সিনহার নিয়োগ ছিল রাজনৈতিক বিবেচনায় : কামরুল
বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আওয়ামী লীগের আগের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। আর একই বিবেচনায় তিনি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হন।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সাত বিচারপতি সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া রায়ের প্রেক্ষিতে সরকারে দলে ওঠা তীব্র সমালোচনার প্রেক্ষিতে খাদ্যমন্ত্রী শনিবার এই কথা বলেছেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জাতীয় শোক দিবস, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ও জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের রাজনীতি শীর্ষক’ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি তার ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ে অন্যান্য অনেক বিষয়ের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচারপতি নিয়োগ না দেয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক বিবেচনামুক্ত যত নিয়োগ হবে, বিচার বিভাগের জন্য তত ভালো হবে।
কামরুল বলেন, ‘আজকে তিনি বিচারপতি নিয়োগে আইন হওয়া উচিত বলে যে মন্তব্য করেছেন তার মনে রাখা উচিত যে রাজনৈতিক বিবেচনাই তাকে ১৯৯৯ সালে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।’
‘রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে প্রধান বিচারপতি যে সমস্ত কথা বলেন তাহলে তার মনে রাখা দরকার যে তিনিও রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। রাজনৈতিক মতাদর্শী চিন্তাধারায় তিনি নিয়োগ পেয়েছিলেন। বিএনপি বা এরশাদ যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল তাকে কিন্তু তখন নিয়োগ দেয়নি।’
সিনহার আগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এবং নৃগোষ্ঠী থেকে কেউ প্রধান বিচারপতি হননি জানিয়ে কামরুল বলেন, ‘নৃগোষ্ঠী থেকে একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া প্রধামন্ত্রীর এক ধরনের উদার মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আমরা তাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলাম। তারপরও তিনি যে সমস্ত কথাগুলা বলেছেন, তাতে আমাদের ভয় হয়। আমরা তাকে জানি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মূল্যবোধ তিনি লালন করেন। এটা লালন করে বলেই তাকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করি।’
‘কিন্তু তিনি প্রকাশ্য আদালতে বলেছিলেন তিনি শান্তি কমিটির সদস্য। কেন বলেছিলেন তা আমরা জানি না।’
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। ক্ষমতার তৃতীয় বছরে ১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অস্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আর আওয়ামী লীগ প্রায় আট বছর পর ক্ষমতায় ফেরার কয়েক মাসের মধ্যে ২০০৯ সালের ১৬ জুলাই আপিল বিভাগে নিয়োগ পান তিনি।
২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা আছে।
এ কথা উল্লেখ করে কামরুল বলেন, ‘আরও পাঁচ মাসের মত সময় তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে আছেন। দুষ্ট লোকেরা বলে তিনি একটি গ্রুপের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি এক এগারোর কুশীলবদের হয়ে কাজ করছেন।’
ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননার অভিযোগ এনে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। এ কথায় যারা বিশ্বাস করে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না।’
‘প্রধান বিচারপতি এখন স্বাধীনতাবিরোধীদের সুরেই কথা বলছেন। যিনি মুক্তিযুদ্ধ লালন করেন ও বিশ্বাস করেন তিনি কীভাবে স্বাধীনতাবিরোধীদের সুরে কথা বলতে পারেন। এক এগারোর কুশীলবদের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করছেন প্রধান বিচারপতি।’
পর্যবেক্ষণের কড়া সমালোচনা করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমার খুব ভয় হচ্ছে। আমি ভরসা পাচ্ছি না। পচাঁত্তরের পরবর্তী সময়ের মত আরেকটি বড় আঘাত আসতে পারে।…গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, উন্নয়নের বিরুদ্ধে বড় আঘাত আসতে পারে বলে আমার সন্দেহ হচ্ছে। এটার একটা বিহিত হওয়া উচিত।’
কামরুল বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে জিয়ার মত সিনহাও একই রূপ ধারণ করছেন। পঁচাত্তরের পর জিয়া যেমন ঘাতকদের সঙ্গে সম্পর্ক করেছিল আজকে ওনি (প্রধান বিচারপতি) তেমনটা করছেন। এজন্য আমার ভয় হয়।’
‘ষোড়শ সংশোধনী রায় বিশ্বেষণ করলে আমার মনে হয় ভবিষ্যতে আমাদের আরও কিছু দেখতে হতে পারে। আমি ভরসা পাচ্ছি না। …আবার ছোবল মারবে কিনা তা নিয়ে আমার ভয় হয়। খুব খারাপ সময় পার করছি সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
রায়ের পর্যবেক্ষণে সংসদকে অকার্যকর বলার সমালোচনা করে কামরুল বলেন, ‘যে সংসদকে তিনি অকার্যকর বলেছেন সেই সংসদের প্রধানমন্ত্রীর আমলেই তিনি ২০১৫ সালে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।’
বিএনপি কেন প্রধান বিচারপতির পক্ষে দাঁড়িয়েছে সে প্রশ্নও তোলেন কামরুল। বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় আমাদের পক্ষে দিয়েছেন। …একাত্তরে ঘাতকদের বিচারের রায় যেভাবে তিনি দিয়েছেন তাতে তো বিএনপি জায়ামায়াত এই প্রধান বিচারপতির কুশপুত্তলিকা দাহ করার কথা ছিল। এই প্রধান বিচারপতিকে তো তাদের কোন অবস্থাতেই সমর্থন করার কথা না। তার পাশে দাঁড়ানোর কথা না। অথচ আজকে তারাই তার চরমবন্ধু।’
‘এ ছাড়া বিশেষ কিছু মামলার শুনানিকালে বিশেষ করে মীর কাসেম আলীর মামলার শুনানি কালে আদালতে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেছেন। যা কখনো বলা উচিত না। কিন্তু রায় আবার পক্ষে এসেছে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন