সিলেটের বালাগঞ্জ ভূমি অফিস যেন অনিয়ম ও দূর্নীতির আখড়া

সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার ভূমি অফিস দুর্নীতির স্বগ্ররাজ্যে পরিণত হয়েছে। নিয়মকে অনিয়ম, অনিয়মকে নিয়ম, একজনের নামাজারি অন্যজনকে দেয়া তার নিত্য দিনের কাজ। ২৬/১২/২০২১ ইং যোগদান করা ওই অফিসের সহকারী কমিশনার সুমাইয়া ফেরদৌস টাকা ছাড়া কোন কাজই করেন না। ভূমি সংক্রান্ত যেকোন সেবার বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা। এই অফিসে গ্রাহকদের হয়রানি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অল্প দিনের মধ্যেই তিনি নাকি অর্থ বিত্তের মালিক বনে গেছেন।

সরেজমিনে জানা গেছে, বালাগঞ্জ ভূমি অফিসে নামজারি, জমির পর্চা (খসড়া) তুলা সহ ভূমি সংক্রান্ত সকল কাজে সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে অনৈতিক ভাবে বাড়তি টাকা নিচ্ছেন। চুক্তির টাকা ছাড়া কোন ফাইলই নড়ে না। টাকা না দিলে নির্ধারিত সময়ে কোন কাজ আদায় করা যায় না। এই হলো বালাগঞ্জ ভূমি অফিসের কর্মকাণ্ড।

সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অগোচরে মাঠ পর্যায়ের বালাগঞ্জ ভুমি অফিসের সহকারী কমিশনার বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে বলে জমির কাজে আসা ভূক্তভোগীদের দাবি। সেবা প্রাপ্তির ৮০ শতাংশ লোকই চরম হয়রানির শিকার হতে হয় আজ না—কাল সময়ক্ষেপন করে। সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে অতিরিক্ত হারে দাবিকৃত উৎকোচ না দিলে সেবা গ্রহীতারা পান না তাদের কাঙ্খিত সেবা। সাপ্তাহিক শুনানির নামে চলছে অহরহ রফা দফা।

এরই মধ্যে জেলা প্রশাসক রাজস্ব বরাবর ভুক্তভোগী মো.শহিদুর রহমান লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, ১৩৬ নং দিগরবেড়কুড়ি মৌজার ৩৮৬ নং খতিয়ানের ১৭৪২ নং দাগের ০.৪৪০০ একর ভুমির মালিক ছিলেন, ১। ফজলুল হক, ২। নুরুল হক, ৩। সামছুল হক, ৪। আব্দুল কাহির, ৫। মোজাম্মেল হক পিতা: হাজী আইন উদ্দিন সাং নিজ নামিয় বক্তিগন জে রেকর্ড মোতাবেক প্রত্যেকে উক্ত দাগের ভূমি সমান হিস্যার মালিক সে মোতাবেক আব্দুল কাহির ১৭৪২ নং দাগের ০.০৮৮০ একর ভূমির মালিক বটে। বর্ণিত আব্দুল কাহির তাহার মালিকানা ০.০৮৮০ একর ভূমির মাধ্যে ০০.৫৫০ একর ভূমি ১৫/০১/২০১৩ তারিখে শহিদুর রহমান, পিতা: আবুল কালাম, ৭৫ নং দলিলের আমার কাছে বিক্রি করেন। আমরা আমাদের খরিদা দলিলেল ভূমির খাজনা পরিশোধ করার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দেন। এর পর নামজারির জন্য অনলাইনে আবেদন করার পর আবেদনটি খারিজ করেন। কেন আবেদনটি খারিজ হলো ইউনিয়ন অফিসে যোগাযোগ করে জানতে পারি উপরোক্ত নামজারী দাগের ০০.৮০০ একর ভূমি ৭৬ দলিল ও দীর্ঘদিন পরে আরেকটি দলিলে খরিদা ভুমি বড় অংকের টাকার বিনিময়ে সহকারী কমিশনার ও সার্ভেয়ারের মাধ্যমে আমাদের বিবাদী আশরাফুল ইসলাম তালুকদার, পিতা আছির উদ্দিন, তাদের নামে নামজারী করিয়া নিয়াছেন। যার ফলে ৭৫ নং দলিলের ভূমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। বিষয়টি জানতে পেরে শহিদুর রহমান নামজারি বাতিল/সংশোধনের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া ফেরদৌস বরাবর মিসকেস মামলা করেন। এরপর শুনানির জন্য তাকে অফিসে ডাকা হয়।

উভয়জনের কাগজপত্র দেখে বিশ্লেষণ করে আমাদের পক্ষে ৭৫ নং দলিল রায় দিলেন। কিছুদিন যাওয়ার পর নামজারী করিয়ে দিবেন বলে দিলেন। কথা অনুযায়ী কিছুদিন যাওয়ার পর অফিসে যোগাযোগ করলে তারা বললেন সহকারী কমিশনারের টেবিলে দেওয়া হয় নাই ফাইল দেওয়া হবে এর আগে আমাদেরকে কিছু টিপস পাঠান। তাদের কথা মতো টিপস পাঠানো হলো। এর পর দেওয়া হলো সহকারী কমিশনার সুমাইয়া ফেরদৌস’র টেবিলে। আবার কিছুদিন পর যোগাযোগ হলো তারা বললেন টেবিলে দেওয়া হয়েছে এখনো দস্তগত হয় নাই। এরপর আবারো উভয়পক্ষকে ডাকা হলো। এবং বলা হলো বাদী (১ম পক্ষ) আমাকে কে দেওয়া হবে না। যেই কথা সেই কাজ। আমাদেরতো রহস্যজনক লাগগো। তিনি নানান টালবাহনায় উত্তর দিলেন। খারিজ করে দিবেনও এ বললেন। এমনকি তিনি বললেন ২য় পক্ষের সাথে আফোস মিমাংসা করার জন্য। তখন আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম আমার বিবাদী আশরাফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী হাসনা বেগম সহকারী কমিশনার ভূমি বালাগঞ্জ সুমাইয়া ফেরদৌসকে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে মেনেজ করে ফেলেছেন। এজন্যই তিনি নানান টানবাহনায় আমাদেরকে উত্তর দিচ্ছেন। বার বার সহকারী কমিশনার সুমাইয়া ফেরদৌসের কাছে গেলে একেক সময় একেক উত্তর দেন ও রাগ করেন। একবার বলেন আপনি আগে করলেন না কেন? আপনাকে দিলে বিবাদী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। আপনার কাগজে বেজাল আছে? আপনি মিমাংসা করেননি কেন? আপনার মামলা খারিজ করে দিবো বলে হুমকি দেন। তাতেও কোনো কাজ হয়নি।

শহিদুর রহমান নয় এমন অসংখ্য সেবাগ্রহীতা প্রতিদিন বালাগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসে সার্ভে রিপোর্ট, ডিসিআর সংগ্রহ, মিসকেচ, খাজনা, দাখিলাসহ ভূমিসংক্রান্ত সেবা পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। একজনের জমি অন্যের নামে ডিসিআর, অন্যের সম্পত্তি নামে—বেনামে নামজারির ঘটনা ঘটেছে অহরহ। সহকারী কমিশনারের টেবিলে ফাইল পৌঁছাতে নিকটদস্থ কর্মকর্তা—কর্মচারীদের দিতে হয় কয়েক দফা ঘুস। অন্যথায় দিনের পর দিন ঘুরেও কাজ হয় না। নানা অজুহাতে হয়রানি করা হয় সেবাগ্রহীতাদের। কাগজপত্রে কোনো ত্রুটি থাকলে সেবাগ্রহীতাদের গুনতে হয় আরও কয়েক গুণ টাকা। অতিরিক্ত টাকা দিলে অনিয়মও যেখানে নিয়মে পরিণত হয়। যিনি দীর্ঘদিন ধরে বালাগঞ্জ অফিসে কর্মরত রয়ে বিশাল অর্থ বিত্তের মালিক হয়ে গেছেন। ভুক্তভোগীরা আরো অভিযোগ করেন, সুমাইয়া ফেরদৌস ঘুষ বাণিজ্য’ অনিয়ম’ দুর্নীতি ও নিজের নিয়োজিত কর্মচারী সিন্ডিকেটের উৎপাতে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। গোটা ভূমি অফিস হয়ে উঠেছে অনিয়ম—দুর্নীতির আখড়া। এক্ষেত্রে ভয়ভীতিরও বালাই নেই।
অভিযুক্ত বালাগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া ফেরদৌস বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়েছে সে অভিযোগ সম্পর্কে জানা নেই অথবা আমার কাছে কপি নেই। আনিত অভিযোগ সম্পর্কে বললে তিনি বলেন, মিস কেইসের মামলার যারা রায় পায় তারা হয়তো খুশি থাকে। আর যারা রায় পায় না তারা হয়তো বেখুশি হয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে পারে। আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তৌছিফ আহমেদ বালাগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া ফেরদৌসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়ে বলেন, অফিসতো বন্ধ আছে, তথ্য নিয়ে জানাবো।