সার্টিফিকেট আনতে গিয়ে লাশ মিমি, কাঁদছে অবুঝ শিশু মিমির মেয়ে
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2023/03/1_20230319_193940_0000-900x450.png)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইউ) কৃষি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আফসানা মিমি (২৫)। পড়াশোনা শেষ তাই ময়মনসিংহ যাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট আনতে। তার ইচ্ছা ছিল বিসিএস ক্যাডার হয়ে পরিবারের হাল ধরবেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা কেড়ে নিল মিমির প্রাণ। এদিকে মা ফিরে আসবে বলে পথ চেয়ে বসে আছে নিহত মিমির এক বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে।
রোববার (১৯ মার্চ) ভোরে গোপালগঞ্জের পুলিশ লাইন থেকে বাকি আরও অনেকের সঙ্গে ঢাকায় যাওয়ার জন্য ইমাদ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন আফসানা মিমি। পথিমধ্যে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় বাসটি পৌঁছালে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ৫০ ফুট নিচে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হন মিমি। তিনি গোপালগঞ্জ শহরের ব্যাংকপাড়া এলাকার হিরাবাড়ি রোডের মৃত আবু হেনা মোস্তফা নীল সর্দারের মেয়ে।
আফসানার বাবা আবু হেনা মোস্তফা কামাল বিআইডাবলুটিসির কর্মকর্তা ছিলেন। প্রায় ২০ বছর আগে তিনি মারা যান। এরপর আফসানার মা কানিজ ফাতমা একা হাতে ২ মেয়েকে বড় করেছেন। শত কষ্টের মধ্যেও তিনি দুই মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে নিচ্ছিলেন। আফসানার বোন রূপা গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
মিমির মা কানিজ ফাতেমা আক্ষেপ করে বলেন, সার্টিফিকেট আনতে যাওয়ার আগের দিন (শনিবার) আমার জন্য এক মাসের ওষুধ কিনে দিয়ে গেছে। আমি এখন এই ওষুধ দিয়ে কী করবো? আমি আমার মেয়েকে ফেরত চাই।
নিহত মিমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বশেমুরবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন। কৃষি বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। মিমির এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না তার পরিবারের কেউ।
মিমির চাচাতো ভাই অ্যাডভোকেট এস আর রহমান জানান, মিমি পরিবারের বড় মেয়ে। তার ইচ্ছা ছিল বিসিএস পরীক্ষা দেবে তাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট আনতে সকালে গোপালগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্য রওনা হয়। ময়মনসিংহের যাওয়ার জন্য গোপালগঞ্জ থেকে সরাসরি কোনো গাড়ি না থাকায় ঢাকার একটি বাসে ওঠে।
তিনি আরও বলেন, মিমির মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। আমাদের কাছে হস্তান্তর করলে মরদেহ নিয়ে আমরা বাড়ি ফিরব। মেয়েটি সার্টিফিকেট আনতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরল।
দুর্ঘটনায় আফসানাসহ গোপালগঞ্জের অন্তত ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে গোপালগঞ্জজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহত অপর ব্যক্তিরা হলেন- গোপালগঞ্জের পাচুড়িয়া এলাকার সামচুল হক রোডের মাসুদ আলমের মেয়ে সুরভী আলম সুইটি (২২), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক অনাদী রঞ্জন মজুমদার (৫৩), বাসের সুপার ভাইজার মানিকদাহ গ্রামের মিজানুর রহমান বিশ্বাসের ছেলে মিনহাজুর রহমান বিশ্বাস (২৫), সদর উপজেলার বনগ্রামের সামসুদ্দিন শেখের ছেলে মোস্তাক শেখ (৪০) ও মুকসুদপুরের আদমপুর গ্রামের আনজু খানের ছেলে মাসুদ খান (৩০)।
ইমাদ পরিবহন ম্যানেজার মো. বাসু শেখ জানান, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী বাসটিতে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন কাউন্টার থেকে ১৪ জন যাত্রী উঠেন। তাদের মধ্যে কত জনের মৃত্যু হয়েছে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। শিবচরে বাসটি পৌঁছালে হঠাৎ বাসের বামপাশের চাকা পাংচার হয়ে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে খাদে পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন