সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের দাবিতে সেবুল মিয়ার সংবাদ সম্মলন
৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সিলেটের বিশ্বনাথে ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে উপজেলার কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে পুনঃভোটের দাবি জানিয়েছেন চেয়ারম্যান পদে ‘দোয়াত-কলম’ প্রতীকের প্রার্থী যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক প্রবাসী সেবুল মিয়া।
তিনি শুক্রবার (১০ মে) বিকেলে পৌর শহরের একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচনে ‘টেবিল কাস্টিং, এজেন্ট বের করে দিয়ে জাল ভোট প্রদান, চুড়ান্ত ফলাফল ঘোষণায় নাটকীয়তা ও চুড়ান্ত ফলাফল সিটের ৩টি পদের প্রদত্ত ভোটের হিসেবে গড়মিল থাকা, কারচুপির মাধ্যমে প্রশাসন বিশেষ সুবিধা নিয়ে এক প্রার্থী বিজয়ী ঘোষণা করে, বিজয়ী প্রার্থী ও তার কর্মীদের কর্তৃক পরাজিত প্রার্থীর এজেন্ট-কর্মীদের প্রাণে হত্যার হুমকি প্রদানের অভিযোগ এনে’ ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে পুনঃভোটের দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী প্রবাসী সেবুল মিয়া বলেন, একই সময়ে অনুষ্ঠিত সিলেট বিভাগের ১১টি উপজেলার নির্বাচন ফলাফল রাত ১০টায় মধ্যে ঘোষণা করা হলেও রহস্যজনক কারণে ‘নোয়ারাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ ভোট কেন্দ্রের ভোটে গড়মিল থাকায় বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল আটকে রাখা হয়।
অবশেষে রাত ১টায় নাটক সাজিয়ে প্রশাসন ১ প্রার্থীর কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করে। সাথে সাথে বিশ্বনাথের মানুষ প্রহসনের এই ফলাফল প্রত্যাখান করেছে। এমনকি সর্বস্তরের মানুষ উপজেলা সদরে এসে প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু পুলিশ বাহিনী সাধারণ জনগণের উপরে লাটিচার্জ করে সরিয়ে দিয়েছে।
ভোটের ফলাফল প্রত্যাখান করে নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তার বরাবরে ফলাফল বাতিল করে পুণঃভোটের দাবী জানিয়ে লিখিত আবেদন করেছেন ‘দোয়াত-কলম’ প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সেবুল মিয়া। একই অভিযোগ এনে ‘আনারস’ প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহমদও নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করে কয়েকটি কেন্দ্রে পুণঃভোট ও পুণঃগণনার দাবীতে রিটার্ণিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
‘দোয়াত-কলম’ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রবাসী সেবুল মিয়া লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন, ঘোষিত নির্বাচনী ফলাফলের চুড়ান্ত সিটে মোট প্রদত্ত ভোটের হিসেবে ৩টি পদে (চেয়ারম্যান পদে ৬০ হাজার ৪১৯ ভোট, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬০ হাজার ২৩৩ ভোট ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬০ হাজার ২৪১ ভোট) ভিন্নতা থাকাটাই প্রমাণ করে নির্বাচন কতটুকু গ্রহনযোগ্য হয়েছে। এছাড়া সারা উপজেলায় ৩০-৩১% ভোট কাস্ট হলেও উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নে কিভাবে ৯০-৯৫% ভোট কাস্ট হয়।
এতেই প্রমাণ হয় ওই ইউনিয়নের সবকটি সেন্টারে টেবিল কাস্ট করা হয়েছে। এছাড়া খাজাঞ্চী ইউনিয়নের চন্দ্রগ্রাম ভোট কেন্দ্র, কান্দিগ্রাম কেন্দ্র, নোয়ারাই কেন্দ্র, খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্র, পৌরসভার বিশ্বনাথ সরকারি কলেজ কেন্দ্র, উত্তর মিরেরচর কেন্দ্র, দক্ষিণ মিরেরচর কেন্দ্র, রামপাশা ইউনিয়নের আশুগঞ্জ বাজার কেন্দ্র, আল-আযম সেন্টার, দৌলতপুর ইউনিয়নের সিংরাওলী কেন্দ্রে টেবিল কাস্ট করা হয়েছে।
অনেক সেন্টার থেকে আমার এজেন্ট জোরপূর্বক বের করে দিয়ে প্রচুর জাল ভোট দেওয়া হয়েছে। জাল-জালিয়াতি করে আমার নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নিয়েও তারা ক্লান্ত হয়নি। ফলাফল ঘোষণার পর থেকে বিজয়ী প্রার্থী ও কর্মীরা আমার এজেন্ট-কর্মীদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।
আজ (শুক্রবার) উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের হাবড়াবাজারের ঝুমন আহমদ নামের আমার এক কর্মীকে প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়েছে বিজয়ী প্রার্থীর সন্ত্রাসীরা। এব্যাপারে আমরা থানার অভিযোগ করেছি এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের সহযোগীতা চেয়েছি। তাছাড়া একজন চেয়ারম্যান হয়েও উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজ আরব খান সিংরাওলী ভোট কেন্দ্রে টেবিল কাস্টিংয়ের মাধ্যমে ‘কাপ-পিরিচ’ প্রতীকে প্রচুর জাল ভোট দিয়েছেন এবং প্রিজাইটিং কর্মকর্তা’সহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে আতাত করে ফলাফল সিটেও ভোটের পরিমাণে কারচুপি করিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান প্রার্থী সেবুল মিয়ার সাথে উপস্থিত ছিলেন সিরাজুল ইসলাম, সেলিম মিয়া, তাজ উদ্দিন, আব্দুল মালিক, রায়হান আলী মনির, আফিজ আলী, আমির আলী, রমজান আলী, কামাল উদ্দিন, আব্দুর রউফ, সিরাজুল ইসলাম, সাব্বির আহমদ, মাসুম আহমদ, রোপন মিয়া, শাহ সনি, কাউসার, আবু সুফিয়ান, জাকারিয়া, সরিফ আহমদ, শাহ টিপু, শাহ লিলু মিয়া, জয়নাল আবেদীন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাচন গত ৮ মে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র ১০জন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। বেসরকারীভাবে ফলাফলে ‘কাপ-পিরিচ’ প্রতীকে ১৩ হাজার ৩২২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হল সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি সুহেল আহমদ চৌধুরী।
তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি চেয়ারম্যান প্রার্থী ‘আনারস’ প্রতীকে বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহমদ পেয়েছেন ১২ হাজার ৯৬৮ ভোট এবং তৃতীয় স্থানে থাকা ‘দোয়াত-কলম’ প্রতীকে যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক প্রবাসী সেবুল মিয়া পেয়েছেন ১১ হাজার ৬৯৯ ভোট।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন