সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধে গণভোগান্তি চরমে
পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ সারা দেশের গণপরিবহন। ছেড়ে যাচ্ছে না কোনো দূরপাল্লার বাস। সেইসঙ্গে চলছে না কোনো আন্তঃপরিবহন। সারাদেশে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ছিল পরিবহন শ্রমিক নেতাকর্মীদের অবস্থান। এদিকে পরিবহন সঙ্কটে বেড়েছে জনদুর্ভোগ। উল্টো বাড়তি ভাড়ায় গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
শুক্রবার সকাল থেকে সরেজমিনে চট্টগ্রামজুড়ে দেখা যায়, নগরের ষোলশহর, দুই নম্বর গেট, কাজীর দেউড়ি, লালখান বাজার, জিইসি মোড় ও বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পরিবহন শ্রমিকদের অবস্থান।
এছাড়া নগরীর প্রতিটি মোড়ে দেখা গেছে গাড়ির জন্য অপেক্ষমায় থাকা যাত্রীদের ভিড়। নগরীর জিইসি, ওয়াসা, লালখান বাজার, টাইগার পাস, আগ্রাবাদ, নিউমার্কেট, আন্দরকিল্লা, বহদ্দার হাট, জামালখান, চকবাজার, মুরাদপুর প্রায় জায়গায় অপেক্ষমান যাত্রী দেখা গেছে। আবার অনেকে জানেন না যে, আজকে ধর্মঘট।
নগরীর আগ্রাবাদ মোড়ে অপেক্ষমান জুনায়েদ নামের এক যাত্রী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আজকে যে পরিবহন ধর্মঘট, তা জানা ছিল না। বাসা থেকে রাস্তায় এসে দেখি কোনো গণপরিবহন নেই। তাই বাধ্য হয়ে তিন ডাবল ভাড়া দিয়ে রিকশায় করে যাচ্ছি।
নগরের ষোলশহর এলাকার বাসিন্দা মো. রুবেল বলেন, আগ্রাবাদ যাওয়ার জন্য ১০ বাসের জন্য অপেক্ষা করছি, কিন্তু কোনো বাস পাচ্ছি না। বাসের আশায় দাঁড়িয়ে আছি আধা ঘণ্টা ধরে। বাস আসলে যাত্রী উঠাতে বাধা দিচ্ছে শ্রমিক নেতারা। ছোট ছোট লেগুনাতে নিচ্ছে ডাবল ভাড়া। রিকশা চালকরা দাবি করছে দ্বিগুণ ভাড়া। মনে হচ্ছে পায়ে হেঁটে যেতে হবে।
নগরীর দামপাড়া এলাকার ইউনিক, শ্যামলী, সৌদিয়া, এস আলমসহ বিভিন্ন দূরপাল্লার বাস কাউন্টারে খবর নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ৬টি বাস যাওয়ার কথা থাকলেও সবগুলো বাতিল করা হয়েছে। পরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও দিয়েছে বাস কর্তৃপক্ষ। এদিকে কাউন্টারগুলো থেকে কোনো তথ্য না জানানোর কারণে বিপাকে পড়েছেন দূরপাল্লার যাত্রীরা। সেইসঙ্গে বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ দূরপাল্লার বাস কাউন্টার।
এদিকে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কর্মবিরতির মধ্যেও নগরজুড়ে চলছে ‘সোনার বাংলা’ ও ‘মেট্রো প্রভাতী’। গুটিকয়েক লোকাল বাস চলতে দেখা গেছে। তবে অভিযোগ রয়েছে বাড়তি ভাড়া আদায়ের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি মোহাম্মদ বেলায়েত বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরে ‘সোনার বাংলা’ ও ‘মেট্রো প্রভাতী’ সার্ভিস দেবে। মানুষের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে আমরা এ সুযোগ রেখেছি। তবে সরকারের কাছ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। তবে আমরা আগেও বলেছি, কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে লোকাল বাস বের করে চালাতে চায় এ ব্যাপারে আমাদের সাংগঠনিক কোনো বাধা নেই।
জানা যায়, গত বুধবার ডিজেল এবং কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ৬৫ টাকা থেকে এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়। পরেরদিন বৃহস্পতিবার এলপিজির দাম কেজিতে সাড়ে ৪টাকা হারে বাড়িয়ে ১০৬ টাকা ১৯ পয়সা করা হয়। বাড়ানো হয় পরিবহনে ব্যবহৃত অটোগ্যাসের দামও। চলতি নভেম্বর মাসের জন্য প্রতি লিটার অটোগ্যাসের দাম ৫৮ দশমিক ৬৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬১ দশমিক ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা না করে হঠাৎ ডিজেল এবং কেরোসিনের দাম বাড়ানোয় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম বাড়ায় দেশের বাজারে দাম বাড়ানো হয়েছে- সরকারের এই দাবি যৌক্তিক নয় বলেও মনে করছেন তারা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন