সিজার নিখোঁজের এক মাসেও কোনো কূলকিনারা পায়নি পুলিশ
নিখোঁজের এক মাস হলেও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক মোবাশ্বের হাসান সিজারের এখনো কোন খোঁজ পায়নি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা বলছেন, সিজারকে উদ্ধারে কোনো প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয় নি, তবে তারা সিজারকে উদ্ধারে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
সিজারের পরিবার জানিয়েছে, গণমাধ্যমকর্মীরা মাঝে মধ্যে খোঁজ খবর রাখলেও পুলিশ খুব একটা খবর নেয় না।
বুধবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের খিলগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) নাদিয়া জুঁইয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন: এখনো তার অবস্থান সম্পর্কে আমরা খোঁজ পাইনি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা তাকে উদ্ধারে সাধ্যমতো কাজ করছে।
নিখোঁজের আগের সময় গুলোতে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন সিজার। সে জন্য বাসার সামনে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাও স্থাপন করেছিলেন তিনি। কিছু দিন আগে তার বাসায় একজন অপরিচিত ব্যক্তি এসে তার খোঁজ করেছিলেন বলে সিজারের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
গত ৩১ অক্টোবর সিজার তার ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন; এক-দুইবছর ধরে তিনি বেনামি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে বিরক্তিকর বার্তা পেয়ে আসছেন।
সিজার নিখোঁজের এক মাসে তাকে উদ্ধারের অগ্রগতি জানতে চাইলে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন: সিজার উদ্ধারে সকল প্রকার তদন্ত কার্যক্রম চলছে, তবে প্রণিধানযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয় নি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য মতে, নিখোঁজের দিন ৭ নভেম্বর পৌনে সাতটা থেকে সিজারের ফোন বন্ধ, সন্ধ্যা ৬ টা ৪১ মিনিটে তার ফোনে সর্বশেষ কল এসেছিল, তখন তিনি বেগম রোকেয়া সরনির লায়ন্স ভবনের দিকে ছিলেন।
সিজার নিখোঁজের এক মাসে র্যাবের পক্ষ থেকে কী ভূমিকা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে র্যাব-৩ পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো: এমরানুল হাসান বলেন: এখনো সিজারের খোঁজ পাওয়া যায় নি, আমরা দিন কয়েক আগেও সিজারের বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, আমরা যেকোন ‘ক্লু’ পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।
বুধবার সকালে মুঠোফোনে সিজারের বাবা মোতাহের হোসেন বলেন, একমাস হলেও কেউ আমার ছেলেকে উদ্ধার করতে পারে নি, ইদানিং পুলিশ তেমন খোঁজও নেয় না, মাঝে মাঝে গণমাধ্যমকর্মীরা ফোনে খোঁজ নেয় আর ছেলেকে ফিরে পাবার আশ্বাস দেয়।
এদিকে তরুণ শিক্ষক ও গবেষক মোবাশ্বার হাসান সিজারের নিখোঁজের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব রয়েছে নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করা, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিচারহীনতার এ সংস্কৃতি চলতে পারে না।
এ ধরণের ঘৃণ্য অপরাধ বন্ধে রাষ্ট্রের শক্তিশালী ভূমিকা দাবি করে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক বলেন: একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের মাধ্যমে নিখোঁজ, গুম এসব ঘটনার স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য সংরক্ষণ ইউনিট জানায় বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে গত আড়াই মাসে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার দশ ব্যক্তি নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে, যারা বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর আর ফিরে আসেন নি।
এরমধ্যে ২০০৭ থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৫৪৫ জনের নিখোঁজ বা অপহরণের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ৭৮ জনের লাশ পরে উদ্ধার করা হয় এবং নিখোঁজের পর বাড়ি ফিরে এসেছে মাত্র ৫১ জন।চ্যানেল আই অনলাইন
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন