সিরাজগঞ্জের তাড়াশে শিক্ষকতা না করেও নিয়মিত বেতন তোলেন ইউপি চেয়ারম্যান জ্ঞানেন্দ্র
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্ঞানেন্দ্র নাথ বসাক ২০০৪ সাল থেকে স্থানীয় গুড়পিপুল উচ্চ বিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষক হিসেবে বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে তিনি কোনদিন ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানে অংশ নেয়নি।
এমনকি বিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র-ছাত্রী তাকে শিক্ষক হিসেবে একদিনও শ্রেণিকক্ষে পায়নি। বিশেষ করে তাকে শিক্ষক হিসেবে চেনেন না এমনটি জানিয়েছেন উক্ত বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণির সকল ছাত্র-ছাত্রী।
ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগ নিয়মানুযায়ী সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জ্ঞানেন্দ্র নাথ বসাকের প্রতিদিন ৬টি করে পাঠদান দেওয়ার কথা। কিন্তু তিনি পুরোদমে ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছেন। এতে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ালেখায় শতভাগ পিছিয়ে পড়ছে।
এদিকে গুড়পিপুল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক জ্ঞানেন্দ্র নাথ বসাককে আমি মৌখিকভাবে বারংবার শর্তক করেছি নিয়মিত বিদ্যালয়ে এসে পাঠদান করার জন্য। কিন্তু তিন দীর্ঘ সময়ে তা আমলে নেয়নি। বরং প্রতিমাসে একদিন কিছু সময়ের জন্য বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতায় পুরো এক মাসের স্বাক্ষর করে চলে যান। এটা মহা দুর্নীতির সামিল।
ক্লাস না করেও প্রতিমাসে বেতন ভাতা উত্তোলন করেন। তার মামা ধীরেন্দ্র নাথ বসাক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। আমি তার কাছে এ অনিয়মের প্রতিকার চেয়েছি। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছরে কোন সমাধান মেলেনি।
অপরদিকে গুড়পিপুল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতারা লাবনী, রোখসানা খাতুন, সুসমিতা বালা বলেন, আমরা ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে শুরু করে এখন ৯ম শ্রেণিতে পড়ছি। এই কয়েক বছরে আমাদের সমাজ বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক জ্ঞানেন্দ্র নাথ বসাক একদিনও পাঠদান করায়নি।
মূলত: শিক্ষক হিসেবে আমরা তাকে চিনিওনা। সর্বপরি ঐ বিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীর অভিযোগ সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের পাঠদান বন্ধ থাকায় আমাদের পড়ালেখায় সীমাহীন ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষায় আমাদের অকৃতকার্য হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।
সরেজমিনে গুড়পিপুল উচ্চ বিদ্যালয়ে দেখা যায়, সমাজ বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক জ্ঞানেন্দ্র নাথ বসাক বিদ্যালয়ে উপস্থিত নাই। চলতি মাসের শিক্ষক হাজিরা খাতায় তার স্বাক্ষর নাই।
দেশিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গুড়পিপুল উচ্চ বিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিকক জ্ঞানেন্দ্র নাথ বসাক বলেন, আমি ২০০৪ সাল থেকে শিক্ষগতা পেশায় যোগদান করেছি। ১০ থেকে ১২ বছর আগে কিছু পাঠদান করেছি। আমার বেতন-ভাতাও হয়েছে।
ইতোমধ্যে আমার মামাতো বোন গীতা রাণীকে বিকল্প শিক্ষক হিসেবে দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি খুব বেশিদিন দায়িত্ব পালন করেননি। তবে আমি চেষ্টা করছি অন্য আরেকজনকে বিকল্প শিক্ষক হিসেবে দেওয়ার।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিকল্প শিক্ষকের বেতনের টাকা শিক্ষক জ্ঞানেন্দ্র নাথ বসাক নিজেই পকেটে ভরেন। এ কারণে আগের বিকল্প শিক্ষক কিছুদিন পাঠদান করে চলে গেছেন। গুড়পিপুল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, এখন নতুন কারিকুলামে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করাতে হয়।
এক শিক্ষকের পাঠদান অন্য শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব নয়।
তাড়াশ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, দেশীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্ঞানেন্দ্র নাথ বসাক আদৌ শিক্ষগতা পেশায় আছেন কী না তা জেনে বলতে হবে।
এ প্রসঙ্গে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আফছার আলী বলেন, আপনি আমার জেলা অফিসে আসেন। এ নিয়ে স্বাক্ষাতে কথা বলব।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন