সালমান মুক্তি পেয়েই ফিরলেন মুম্বাইয়ে
যোধপুরের সেন্ট্রাল কারাগারে টানা ৪৮ ঘণ্টা কাটানোর পর শনিবার সন্ধ্যায় ছাড়া পেলেন বলিউড তারকা সালমন খান। কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় ভাইজানের পরনে ছিল কালো টি-শার্ট ও কালো টুপি। সেখান থেকে সোজা যোধপুর বিমানবন্দরে যান। নিজস্ব চার্টার বিমানে মুম্বাইয়ে ফেরেন তিনি।
সালমান কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় বাইরে তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন দেহরক্ষী শেরা। সালমনের বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলেন তাঁর দুই বোন অলভিরা ও অর্পিতা। তাঁদের সঙ্গে মুম্বইয়ের উদ্দেশে রওনা হন ভাইজান।
এদিকে বলিউডের এই মহাতারকার মুক্তির পর উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন ভক্তরা। কারাগারের সামনে বাজি ও পটকা ফুটিয়ে আনন্দ করেন সাল্লুর ভক্তরা। সালমানের জামিন পেয়ে মুক্তির খবরে স্বস্তিতে বলিউডও। কারণ, সালমনের পেছনে এ মুহূর্তে লগ্নির পরিমাণ ৪০০ থেকে ৬০০ কোটি রুপি। তার কারবাস দীর্ঘ হলে অনেক ছবিই আটকে যেত।
এর আগে সালমান খানের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন যোধপুর সেশন কোর্টের বিচারক রবীন্দ্র কুমার যোশি। ৫০ হাজার রুপির ব্যক্তিগত বন্ডে তিনি বলিউড তারকাকে জামিন দেন। সাজা দেওয়া হয়েছিল পাঁচ বছরে। ৪৮ ঘণ্টা কারাগারে কাটিয়েই জামিন পান সালমান খান।
শিগগিরই এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন তাঁর আইনজীবীরা। গত বৃহস্পতিবার আদালত থেকে তাঁর পাঁচ বছরের সাজা ঘোষণার পরই আদালত থেকে তাঁকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় যোধপুর সেন্ট্রাল জেলে।
শনিবার মধ্যাহ্নভোজের পর এজলাসে এসে যখন বিচারক রবীন্দ্র কুমার যোশি বসেন, তখন ঘড়িতে বেলা দুইটা। আবার শুরু হয় সালমান খান আর বিষ্ণোই সমাজের আইনজীবীদের উত্তপ্ত শুনানি। আজ স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই চলছে এ অবস্থা। মাঝে ছিল বিরতি। একপর্যায়ে সালমান খানের আইনজীবীরা এই বলিউড তারকাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য কাকুতিমিনতি করেন। তাঁদের ধারণা, বিচারকের বদলি হওয়ায় জামিন মঞ্জুর বিলম্বিত হতে পারে। অপেক্ষা করতে হবে অন্তত আরও দুই দিন। আর এই সময়টা কারাগারে থাকতে হবে সালমান খানকে।
শুরুতে রবীন্দ্র কুমার যোশি বলেন, মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর তিনি বেলা দুইটায় সিদ্ধান্ত জানাবেন। কিন্তু শুনানি শেষ না হওয়ায় সিদ্ধান্ত জানানো থেকে বিরত থাকেন। শুনানি শেষে তিনি বলেন, বেলা তিনটার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন।
এদিকে আদালতে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় সালমান খানের জামিন আবেদনের শুনানি শুরু হয়। কিন্তু গতকাল শুক্রবার এই মামলার সংশ্লিষ্ট বিচারক রবীন্দ্র কুমার যোশি হঠাৎ বদলি হওয়ায় অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তখন জানা যায়, পরবর্তী বিচারকের দায়িত্ব বুঝে না নেওয়া পর্যন্ত সালমান খানের জামিন আবেদনের কোনো সুরাহা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আগের দিনের ঘোষণা অনুযায়ী সকালে এজলাসে বসেন বিচারক রবীন্দ্র কুমার যোশি। তাঁকে ৫১ পাতার জামিন আবেদনের নথি পড়ে শোনানো হয়। এরপর শুনানিতে অংশ নেন দুই পক্ষের আইনজীবীরা। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন সালমান খানের দুই বোন আলভিরা ও অর্পিতা আর দেহরক্ষী শেরা। গতকাল যোধপুর সেশন কোর্টে সালমান খানের জামিনের আবেদন করা হয়।
এদিকে সালমান খানের মুক্তির জন্য মন্দিরে পূজা দিয়েছেন তাঁর ধাই মা রুক্ষাণী বাই। তাঁর হাতেই ইন্দোর নার্সিং হোমে ১৯৬৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর জন্ম হয়েছিল সালমান খানের।
এরই মধ্যে যোধপুর সেন্ট্রাল জেলে পরপর দুই রাত থেকেছেন সালমান খান। সেখানে কুলার খাটিয়া ও চারটি কম্বল দেওয়া হয় তাঁকে। সালমান খান উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগছেন। গতকাল শুক্রবার রাতে তাঁর রক্তচাপ বেড়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পর রক্তচাপ কমানোর জন্য আদালতে সালমানকে ওষুধ খেতে দেখা যায়। কারাগারে ঢোকার পর থেকেই তাঁর শরীর খারাপ হতে শুরু করে। রাতে রুটি, ছোলার ডাল কিংবা বাঁধাকপির তরকারি দেওয়া হলেও কিছুই খাননি সালমান। গতকাল সকালেও চা, ডালিয়া কিংবা খিচুড়ি খাননি। আজ সকাল সাড়ে ছয়টায় শুধু চা আর গ্লুকোজ বিস্কুট খান তিনি। এরপর দুধের জন্য আবেদন করেন।
আগেই জানানো হয়েছে, সালমান খানকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভারতের রাজস্থান রাজ্যের যোধপুরের একটি আদালত। পাশাপাশি তাঁকে ১০ হাজার রুপি জরিমানা করা হয়েছে। তাঁকে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের ৫১ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ২০ বছর আগের কৃষ্ণসার হরিণ শিকার মামলার রায় হয় গত বৃহস্পতিবার সকালে। এই মামলায় অন্য তিন অভিযুক্ত সাইফ আলী খান, টাবু ও সোনালি বেন্দ্রেকে আদালত বেকসুর খালাস দিয়েছেন।
বলিউডে সালমান খানকে বলা হয় ‘হিট মেশিন’। বৃহস্পতিবার সকালে রাজস্থানের যোধপুর আদালতে সেই সালমান খানকে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড দেওয়ায় থমকে যায় বলিউড। অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন অনেক চিত্র প্রযোজক। কারণ, এরই মধ্যে এক হাজার কোটি রুপির বেশি লগ্নি করা হয়েছে এই নায়ককে ঘিরে।
এদিকে রায় হওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে সালমান খানের আইনজীবী এইচ এম সারস্বত দাবি করেন, সরকারি কৌঁসুলি অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেননি। মামলা সাজাতে ভুয়া সাক্ষী দাঁড় করিয়েছেন। এমনকি বন্দুকের গুলিতেই যে কৃষ্ণসার দুটির মৃত্যু হয়েছিল, তা-ও সরকারি কৌঁসুলি প্রমাণ করতে পারেননি। গত ২৮ মার্চ নিম্ন আদালতে কৃষ্ণসার মামলার চূড়ান্ত পর্যায়ের শুনানি শেষ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের দাবি, ১৯৯৮ সালের ১ ও ২ অক্টোবর যোধপুরে ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ ছবির শুটিংয়ের মাঝে আলাদা আলাদা জায়গায় দুটি কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা করেন সালমান খান। ওই সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সাইফ আলী খান, নীলম, টাবু ও সোনালি বেন্দ্রে।
রাজস্থানের যোধপুরের কঙ্কানি এলাকায় গ্রামের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বিষ্ণোইর অধিবাসীদের অভিযোগ, গুলির শব্দ শুনে তাঁরা সালমানের জিপসি গাড়িটি ধাওয়া করেন। কিন্তু তাঁদের ধরা যায়নি। ওই সময় চালকের আসনে ছিলেন সালমান খান। গ্রামবাসীর দাবি, প্রবল গতিতে গাড়ি ছুটিয়ে সালমান খান আর তাঁর সঙ্গীরা পালিয়ে যান।
বেআইনিভাবে জঙ্গলে ঢোকার অভিযোগে সালমান খান আর অন্য তিন তারকার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৯ নম্বর ধারায় মামলা এখনো চলছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন