সিলেটের বিশ্বনাথে প্রবাসী দেবরের বিরুদ্ধে ‘খুন-গুমের হুমকি ও ভূমি দখল’র অভিযোগ
সিলেটের বিশ্বনাথে যুক্তরাজ্য প্রবাসী দেবরের বিরুদ্ধে ‘খুন-ঘুম, বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে দখলের পায়তারা, আদালতের আদেশ অবমাননা করে মানুষ চলাচলের একটি সড়ক কর্তন ও বসতঘরের একাংশ দখল করে দেয়াল নির্মাণ করার’ অভিযোগ এনেছেন ক্যান্সারে আক্রান্ত ভাবি।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) উপজেলার বিশ্বনাথ ইউনিয়নের হিমিদপুর গ্রামে মরহুম অ্যাডভোকেট আইয়ুব আলীর বাড়িতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ষাটউর্ধ্বো বৃদ্ধা মোছাঃ আছিয়া আইয়ুব মিনা নিজের যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও আওয়ামী লীগ নেতা কাউছার আলীর বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ আনেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে মরহুম অ্যাডভোকেট আইয়ুব আলীর স্ত্রী মোছাঃ আছিয়া আইয়ুব মিনা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী কাউছার আলী ও তার স্ত্রী জয়রুন উরফে জনতা বেগম আমার স্বামীর পৈতৃক অংশ দখলের জন্য পায়তারা করে আসছে।
এরই অংশ হিসেবে গত ১৪ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তারা (কাউছার-জনতা) বহিরাগতদের দিয়ে জোরপূর্বক আমার স্বামীর নির্মিত বসতঘরের পশ্চিম অংশ অবৈধভাবে দখল করে দেওয়াল নির্মাণ করেছে ও প্রকাশ্য দিবালোকে একটি সড়ক কর্তন করে সেখানেও দেওয়াল নির্মাণ করে মানুষ চলাচলের সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে।
বসতঘরের অংশে দেওয়াল নির্মাণের কারণ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী কাউছার আলীর কাছে জানতে চাইলে সে (কাউছার) আমাকে (আছিয়া) অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং হুমকি দিয়ে বলে আমি (কাউছার) উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মুমিন মামুনের মাধ্যমে উক্ত সম্পত্তি (আমার স্বামীর পৈতৃক অংশ) দখল করা জন্য ‘প্রশাসন ও নেতাদের’ ২০ লাখ টাকায় কন্টাক করেছি।
আমাকে (আছিয়া) কাউছার ওই হুমকি দেওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই সেখানে আব্দুল মুমিন মামুন উপস্থিত হন এবং নিজে (মামুন) উপস্থিত থেকে আমার (আছিয়া) স্বামী-সন্তানের অসংখ্য স্মৃতি বিজরিত বসতঘরের পশ্চিম অংশ দখল করে দেওয়াল নির্মাণ করেন। এরপর আমি বিষয়টি যুক্তরাজ্য প্রবাসী আমার বড় মেয়ে ফাহমিনা নূর লিপিকে জানাই। তখন আমার মেয়ে বিষয়টি উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গৌছ আলীকে অবহিত করে।
এরপর গৌছ আলী আমার মেয়ের ভাসুরের সাথে কথা বলে বিষয়টি আমোষ-মিমাংসার মাধ্যমে শেষ করার জন্য ১৭ ডিসেম্বর সকাল ১১টার দিকে আব্দুল মুমিন মামুনের বাড়িতে একটি বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করেন, কিন্তুু পরের দিন বিকেলে তারা (কাউছার-জনতা) বৈঠকে না বসার সিদ্ধান্ত জানান। অথচ গত ‘৩ ও ৫ ডিসেম্বর’ আমাদের বিষয়টি আমোষ মিমাংশায় শেষ করার জন্য এলাকার মুরব্বী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ নূর মিয়া এবং উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মুমিন মামুনের মধ্যস্থতায় আমাদের বাড়িতে দুটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে মোছাঃ আছিয়া আইয়ুব মিনা অভিযোগ করে বলেন, ১৬ ডিসেম্বর রাতে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা কাউছার আলী নিজের ব্যবহৃত (০১৭২৮-২৫২৯৭৪) মোবাইল থেকে আমার (আছিয়া) দু’তলার ভাড়াটিয়া এমদাদুল হকের মোবাইলে (০১৭১১-৯১২০৭৮) কল করে রুম খালি করার এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী আমার বড় মেয়ে ফাহমিনা নূর লিপিকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে।
আমার স্বামী জীবিত থাকাবস্থায় একাধিকবার এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে ৩ ভাই-বোনদের মধ্যে পৈতৃক (মৌরশী) সম্পত্তি বন্টনের উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন। কিন্তু কাউছার আলী ও তার স্ত্রীর কারণে তা সম্ভব হয়নি। কারণ পিতার সম্পত্তিতে নিজের আপন বোনকে কোন অংশ দিতে রাজি ছিলো না ওই কাউছার ও তার স্ত্রী জনতা।
তাই আমার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে সে (কাউছার) প্রবাসে গিয়ে সেখানে বসে বসে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের মাধ্যমে হুমকি-ধামকি দিয়ে আমাকে (আছিয়া) আমার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য নানান ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করে আসছে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটেও এসেও তার (কাউছার) এমন অপতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এমতাবস্থায় আমি (আছিয়া) নিরুপায় হয়ে ‘কাউছার আলী ও জয়রুন উরফে জনতা বেগম’র বিরুদ্ধে সুনির্দিস্ট অভিযোগ এনে বিশ্বনাথ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।
নিজের লিখিত বক্তব্যে মোছাঃ আছিয়া আইয়ুব মিনা আরোও বলেন, ২০২১ সালে কাউছার আলী সিলেট কোর্টে একটি বাটুয়ারা মামলা দায়ের করেন (যার নম্বর ৪৭৩/২০২১ইং)। এর পরবর্তিতে একই কোর্টে আমার (আছিয়া) পক্ষ থেকেও মামলা দায়ের করা হয়। আর উভয় পক্ষের মামলার প্রেক্ষিতে আদালত নির্দেশনা দেন যে।
পরবর্তি কোন আদেশ না হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষকে স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে চলার জন্য এবং উক্ত বিষয়ে সমাধানের পূর্ব পর্যন্ত নালিশা ভূমি সমূহে শান্তি-শৃঙ্খলা অবনতি হয় এরুপ কার্যকলাপ হতে বিরত থাকার জন্য উভয় পক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা কাউছার আলী নিজের টাকার জোরে ‘প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের’ সাথে আতাত করে সড়ক কেটে ভূমি ও বাড়ির অংশ জোরপূর্বক দখল করে দেওয়াল নির্মাণ করেছে।
তাই আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে ক্যান্সারে আক্রান্ত্র একজন মা হিসেবে নিজের ও পরিবারের সদস্য জীবনের নিরাপত্তা ও সম্পত্তি করার জন্য বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেস্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেস্টা, পুলিশের আইজিপি, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার’সহ সংশ্লিস্ট সকলের কাছে সার্বিক সহযোগীতা ও ন্যায় বিচার কামনা করছি। কারণ জীবনের অন্তিম বেলায় আমি (আছিয়া) একটু স্বস্তিতে বেঁচে থাকতে চাই, হয়রাণীর শিকার হয়ে মরতে চাই না।
নিজের বিরুদ্ধে উত্তাপিত সকল অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও আওয়ামী লীগ নেতা কাউছার আলী বলেন, কাগজপত্রে এটি আমার অংশ। তাই আমি সেখানে দেওয়াল নির্মান করেছি। আমার কাছে সকল বৈধ কাগজপত্রও রয়েছে।
বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মুমিন মামুন বলেন, ঘটনার দিন এলাকার একজন মুরব্বী জানান সেখানে সমস্যা হচ্ছে, আমি যেনো সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি। আর এরই প্রেক্ষিতে আমি সেখানে যাই এবং উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা আনার চেষ্টা করি, কিন্তু পারিনি। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য আমরা থানা পুলিশের সহযোগীতা নেই।
পুলিশ সেখানে গিয়ে উভয় পক্ষকে মিলিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এব্যাপারে আমাকে কোন টাকা দেওয়া হয়েছে কিনা কিংবা আমার মাধ্যমে কোন কন্টার্ক হয়েছে কিনা তা একমাত্র আর আমাকে প্রবাসী কাউছার আলীই ভালো বলতে পারবেন।
বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) রুবেল মিয়া বলেন, মোছাঃ আছিয়া আইয়ুব মিনার দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে এব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এখানে পক্ষপাতের কোন সুযোগ নেই।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন