সিলেটে বিস্ফোরক আইনে ভূয়া মামলা: বাদী,আইনজীবির সিল ও স্বাক্ষর জাল

সিলেট জুড়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা, হত্যা নৈরাজ্য নিয়ে সিলেটে প্রতিদিন মামলার খবর অনলাইন ও প্রিন্ট গনমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। সিলেট বিভাগে মামলার নামে একটি মামলা বাজ চক্র মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইন মামলায় প্রতিহিংসা ও পূর্বের শত্রুতাকে কেন্দ্র করে নিরীহ মানুষকে আওয়ামীলীগ নেতা সাজিয়ে আসামী করছে মামলাবাজ চক্রটি।

এদের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে আদালত পাড়ার গুটি কয়েক আইনজীবির মহরির সহ বিএনপির কর্মী নামধারীদের। প্রতিদিন মোঠা অংকের টাকার বিনিমিয়ে থানা কিংবা আদালতে দায়ের কৃত মামলায় জড়িয়ে আসামী করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, সিলেট যে মামলা গুলো হচ্ছে বেশির ভাগ আওয়ামীলীগের মন্ত্রী ও পদধারী নেতার সাথে জড়ানো হয় বিভিন্ন উপজেলা, জেলা শহরের অপরিচিত মুখদের আসামী করা হচ্ছে।

শুধু তাই নয় জড়ানো হচ্ছে সাংবাদিক ও পত্রিকার সম্পাদকদেরও। ওই ঘটনা গুলোকে নিয়ে সিলেটের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার এলাকায় ৪ ও ৫ তারিখের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ও ক্ষতিপূরণের যে মামলা গুলো হয়েছে প্রত্যেকটি ঘটনায় সিলেটের বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের নাম দেখা গেছে। যা হাস্যকর করে তুলেছে সচেতন মহলের নিকট। সংঘর্ষ হলো পুলিশ ও ছাত্রদের মধ্যে আসামী কেন ? সাংবাদিক এ প্রশ্ন এখন মিডিয়া পাড়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

এদিকে বিএনপির নামধারী অতি উৎসাহি কর্মী নিরীহ সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রাণী করার অভিযোগে বিএনপির ভাবমূর্তির বড় ধরণের আঘাত আনছে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে আগামী নির্বাচনের উপর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, এখনও নির্বাচন অনেক বাকি ক্ষমতায় যাওয়ার আগে যদি এরকম হয়রাণী করা হয় সাধারণ মানুষকে,দেশে বাসরা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

তবে এদিকে সিলেট জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দরা জানিয়েছেন, কাউকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রাণী না করার জন্য। তারপরও বিএনপির কর্মী নাম ব্যবহার একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রাণী করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
সম্প্রতি গত ২৯ আগষ্ট অতিরিক্ত চীফ মেট্রোলিটন ম্যাজিষ্টেট, সিলেট আদালতে ৩৬১ জনকে আসামী করে বিস্ফোরক আইনের (দন্ডবিধির ১৪৩/১৪৪/১৪৮/১৪৯/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩৪ এবং বিস্ফোরক আইন ১৯০৮ এর ৩/৪ ধারায়) একটি মামলা দায়ের করেন আদালতে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহরের বাসিন্দা মো. ইমরান আহমদ নামের এক ব্যক্তি।

তিনি বিএনপির কর্মী বলে জানাগেছে, তবে মামলার এজহারে তার কোন বাসার ঠিকানা, দলীয় পরিচয় বা পিতা ও নিজের কোন এনআইডি নাম্বার উল্লেখ করতে দেখা যায়নি। ওই মামলায় আসামী করা হয় সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন, সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, সিলেট-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদ, সিলেট-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আহমদ আল কবির, সিলেট-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ. বিএমএ নেতা ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুল্লা, কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সারোয়ার হোসেন ও মাওলানা হুসাম উদ্দিন সহ সিলেটের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক বৈচিত্র্যময় সিলেট পত্রিকার সম্পাদক আবুল কাশেম রুমনকে। সাপ্তাহিক বৈচিত্র্যময় সিলেট পত্রিকার সম্পাদককে আওয়ামীলীগ নেতা সাজিয়ে মামলার আসামী করা হয়।

বিষয়টি বৈচিত্র্যময় সিলেট পত্রিকার সম্পাদকের নজরে আসলে তিনিসহ তার পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিকরা রহস্যের অসুন্ধান করতে থাকেন। অনুসন্ধানে সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) দিন ব্যাপী ওই বাদি ও মামলায় নিযোক্ত আইনজীবিকে খুজতে থাকেন। মামলায় আইনজীবি হিসেবে এজহারে দেখা যায় জজ কোর্টের আইনজীবি পরিতুস পাল চৌধুরী এর শিল ও স্বাক্ষর রয়েছে। এ ব্যাপারে তার সাথে কথা বলে তিনি জানান, আমি এই ধরণের কোন মামলা করিনি কে বা কারা আমার স্বাক্ষর ও শিল জাল করেছে।

বিষয়টি আমার নজরে আসলে সিলেট বার আইনজীবি সমিতির সভাপতিকে অবগত করেছি।

এছাড়া বাদীর উল্লেখিত আদালতে মামলার নির্ধারিত রেজিষ্ট্রি খাতায় ধরণের মামলা হতে দেখা যায়নি। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও অনেকের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ওই মামলার এজহারে কপি পাঠায় একটি চক্র। এজহারে দেখা যায়, বাদীর নাম ও ঠিকানা কিছু নেই উক্ত মামলার প্রথম পাতার এজহারে বাদী ইমরান আহমদ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে আর স্বাক্ষর করা হয়েছে এমরান হোসেন নামের আরেক জন।

এদিকে দেখা যায়,আইনজীবির ব্যবহৃত উক্ত শীল ও স্বাক্ষরের কোন মিল নেই। উক্ত এজহারে মামলার কোন নাম্বারও দেখা যায়নি। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক জন ভূক্তভোগী আইন শৃঙ্খলাবাহীর কাছে অভিযোগ করেছেন বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য। উক্ত মামলা এজহারের কপি নিয়ে গোয়েন্দা সংখ্যার সদস্যরা মাঠে নামেছে বলে জানা গেছে, কে বা কারা এ ঘটনার সাথে জড়িত খতিয়ে দেখতে।

সাপ্তাহিক বৈচিত্র্যময় সিলেট পত্রিকার সম্পাদক আবুল কাশেম রুমনের সাথে কথা বলে তিনি জানান, আমি মিডিয়ার একজন ব্যক্তি আমরা সব সময় সব রাজনৈতিক দলের কাজ করি, সাধারণ মানুষ ও দেশ জাতীর কল্যাণের জন্য কাজ করি। আর আমি কখনও কোন দলের রাজনীতি করি না। তাছাড়া আমি কখনও আওয়ামীলীগ করি না, অথচ আমাকে আওয়ামীলীগ নেতা সাজিয়ে ৪৯ নং আসামী করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে এটি অত্যান্ত দুঃখ জনক আমি এর তিব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

এ মামলার বাদী সিলেট নগরীর উপশহর এলাকায় এমরান আহমদকে খুজতে গেলে তার কোন দেখা মেলেনি ওই নামে কেউ আছেন বলে চেনন না স্থানীয়রা জানান। তবে এলাকায় একজনকে পাওয়া গেলে তিনি হাবা বোবা প্রকৃতির তিনি ওই মামলার ধারে কাছে নয়, তিনি এখনও ঠিক মত উপশহরের অলি গলি চেনন না। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে কে সেই এমরান আহমদ মামলা বাদী।