সিরাজগঞ্জে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যু, তবে ঘটনার কিনারা খুঁজছেন পুলিশ

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর এলাকার ১নম্বর ওয়ার্ডের সুবর্ণসাড়া গ্রামে গত ১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা। এতে মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এলাকাবসী খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, শব্দের উৎস ঐ গ্রামের শ্রমিক লীগ নেতা মোতালেব সরকারের বাড়িতে। এ নিয়ে গত পাঁচদিন যাবৎ চলছে নানা গুনজন। বিস্ফরণের মূল কারণ জানা গেলো শনিবার সকালে। সেই দিনের বিস্ফরণে আহত হন দুইজন। তাদের একজন ফজলুল হক ফজলু ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় ঐ দিন দুপুরে শ্রমীকলীগ নেতার বাসায় বোমা তৈরির সময় হঠাৎ বিস্ফরণ হয় একটি বোমা। আর সেই সময় গুরুতর আহত হয় ফজলু ও জিন্নাহ। সেদিন শ্রমীকলীগ নেতা মোতালেব দ্রুত তাদের দুজনকে গাড়ীতে করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে ভর্তি করেন। পরে শনিবার ভোর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ফজলুল হক ফজলু।

সরকার বাড়ীর শ্রমীকলীগ নেতা মোতালেব এলাকায় সংসদ সদস্য ও বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নৌকা মনোনিত আব্দুল মোমিন মন্ডলের একান্ত আস্থাভাজন বলে গুনজন রয়েছে। বেলকুচি-চৌহালী এ আসনে এবার নৌকা প্রতিকের বিপরীতে এক জন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছ। স্থানীয়দের ধারণা নির্বাচনে এসকল বিস্ফোরক ব্যবহার করার জন্যই এ বোমা তৈরী করা হয়ে থাকতে পারে।

যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে বিস্ফরণের ব্যাপারে তেমন কোন তথ্য দেওয়া হয়নি এখনো। ঘটনা সেদিন আসলেই কি বিস্ফরণ হয়েছিলো তা নিয়েও স্পষ্ট কোন তথ্য দেওয়া হয়নি।

ঐ দিন ঘটনার পর এলাকার উৎসুক জনতা সেখানে জড়ো হলেও বাড়িটিতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে এলাকায় রহস্য দেখা দেয়। ঘটনার দিন দুপুর দেড়টা থেকে পৌনে ২টার মধ্যে শব্দ শুনতে পান বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা ছুটে গিয়ে দেখে ঘটনার পরপরই কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে দুথজন পুরুষ মানুষকে আহত অবস্থায় সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

তারা ধারণা করে বোমা বা ককটেল জাতীয় কিছু তৈরির সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সেদিন রাতেই পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সুবর্ণসাড়া গ্রামে তদন্ত করেছেন। তবে কোন কূলকিনারা পাননি তারা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা বেলকুচি থানার এসআই শিমুল মন্তব্য করতেও রাজি হননি।

সুবর্ণসাড়া গ্রামের মজনু সরকার বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে যে বিকট শব্দ শুনেছি আমরা দৌড়ে গেলে সরকার বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। আমরা আর কিছু দেখতে পাইনি।

এবিষয়ে গত বৃহস্প্রতিবার সকালে মোতালেব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নৌকার সমর্থক, প্রচারে ছুটে বেড়াচ্ছি। মঙ্গলবার দুপুরে রান্নার সময় বাড়িতে ব্যবহৃত প্রেশার কুকারটি হঠাৎ বিস্ফোরিত হয়।থ তাঁর দাবি, এ ঘটনাকে রং চড়িয়ে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে প্রতিপক্ষের লোকজন। তবে শনিবার সকাল থেকে মোতালেবকে আর পাওয়া যায়নি।

নিহত ফজলুল হক ফজলু (৪৫) কুষ্টিয়া সদর থানার মিলপাড়া মহল্লার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র মামলাসহ মোট ৬টি মামলা রয়েছে। আহত জিন্নাহ আলী (৪৫) এনায়েতপুর থানার সৈদিয়া চাঁদপুর গ্রামের তাছের আলীর ছেলে।
নিহত ফজলুর ভাই মজনু বলেন, আমার ছোট ভাই ফজলু দির্ঘদিন যাবৎ রাজবাড়ী থাকতেন। গত পাঁচমাস পূর্বে একটি মামলায় সিরাজগঞ্জ থেকে গ্রেফতার হলে পুলিশ তাকে গ্রামে নিয়ে এসেছিলো। আমরা গত বুধবার জানতে পারি যে ফজলু বোমা হামলায় আহত হয়েছে। পরে হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি মোতালেব নামে এক শ্রমিকলীগ নেতা আমার ভাইকে বোমা বানানোর জন্য সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। সেই বোমা তৈরির সময় একটি বোমা বিস্ফোরণ হলে আমার ভাই আহত হয়।

মোতালেব পুরো একদিন ফজলুকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। পরে ওর চিৎকার সইতে না পেরে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করে। আজ ভোর রাতে আমার ভাই হাসপাতালে মারা গেছে। মাগরিব পরে জানাযা হবে।
ফজলুর ছোট ভাই বিপুল বলেন, আমার ভাইকে মোতালেব নামে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার এক আওয়ামীলীগ নেতা নির্বাচনের জন্য নিয়ে গিয়েছিল। আজ তার জন্যই আমার ভাই মারা গেছেন। আমি মোতালেবের বিচার চাই।
সিরাজগঞ্জের এএসপি (বেলকুচি-সার্কেল) জন রানা বলেন, ঐ বাড়িতে গেলে মোতালেবের স্ত্রী-স্বজনরা তাদের জানান, রান্নার সময় প্রেশার কুকার বিস্ফোরিত হয়েছে। তবে কোন আলামত দেখাতে পারেননি। বোমা জাতীয় বস্তু বিস্ফোরণের আলামত মেলেনি। যে কালো মাইক্রোবাসের কথা বলা হয়েছে, সেটি এক প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার গাড়ি। সেটিতে তল্লাশি করেও আলামত পাননি। তবে বেলকুচি থানা পুলিশ শব্দের বিষয়টি নিয়ে একটি সাধারন ডায়রী করেছে। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করবো।