সিলেটের কৈলাশটিলা এলপিজি প্ল্যান্টের উৎপাদন ৩ বছর ধরে বন্ধ

সিলেটের কৈলাশটিলা এলপিজি প্ল্যান্টের উৎপাদন ৩ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। কবে চালু হবে আরপিজিসিএল প্ল্যান্টের উৎপাদন তা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।

সূত্র জানায়, আরপিজিসিএল প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আরপিজিসিএলের উৎপাদিত এলপি গ্যাসের ওপর নির্ভর করে স্থাপিত এলপি গ্যাস বটলিং কারখানাটির উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। একই কারণে গোলাপগঞ্জের দাড়িপাতনের কৈলাশটিলা এমএসটিই গ্যাসফিল্ড প্রতিদিন তাদের এনজিএল পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

সিলেটের গোলাপগঞ্জের দাড়িপাতনে রয়েছে কৈলাশটিলা এমএসটিই গ্যাসফিল্ড। মূলত এই খনি থেকে উত্তোলিত মূল্যবান এনজিএল (ন্যাচারাল গ্যাস লিকুইড) কাজে লাগাতে ১৯৯৮ সালে পেট্রোবাংলার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আরপিজিসিএল (রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড) প্ল্যান্টটি স্থাপন করা হয়।

এই প্ল্যান্টের অবস্থান গ্যাস খনিরই পাশের গোলাপগঞ্জ উপজেলা সদরের টিকরবাড়ি এলাকায়। যেটি জ্বালানি তেল পেট্রোল, ডিজেল এবং এলপি গ্যাস উৎপাদনকারী কৈলাসটিলা এলপিজি প্ল্যান্ট নামে পরিচিত।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়,বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) একটি নির্দিষ্ট মানের নিচে পেট্রোল কিনবে না বলে জানিয়ে দিলে ২০২০ সাঔেধষরষ সেপ্টেম্বরে আরপিজিসিএলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। অথচ কৈলাশটিলা এলপিজি প্ল্যান্ট থেকে পেট্রোল উৎপাদনের ক্ষমতা দৈনিক প্রায় ১ লাখ লিটার। এছাড়া দৈনিক ২০-২৫ হাজার লিটার ডিজেল এবং ১৫-১৭ টন এলপি গ্যাস উৎপাদন করতে পারে প্রতিষ্ঠানটি।

পেট্রোল, ডিজেল ও এলপি গ্যাস উৎপাদন থেকে প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয় ছিল ৪০-৪৫ কোটি টাকা। কিন্তু, গত ৩ বছওেংষধস বেশি সময় প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ। এরপর থেকে আরপিজিসিএল প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আরপিজিসিএলের উৎপাদিত এলপি গ্যাসের ওপর নির্ভর করে স্থাপিত এলপি গ্যাস বটলিং কারখানাটির উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। একই কারণে গোলাপগঞ্জের দাড়িপাতনের কৈলাশটিলা এমএসটিই গ্যাসফিল্ড প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ এনজিএল পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিতে হচ্ছে।

অপরদিকে, এলপি গ্যাস বটলিং কারখানা থেকে স্থানীয় ভাবে এলপি গ্যাস সরবরাহ করা হতো। কারখানাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর স্থানীয়রা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এরপর থেকে স্থানীয়রা প্ল্যান্টটি দু’টি পুনরায় চালুর ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা কমিটি ব্যানারে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। এর প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কৈলাশটিলা এলপি গ্যাস প্ল্যান্ট পরিদর্শন করেন বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ এনডিসি।

এ সময় প্ল্যান্টের প্রয়োজনীয়তা, স্থানীয় জীবন-জীবিকায় প্ল্যান্টের গুরুত্ব, প্ল্যান্ট বন্ধ হওয়ায় গরিব মানুষের ভোগান্তির এবং খনিজ সম্পদ এনজিএল ধ্বংস হওয়ার বিষয় তুলে ধরে দ্রুত প্ল্যান্ট চালুর ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান স্থানীয় বিশিষ্ট জনেরা। জবাবে বিপিসির চেয়ারম্যান বলেন, এ প্ল্যান্ট বিপিসির সম্পদ। এটা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। আমরা প্ল্যান্টের জন্য সবকিছু করব। তিনি প্ল্যান্ট সংশ্লিষ্ট সব তথ্য সংগ্রহের জন্য এলপি গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দেন।

এরপর কেটে যায় ১ বছর। ২০২২ সালের শেষের দিকে সরকারের জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব (অপারেশন-১) মো: হাফিজুর রহমান চৌধুরী প্ল্যান্ট পরিদর্শন করেন। এরপর চালুর উদ্যোগ কিছুটা গতি পায়। সর্বশেষ চলতি বছরের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) এ প্ল্যান্ট চালুর ব্যাপারে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। ওই সময়ে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি মেরামত, পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের পাশাপাশি সরিয়ে নেওয়া হয় মরীচিকা ধরার যন্ত্রাংশ। তখন প্ল্যান্টটি চালুর জন্য কতটা উপযোগী তা যাচাই করা হয়। বর্তমানে যাচাই বাছাইয়ের মধ্যে রয়েছে প্ল্যান্টটি চালুর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য।