পৌরসভার রাণীগ্রাম-কোবদাসপাড়াবাসী
সিরাজগঞ্জে লোক দেখানো পানি নিষ্কাশন নয়, চিরস্থায়ী সমাধান চায়
গত ২৫ জুলাই ২০২৩ইং তারিখে সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হোসেন আলী বালু বাহিত পানির কারনে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের আলোকে বালু খেকোরা যত সামান্য, মানুষ দেখানো পানি নিষ্কাশন শুরু করে। কিন্তু এই মানুষ দেখানো পানি নিষ্কাশনে খুশি নন রাণীগ্রাম-কোবদাসপাড়াবাসী।
রাণীগ্রাম-কোবদাসপাড়াবাসীর প্রাণের দাবী রাণীগ্রাম ও কোবদাসপাড়ায় বালু স্তুপ করে রাখার কোন অনুমতি প্রশাসন দেয়নি। কিন্তু বালু খেকোরা জোরপূর্বকভাবে রাণীগ্রাম ও কোবদাসপাড়ায় বালু স্তুপ করছে। যমুনা নদী থেকে পানি বাহিত বালু পাইপের মাধ্যমে আনার কারনে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি ও নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি করছে।
তথ্যনুসন্ধানে জানা যায়, যমুনা নদী থেকে প্রতিবছর বালু উত্তোলন করে রাণীগ্রাম ও কোবদাসপাড়ায় স্তুপ করে রাখা হয়। উত্তোলিত বালু ড্রেজারের পাইপের মাধ্যমে স্তুপ করার কারণে বালু বাহিত পানি দ্বারা রাণীগ্রামের ভাটা এলাকা ও কোবদাসপাড়া জলাবদ্ধবতা সৃষ্টি হয়। সারাবছর বালু বাহিত পানি আসায় শুস্ক মৌসুমেও জলাবদ্ধতা হয়ে বন্যার আকার ধারণ করে। রাণীগ্রাম ভাটা এলাকায় জনসাধারণ সারাবছরই জলাবদ্ধতার কারণে পানি নিচে নিমজ্জিত হয়ে বসবাস করে। পাানি নিচে নিমজ্জিত হওয়ার কারণে রাণীগ্রাম ও কোবদাসপাড়া জনসাধারণ সুনাগরিক হিসেবে নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এছাড়াও বালু পরিবহণের পাইপ বিভিন্ন জায়গায় থাকার কারণে রাস্তার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও জনসাধারণ চলাচল ও যানবাহনের চলাচল প্রতিনিয়ত বিঘ্ন ঘটছে। সারাদিন বালু পরিবহণের কারণে ট্রাকের ধুলায় জনসাধারণ প্রতিনিয়ত চোখে ধুলাবালি লাগছে। ধুলাবালির কারণে শ্বাসকষ্ট, চোখের সমস্যা, এ্যাজমা রোগসহ প্রতিদিন নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ৭নং ওয়ার্ডবাসী। এমতাবস্থায় সারাবছরই রাণীগ্রাম ও কোবদাসপাড়ায় যমুনা বালু স্তুপ করা ও বালু পরিবহনের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে পৌরসভা ৭নং ওয়ার্ডবাসী।
অভিযোগ ও তথ্যানুসন্ধানে আরোও জানা যায়, সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের রাণীগ্রাম লেবুর মোড় থেকে রাণীগ্রাম ক্লোজার পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা করার জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে। এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি প্রশস্ত প্রায় ৫ মিটার এবং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু বর্তমানে বালু খেকো বদরুল আলম বালু স্তুপ করে রাখার জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণের বাঁধের উপর দিয়ে পাইপের মাধ্যমে বালু পরিবহণের জন্য ৫টি জায়গায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সাথে ৫টি ড্রেজার স্থাপন ও বাঁধের উপর দিয়ে পাইপ স্থাপন করে যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। বালু ব্যবসায়ীরা এভাবে পাইপ বসানোর ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে বাঁধটি। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে কোনো মুহূর্তে বাঁধটি ভেঙ্গে রাণীগ্রাম-কোবদাসপাড়ার মধ্যে দিয়ে সিরাজগঞ্জ শহর সহ সদর উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হবে। রাণীগ্রাম ও কোবদাসপাড়ার মধ্যে দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করলে ৭নং ওয়ার্ডের জানমাল সহ জনসাধারণের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হবে। এছাড়া রাস্তা (বাঁধ) কেটে বালুর পাইপ স্থাপন করেছে প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী বদরুল আলম। এতে করে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ দিয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। বৃষ্টি হলে কাদা পানিতে চরম দূর্ভোগে পড়ে গ্রামবাসী। আবার কারও কারও ঘরের মধ্য দিয়ে জোর করে বালু পাইপ নিয়েছে। বালুখেকো বদরুল আলমের ভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিকরা কিছু বলতে পারছে না।
সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হোসেন আলী বলেন, আমি ৭নং ওয়ার্ডের জনসাধারণের দূর্ভোগের কথা ভেবে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছিলাম। লিখিত অভিযোগের আলোকে কিছুদিন পাইপ স্থাপন বন্ধ করা হয়েছিল। তবে বর্তমানে পাইপের মাধ্যমে বালু পরিবহণ করার কারণে বালুবাহিত পানির দ্বারা ধীরে ধীরে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। আজ আবার দেখছি জলাবদ্ধতা হ্রাস করণে রাণীগ্রাম পশ্চিমপাড়ার ওয়াবধা বাঁধের উপর দিয়ে পাইপ বসিয়ে পানি নিষ্কাশন করছে।
তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন, ৭নং ওয়ার্ডে কেউ বালু স্তুপ না করতে পারে, তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার আহবান জানান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন