হয়েছে ব্রাজিলকে। ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সেন্টার ফরোর্ড ছিলেন লুই ফ্যাবিয়ানো। তিনি হয়তো শক্তিশালী একজন ফুটবলার ছিলেন; কিন্তু সেরা নন। পরের বিশ্বকাপে (২০১৪) ব্রাজিলের সেন্টার ফরোয়ার্ড ছিলেন ফ্রেড। যাকে খোদ ব্রাজিল সমর্থকরা ধুয়ো ধ্বনি দিয়ে ধুয়ে দিয়েছিল। কারণ, পোস্টের সামনে বল পেলেও তিনি সেটা জালে জড়াতে ব্যর্থ হতেন। এবার সেই অভাব কাটিয়ে দিয়েছেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। খুবই তরুণ এক ফুটবলার; কিন্তু ব্রাজিলের হয়ে ইতিমধ্যেই ১৫ ম্যাচে করেছেন ৯ গোল।
নতুন অর্জিত আত্মবিশ্বাস
দুঙ্গার কাছ থেকে দায়িত্ব নিয়ে তিতে ব্রাজিলকে যেভাবে গড়ে তুলেছেন, সেটাই বিস্ময়কর। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে টানা সাফল্য, সবার আগে বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করা এবং বাছাই পর্বের পর প্রায় প্রতিটি প্রীতি ম্যাচেই দারুণ সাফল্য ব্রাজিলের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। সর্বশেষ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিপক্ষে নেইমারকে ছাড়াও ১-০ গোলে জয় নিশ্চিতভাবেই বিশ্বকাপের আগে ব্রাজিলের আত্মবিশ্বাসে নতুন জালানি যোগ করে দিয়েছে। গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে পরাজয় যেন বহু আগে দেখা একটি দুঃস্বপ্নের মতই। যা কদাচিৎ মনে পড়ে।
বিতর্কহীন একজন কোচ
সর্বশেষ ব্রাজিলের যেটা সবচেয়ে বড় শক্তি, সেটা হচ্ছে সম্পূর্ণ বিতর্কহীন একজন কোচ পাওয়া। তিনি তিতে। তার পূর্বসূরী দুইজনের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্রের তিতে। দুঙ্গা কিংবা স্কলারির চেয়ে খেলোয়াড় এবং মিডিয়ার সঙ্গে তিতের সম্পর্ক অনেক বেশি ভালো। এ কারণেই খেলোয়াড়রা সত্যি সত্যিই বিশ্বকাপের জন্য এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। ব্রাজিল দলের খেলোয়াড়রা অন্য কিছু না হোক, অন্তত কোচের সম্মান রক্ষার্থেই মাঠে জান-প্রাণ দিয়ে লড়াই করতে প্রস্তুত।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন