সিলেটের বিশ্বনাথে অ্যাডভোকেট শামীমের সনদ বাতিলের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

সিলেটের বিশ্বনাথে সরকারি ভূ-সম্পত্তি রক্ষা, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গ্রামবাসীকে হয়রাণী বন্ধ ও ভূমি খেকো অ্যাডভোকেট শামীমের ওকালতি সনদ বাতিল’র দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামবাসী।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে পৌর শহরের পুরাণ বাজার এলাকাস্থ একটি রেষ্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তেঘরী গ্রামের আঙ্গুর মিয়া।
লিখিতে বক্তব্যে আঙ্গুর মিয়া বলেন, উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামের পশ্চিম-দক্ষিণে কয়েক কোটি টাকার সরকারি খাস ভূমি রয়েছে। যা গ্রামের মৃত আয়াত উল্লাহ, তার পুত্র চান মিয়া, তেরা মিয়া, ধন মিয়া, সুরুজ মিয়া ও চান মিয়ার পুত্র সাজ্জাদুর রহমান, চাচাত ভাই অ্যাডভোকেট শামীম আহমদ’সহ ভাড়াটিয়া অস্ত্রবাজ-সন্ত্রাসীরা একাধিকবার দখলের চেষ্টা করেন, কিন্তু আমরা গ্রামের কৃষিজীবি ও নিরীহ প্রকৃতির লোকজন তাতে বাঁধা দেই।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে গ্রামবাসীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রাণী ও নিঃশেষ করে আসছে। আর সরকারি এ খাস ভূমি রক্ষায় বিশ্বনাথ ইউএনও, এ্যাসিল্যান্ড’সহ স্থানীয় প্রয়াগমহল তফসীল অফিসের কর্মকর্তারা নিরব ভূমিকা পালন করায় ভূমি খেকো শামীমের দাপট দিন দিন বেড়েই চলছে।
তাই আমরা গ্রামবাসী অভিলম্বে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার’সহ আইনজীবি শামীমের সনদ বাতিল ও সাজাদ্দুর রহমান’সহ অস্ত্রবাজ মামলাবাজ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করছি। অন্যতায় ভবিষ্যৎ-এ তাদের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় গ্রামবাসী হয়রাণী হলে কিংবা কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনায় গ্রামবাসী ক্ষতিগ্রস্থ হলে, সেজন্য দায়ী থাকবে প্রশাসন।
লিখিতে বক্তব্যে আঙ্গুর মিয়া আরোও বলেন, তেঘরী মৌজার জেএল নং ৪৪, এসএ দাগ নং ৯, ১১০, ১৫২, ১৭৭’সহ অন্যান্য দাগে প্রায় কয়েক কোটি টাকার ওই সম্পত্তির রেকর্ডীয় মালিক ছিলেন সিলেট শহরের খাজাঞ্চী বাড়ির জমিদার কালীপ্রসাদ চক্রবর্তি’সহ ১১ জন জমিদার। আর গ্রামবাসীরা জমিদারগণের অনুমতি নিয়েই ৯ ও ১১০নং দাগের ভূমি’সহ অন্যান্য ভূমিতে গোচারণ ও খেলার মাঠ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছেন।
আর মাঠ জরিপের সময় দূর্নীতিবাজ সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের সহায়তায় ৯ ও ১১০নং দাগের ভূমি জমিদারগণের নামে রেকর্ডভুক্ত হলেও ঘুষের মাধ্যমে মন্তব্য কলামে আয়াত উল্লার নাম লিখিয়ে নেয়। এ সুযোগে ২০০৩ সালে তেঘরী গ্রামের আপ্তাব মিয়া দুটি জাল দলিল সৃষ্টি করে সরকারকে প্রথম বিবাদী করে স্বত্ব ১৫০/২০০৩ইং মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় বর্ণিত ভূমি দলিলের মাধ্যমে জমিদারগণের নিকট থেকে খরিদ করেছে মর্মে উল্লেখ করেন এবং এ মামলায় চান মিয়া ও তার ৩ ভাই পক্ষভুক্ত হন। আদালত মামলাটি খারিজ করে দিলে আপ্তাব মিয়া মহামান্য হাইকোর্টে ৩১৫/২০০৫ইং আপিল দায়ের করলে হাইকোটও আপ্তাব মিয়া ও চান মিয়া গংদের দাবি নামঞ্জুর করে আপিলটি খারিজ করে দেন।
হাইকোর্টে পরাজিত হয়ে আপ্তাব মিয়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব এর নিকট নামজারি আপিল ৭৪/১৯৯১ইং দায়ের করেন। আপ্তাব মিয়া, চান মিয়া ও তেরা মিয়া গংদের বিরুদ্ধে জাল দলিল করায় আপ্তাব মিয়া জিআর ৬/১৯৯২ইং জালিয়াতি মামলা দায়ের করলে তেরা মিয়া দীর্ঘ কয়েক মাস হাজতবাস করেন এবং চান মিয়া দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন।
আপ্তাব মিয়া বিএস রেকর্ড বাতিল করে তার নামে নামজারির জন্য ৭৪/৯১ইং মামলা দায়ের করলে শুনানী শেষে নামজারি মামলাটিও খারিজ হয়ে যায়। এ মামলায় পরাজিত হওয়ার পর অতিরিক্ত কমিশনার রাজস্ব কার্যালয়ে চান মিয়া ৫৮/২০১১ইং, জেলা প্রশাসককে বিবাদী করে মামলা দায়ের করলে সেই নামজারি আপিলটিও খারিজ হয়ে যায়।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, চান মিয়া বিশ্বনাথ সহকারী জজ আদালতে স্বত্ব ঘোষনার দাবিতে স্বত্ব ৭/২০১২ইং মামলাটি দায়ের করলে আদালত সেই মামলাটিও খারিজ করে দেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে চান মিয়া ৩০৪/২০১২ইং আপিল করলে এই আপিলটিও খারিজ করেন আদালত। ৪.১০.২০১৯ইং তারিখে এডিসি রাজম্ব খতিয়ান নং ১০১, ১০৭, ২৯৪ এসএ দাগ ১৫২, ১৭৭, ৯ ও ১১০, বিএস দাগ ১৮১, ২০৬, ১৩, ১৪১ নম্বর দাগে বিএস জরিপে নাম অসুদ্ধ থাকায় সংশোধনের জন্য সিলেটের ল্যান্ডসার্ভে ট্রাইব্যুনালে ১২৪৯/২০১৬ইং মামলাটি দায়ের করেন এবং মামলাটি বিচারাধীন থাকাবস্থায় ভূমি খেকো অ্যাডভোকেট শামীম অস্ত্রবাজদের নিয়ে বর্ণিত ভূমি দখলের চেষ্টা করে। এতে গ্রামবাসি বাধা দিলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরোও বলেন, আয়াত উল্লার মৃত্যুর পর তার পুত্র চান মিয়া এবং চান মিয়ার মৃত্যুর পর তার পুত্র সাজ্জাদ এবং তেরা মিয়ার পুত্র অ্যাভোকেট শামীম একের পর এক সাজানো মামলা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামবাসীকে পথের ভিখারী করতে যাচ্ছে। প্রতারক শামীম ‘আইনজীবি’ হওয়ার ক্ষমতার ধাপট দেখিয়ে বার বার নিজের আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে হয়রাণী করার উদ্দেশ্যে নিরীহ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে যাচ্ছেন।
অতিষ্ট গ্রামবাসী একপর্যায়ে ডিআইজি বরাবরে ওই ভূমি খেকো মামলাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে ওসমানীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান পিপিএম (সেবা) গত ২৫.০৫.২৫ইং তারিখে গ্রামবাসীর অভিযোগের সত্যতা পেয়ে দীর্ঘ প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বলেন, সরকারি খাস ভূমি দখল করতে না পেরে গ্রামের কৃষক ও নিরিহ শ্রেণীর মানুষকে অ্যাডভোকেট শামীম আহমদ হয়রাণী করছে মর্মে তদন্তে প্রতিয়মান হয়।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন