সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে উৎপাদিত দুধ সারাদেশে
দেশের দুগ্ধশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরসহ বাঘাবাড়ী মিল্কশেড এরিয়ায় দিনে উৎপন্ন ও সংগৃহিত চার থেকে সাড়ে চার লাখ লিটার গরুর টাটকা দুধ দেশের দুধের চাহিদা মেটাচ্ছে। এ চার, সাড়ে চার লাখ লিটার গো-খামারীদের বাথান ও গোহাল থেকে প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেড, মধ্যস্বত্বভোগী ও ঘোষ সম্প্রদায়ের মাধ্যমে বাঘাবাড়ীস্থ মিল্কভিটা কারখানা, প্রান, এমোমিল্ক, আফতাব,আড়ং, টাটকা, আকিজসহ বিভিন্ন বেসরকারি ডেইরি প্রজেক্টের কুলিং সেন্টারে সরবরাহ করা হচ্ছে। সরবরাহকৃত ওই বিপুল পরিমান দুধ মিল্কভিটাসহ অন্যন্য বেসরকারি ডেইরি প্রজেক্টের কুলিং সেন্টার ও কারখানায় প্রক্রিয়াজাত ও শীতলীকরণের মাধ্যমে ঢাকাসহ সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে যা দেশে দুধের চহিদা পূরণ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শাহজাদপুর উপজেলায় গবাদীপশুর মোট সংখ্যা ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭শ’৮৫ টি। এর মধ্যে দেশী জাতের গরু সংখ্যা ৮৪ হাজার ৩শ’ ৭৬ টি। সংকর জাতের গরুর সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার ১শ’ ২০টি। বেসরকারী দুগ্ধ খামার ৩ হাজার ৬ শ’৫০ টি।
রেজিষ্ট্রিকৃত খামারের সংখ্যা ২ হাজার ৫ শ’ ৮৮ টি। দেশী বক্না গরুর সংখ্যা ১৩ হাজার ৬ শ ৯২ টি, দেশী এঁড়ে বাছুরের সংখ্যা ২৮ হাজার ৩ শ’২০টি, বক্না বাছুরের সংখ্যা ১৯ হাজার ৫ শ’ ৩৬ টি। সংকর জাতের বকনার সংখ্যা ১৪ হাজার ২শ’টি, সংকর জাতের বকনা বাছুরের সংখ্যা ২৫ হাজার ৪ শ’ ৭৫ টি। এই বিপুল সংখ্যক গাভী থেকে বর্তমানে মিল্কভিটার বাঘাবাড়ীস্থ কারখানসহ অন্যান্য বেসরকারী দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কারাখানায় প্রতিদিন সকাল ও বিকাল এ দুই বেলায় চার থেকে সাড়ে চার লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ অঞ্চলের গো -সম্পদের ওপর ভিত্তি করে বাঘাবাড়ীতে গড়ে ওঠে মিল্কভিটার বিশাল কারখানা। বর্তমানে মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বেও বিভিন্ন দেশের ষাঁড়ের সঙ্গে স্থানীয় জাতের গাভীর প্রজননের মাধ্যমে উন্নতজাতের সংকরজাতের গাভীর জন্ম দেওয়া হয়। শাহজাদপুরে বর্তমানে অষ্ট্রেলিয়ান, শাহীওয়াল, জার্সি, ফ্রিজিয়ান, এফ এস ও সিন্ধিসহ বিভিন্নজাতের সংকর গাভী রয়েছে। শাহজাদপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশী দুধ উৎপাদিত হয় জনবিচ্ছিন্ন বিস্তৃর্ণ বাথান ও পোতাজিয়া, রেশমবাড়ী, আঙ্গারু, টেপরি, পুরান টেপরি, বাড়াবিল, রুপবাটি, রাউতারা,পোরজনা, পুঠিয়া, ডায়া, নগরডালা, কাকুরিয়া, কাদাইবাদলা, চিথুলিয়া, কাশিনাথপুর, বনগ্রাম, সরিষাকোল, মশিপুর, নুকালী, শেলাচাপড়ী, চরাচিথুলিয়া, ভাইমারা, টিয়ারবন্দ, বহলবাড়ী, আহম্মদপুর, বিন্নাদায়ের, মাদলা,শাকতোলা, বিলকলমীসহ এলাকার বিভিন্ন বসতবাড়ী ও গো-খামারে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এসব এলাকায় সবচেয়ে বেশী দুধ উৎপাদিত হয়ে থাকে। হাজার হাজার ক্যানে করে ভ্যান ও ট্রলিযোগে দুধ পৌছে দেওয়া হয় বাঘাবাড়ীর মিল্কভিটা কারখানাসহ বিভিন্ন এলাকায়। গবাদীপশু সমৃদ্ধ শাহজাদপুরে ছিটিয়ে আছে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষাধিক গো-সম্পদ।
অনেকে শখে, অনেকে পারিবারিক দুধের চাহিদা মেটাতে আবার অনেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উন্নতজাতের গাভী লালন পালন করছেন।
উৎপাদিত দুধের সিংহভাগ উপজেলার বাঘাবাড়ীস্থ মিল্কভিটা কারখানার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। মিল্কভিটার বাইরে প্রান, এমোমিল্ক, আফতাব, আড়ং, টাটকা, আকিজসহ বিভিন্ন ডেইরি প্রজেক্টেও মাধ্যমে শাহজাদপুর থেকে দুধ সংগ্রহ করে শীতলীকরণ করে সারাদেশে সরবরাহের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন বসতবাড়ী ও বাথানো গোখামারে বিভিন্ন ধরনের উন্নতজাতের জাতের গাভী রয়েছে। তন্মদ্ধে উল্লেখযোগ হচ্ছে কোরিয়ান, অষ্ট্রেলিয়া, শাহীওয়াল, ফিজিয়ানসহ দেশী জাতের গাভী।
খামারীরা জানান, একটি অষ্ট্রেলিয়ান গাভী ১৫ থেকে ২৫লিটার দুধ দেয়।সেইসাথে ১২-১৫ টি বাছুর জন্ম দিতে পারে।একটি ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী ১২-২৩ লিটার দুধ দেয়। অন্যান্য জাতের গাভীও আশাব্যঞ্জক দুধ দিয়ে থাকে।গো-চাষীরা প্রাথমিকভাবে দুধ সংগ্রহ করে সেই দুধ তারা মিল্কভিটার আওতাভূক্ত দুধ সমিতিসহ বিভিন্ন বেসরকারী দুগ্ধ প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে। এখানে উন্নতজাতের গাভী থেকে দুধ প্রক্রিয়াকরনের মাধ্যমে তরলদুধ, গুঁড়োদুধ, ঘি, মাখন, কনডেন্সড্ মিল্ক ও আইসক্রিম তৈরি করে পরিবেশকের মাধ্যমে সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে যা দেশের দুধের চাহিদা পূরণ করছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন