সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শিক্ষক মাসুদের মৃত্যু: মৃত্যু সম্পর্কে পুলিশের কাছে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য!

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাসুদ রানা নামে এক শিক্ষকের মৃত্যুকে নির্বাচনী সহিংসতা দাবী করে ১৩ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, ভিকটিমের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী বা স্থানীয়রা ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদনেও মরদেহে মারধরের চিহ্ন নেই। তবে চিকিৎসক জানান, তিনি দির্ঘদিন যাবৎ হ্নদরোগে আক্রান্ত ছিলেন।

গত বুধবার (৫ জুন) রাত সাড়ে নয়টার দিকে কামারখন্দ উপজেলার রায় দৌলতপুর ইউনিয়নের বলরামপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মাসুদ রানা (৪৬) রায়দৌলতপুর দক্ষিণপাড়া মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে। মাসুদ শ্যালবরিষা বিইউকে উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিতের সহকারি শিক্ষক ছিলেন। একই ঘটনায় মারধরের শিকার হন দৈনিক সময়ের খবর পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম প্রিন্স ও কামারখন্দ উপজেলা প্রতিনিধি শিশির আকন্দ। তারা দু’জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ী সজীব বলেন, কামারখন্দ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চশমা প্রতীকের পরাজিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সেলিম রেজার সমর্থক ছিলেন শিক্ষক মাসুদ রানা। অন্যদিকে রায় দৌলতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের স্বজনরা তালা প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হাফিজুর রহমানের সমর্থক ছিলেন।

৫ জুন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর বুধবার রাত ১১টার দিকে শিক্ষক মাসুদ ও তার সহকর্মী শিশিরকে নিয়ে দু’জন মোটর সাইকেলে ফিরছিলেন। বলরামপুর বাজারে এসে তারা দুজনই অপি জুয়েলার্সে বসে নির্বাচনের সর্বশেষ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন।

এ সময় তালা সমর্থকের রায় দৌলতপুর দক্ষিণপাড়া প্রামানিক গোষ্ঠীর বাবু, আরিফ, আমিরুল, আরাফাত, জিন্নাহ, রাব্বানীসহ ৭/৮ জন যুবক পরিকল্পিত ভাবে বাজারে এসে অবস্থান নেন এবং জুয়েলার্সের দোকান থেকে শিক্ষক মাসুদ, শিশির ও প্রিন্সকে দোকান থেকে ডেকে রাস্তার উপর নিয়ে এসেই শিশিরের উপর অতর্কিত হামলা চালায়।

এ সময় তাদের বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও প্রিন্সকে মারধরে করেন তারা, তবে মাসুদ মাষ্টারকে কেউ মারধর করেনি। স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যান। তখন অনেক উচ্চশ্বরে চিৎকার করে ডাকা ডাকি করেন মাসুদ মাষ্টার। কিছুক্ষণ পরই বাইপাস সার্জারি করা শিক্ষক মাসুদ রিপনের কোলে ঢলে পড়েন। স্থানীয়রা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রায়দৌলতপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান বলেন, ‘মাসুদ রানা হার্টের রোগী ছিলেন। বাইপাস সার্জারি থাকা সত্ত্বেও তিনি দিনভর ভোটকেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ করেছেন। রাতে বাড়ি ফেরার পথে বলরামপুর বাজারে তাহের মেম্বারসহ স্থানীয়দের সামনে স্ট্রোক করে মারা গেছেন শুনেছি। আমার ভাই আব্দুস সামাদ সরকারী দলের সমর্থক হলেও আমার দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। মাসুদ রানার ঘটনা নিয়ে আমাদের রাজনৈতিকভাবে হেয় করার অপচেষ্টা চলছে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু তাহের বলেন, ঐ দিন আসলে মাসুদ মাষ্টারের সাথে কোন ঘটনাই ছিল না। অন্যের ঘটনা নিয়ে ডাকাডাকি করার কারনে তিনি অসুস্থ হয়ে পরেন। আমরা ঘটনা স্থল থেকেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তবে বাদির মামলায় লৎফর রহমানের নাম উল্লেখ করা ঠিক হয়নি। কারন সেই সময় লুৎফর রহমান বা তার ছেলে কেউ ছিল না। তবে তিনি বাইপাস সার্জারী করা ছিলেন।

সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, ঐ দিন রাতে মাসুদ মাষ্টারকে হাসপাতালে আনার পথেই তিনি মারা গেছেন। তিনি হ্নদরোগে আক্রান্ত ছিলেন, বাইপাস সার্জারী করা। রাতে মাংস রুটি খেয়ে ছিলেন বলে জানাতে পারি। তবে তার শরিরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাইনি।

কামারখন্দ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল বলেন, ‘প্রতিপক্ষের লোকজনের আঘাতে শিক্ষক মাসুদ রানা নিহত হয়েছেন বলে মামলায় উল্লেখ করেছেন। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নাজমা খাতুন বাদী হয়ে কামারখন্দ থানায় মামলার অভিযোগ দায়ের করেছেন।’ তবে এটি হত্যা নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু ময়নাত দন্তের রিপোর্ট আসলেই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।

পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, ভিকটিমের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী বা স্থানীয়রা পুলিশের কাছে ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদনেও মরদেহে মারধরের চিহ্ন নেই। পুলিশ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সে জন্যই অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে সময় নিচ্ছে পুলিশ।