সিলেটে ভারতীয় চোরাই চিনি কান্ডের অন্তরালে পুলিশের সোর্স ও নিবন্ধিত টিভি চ্যানেল ফেসবুক লাইভাররা

গত কয়েক দিন ধরে সিলেটে চিনি কান্ডে দেশ জুড়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বার বার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নাম উঠেছে ও অনেক কে আবার বাহিস্কার করা হয়েছেন, কাউকে আবার গ্রেফতার করা হয়েছেন। ওই বিষয়টি নিয়ে আওয়ামীলীগ দলীয় রাজনীতে বিব্রত অবস্থায় রয়েছেন স্থানীয় নেতারা। সিলেট শহরতলির উমাইরগাঁওয়ে আলোচিত ১৪ ট্রাক ভারতীয় চোরাই চিনি জব্দের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত দুই ট্রাক চালকের জবাবন্দিতে ট্রাক ভাড়া করা ও চোরাই চিনি বহন করার বিষয়ে দেলোয়ার মোল্লা ও নুর ইসলাম নামের দুই ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে।

এর মধ্যে নুর ইসলামের ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও দেলোয়ার মোল্লার বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের লোক হিসাবে পরিচিত। থানার ওসির সাথে একটি ছবিতে তাকে দেখা গেছে। জালালাবাদ থানার ওসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আদালতে দুই আসামির জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেফতারকৃত দুই আসামি ১৬৪ ধারা মোতাবেক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে তারা দু’জনেই মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও প্রদান করেছে। জবানবন্দিতে দেওয়া তথ্য সমূহ যাচাই- বাছাই করা হচ্ছে। আসামিদের শনাক্ত করে তাদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান ওসি।

জানা গেছে, উমাইরগাঁওয়ে ১৪ ট্রাক চিনিসহ জব্দ করা একটি ট্রাকের চালক মুনসুর আলীকে (৩৮) গত ১১ জুন ২০২৪ইং গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত মুনসুর আলী সিলেট সদর উপজেলার রঙ্গিটিলা গ্রামের রুস্তম আলীর পুত্র। গ্রেফতারের পরদিনই মুনসুর আলী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সিলেটের মহানগর হাকিম (তৃতীয় আদালত) উম্মে হাবিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। একই ঘটনায় শনিবার (২৯ জুন) গ্রেফতার করা হয় সদরুল আমিন আকাশ (২৮) নামের আরেক ট্রাক চালককে।

সদরুল সিলেট সদর উপজেলার উমদারপাড়ের আফান আলীর পুত্র। গ্রেফতারের পরদিন রোববার (৩০ জুন) সদরুলও একই আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে তারা দু’জন আদালতের আদেশে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। আলোচিত ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত উপরোক্ত দুই আসামি গ্রেফতার হলেও এখনো মূলহোতারা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এদিকে, আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে ট্রাক চালক মুনসুর আলী ঘটনার আদ্য প্রান্ত বর্ণনা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, ‘যদি পুলিশের হাতে চিনি চোরাচালান ধরা পড়ে যায়, তাহলে দেলোয়ার মোল্লা পুলিশের দিকটা দেখব। জবানবন্দিতে ১৪ ট্রাক চিনি ধরা পড়ার আগে আরও তিনটি ট্রাক পালিয়ে যাওয়ার তথ্য প্রকাশ করেছেন মুনসুর। মুনসুরের ট্রাকটি ভাড়া করেছিলেন নুর ইসলাম নামের একজন। আর চোরাই চিনির বাহক হিসেবে পথ নির্দেশকের দায়িত্ব পালন করেন দেলোয়ার মোল্লা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের ধারণা, দেলোয়ার মোল্লা চোরাকারবারীদের একজন।

আর তথ্য সুত্রে জানা যায়, জবানবন্দিতে মুনসুর আলী বলেন, ‘৫ জুন সন্ধ্যার দিকে নুর ইসলাম আমাকে বলে একটা ট্রিপ আছে। হাদারপাড় (বিছনাকান্দি) ট্রাক নিয়ে যেতে বলে। রাত সাড়ে ১০ টায় হাদারপাড় যাই। নুর ইসলাম আমাকে বলে এক ট্রিপ চিনি নিয়ে যাও। তোমাকে ১০ হাজার টাকা ভাড়া দেব। আমি বলেছি, পুলিশ ধরব। তখন সে (নুর ইসলাম) আমাকে বলে, পুলিশে ধরবে না। পুলিশকে ম্যানেজ করব। আমি তখন ১৫৫ বস্তা চিনি নৌকা থেকে ট্রাকে তুলি। তারপর আমাকে নুর ইসলাম বলেছে, দেলোয়ার মোল্লা পুলিশের দিকটা দেখব। আমি ট্রাক চালাইয়া সালুটিকর আসি। তখন সেখানে দেখি আরও ১৬-১৭টি ট্রাক দাঁড়ানো। নুর ইসলাম আমাকে ফোনে বলে যে, উমাইরগাঁও রোড ধরে যাওয়ার জন্য। কিছু ট্রাক এক রোডে, কিছু অন্য রোডে, আবার সবকিছুর নির্দেশনা ফোনে -ফোনে হচ্ছিল। আমরা ট্রাক নিয়ে উমাইরগাঁও রোডে রওনা হতেই একটা সাদা রঙের প্রাইভেট কার ও একটি মোটরসাইকেল আমাদের ট্রাক ক্রস করে, আমাদের রাস্তা ক্লিয়ার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এরা কারা আমি ঠিক জানি না। দেলোয়ার মোল্লা জানতে পারে এরা কারা। আমরা উমাইরগাঁও যাওয়ার পরই দেখি আমার সামনের ৬-৭টা ট্রাক ঘুরিয়ে ফেলছে। আমিও দেখে ট্রাকটি ঘুরিয়ে ফেলি। সামনের ট্রাককে জিজ্ঞেস করতে বলে, দুই-তিন মিনিট দাঁড়াতে। এর মধ্যেই বাইক ও প্রাইভেট কারের লোকজন পালাইছে। অন্য ট্রাকের ড্রাইভাররাও পালিয়ে যায়। ৪-৫ মিনিটের মধ্যে দেখি পুলিশ এসে গেছে। তখন সুযোগ বুঝে আমিও পালিয়ে যাই।
উক্ত বিষয় গুলো নিয়ে সিলেটের বহুল প্রচারিত স্থানীয় একটি দৈনিকে তথ্য প্রকাশের পর ধীরে ধীরে সচেতন মহল ও প্রশাসনের কাছে বিষয়গুলো ধোঁয়াশা পরিস্কার যায়।

কে এই দেলোয়ার মোল্ল :
ট্রাক ভাড়া করে দেয়া নুর ইসলামের পরিচয় কিংবা ঠিকানা পাওয়া যায়নি। অবশ্য, দেলোয়ার মোল্লাকে এক নামে সবাই চেনেন বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন । তবে সাহস করে কেউ প্রকাশ্যে তার ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হননি। তাদের সবার বক্তব্য দেলোয়ার ‘পুলিশের লোক’। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই দেলোয়ার মোল্লার একটি ছবি গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম প্রাবনের সঙ্গে রয়েছে। দেলোয়ার মোল্লার ফেসবুক আইডিতে পাওয়া গেছে ওসি রফিকুলের সঙ্গে ছবিটি। ‘নতুন ওসি স্যারের সাথে ক্যাপশন লিখে দেলোয়ার মোল্লা তার নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়েছেন গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেলোয়ার মোল্লর বাড়ি গোয়াইনঘাট থানার হাদারপাড়ে। দেলোয়ার মোল্লা স্থানীয়দের নিকট ‘পুলিশের লোক’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও তার সখ্যতা রয়েছে। দেলোয়ার মোল্লার পেশা কী- এ বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারেননি। দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা না থাকলেও তার চলাফেরা রাজকীয় বলে জানা গেছে। স্থানীয় লোকদের মাধ্যমে দেলোয়ার মোল্লার দুটো ফোন নম্বর পাওয়া গেলেও দুটো নম্বরই বন্ধ পাওয়া গেছে।

গোয়াইনঘাটের ওসির বক্তব্য :
দেলোয়ার মোল্লর ব্যাপারে জানতে চাইলে গোয়াইনঘাট থানার ওসি রফিকুল ইসলাম প্রাবণ বলেন, ফেইসবুকে যত্রতত্র মানুষ ছবি তুলতে পারে। নতুন স্থানে আসলে কাউকে চেনার উপায় থাকে না। তবুও মামলাটি অন্য থানার। উনারা যদি আসামি ধরতে আসে ডেফিনিটলি আমি তাদেরকে সহায়তা করব।

প্রসঙ্গত, সিলেট মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানার উমাইরগাঁওয়ে গত ৬ জুন ১৪ ট্রাক চোরাই চিনি জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন পুলিশের এসআই মো. সালাহ উদ্দিন বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন। মামলা নম্বর-০৫। সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে আসা চোরাই চিনি চোরাচালানের মধ্যে এটি হলো সবচেয়ে বড় চোরাচালান। ঘটনার পর চোরাকারবারী শনাক্ত করতে পুলিশ মাঠে নামলেও এর মূলহোতাদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি।

অনিবন্ধিত টিভি চ্যানেল ফেসবুক লাইভাররা যা করছেন :
গোঠা সিলেট বিভাগ জুড়ে ভুঁইফোড় অনলাইন পত্রিকা কিং বা বেশি ভাগ ফেসবুক লাইভাররা বিভিন্ন চ্যানেল এর নাম ব্যবহার করে একটি বুম হাতে নিয়ে টিভি চ্যানেল এর মতো লাইভ নিউজ করছে। বিশেষ করে সিলেট শহর তথা জাফলং, গোয়াইনঘাট, গোলাপগঞ্জ,জৈন্তাপুর উপজেলায় এসব লাইভারের আনাগুনা বেশি দেখা যায়। আর বেশি ভাগ পুলিশ ও বিভিন্ন রাজনীতিবিদের সাক্ষাতকার ও তেলবাজি করে থাকে ওরা। ওদের মুল টার্গেট হচ্ছে সীমান্ত এলাকা,সিলেটের শহরের ৩জন ও পীরের বাজার ১ জন মোট ৪ জন ফেসবুক লাইভার বেপরোয়া হয়েছে উঠেছে। এর মধ্যে জনৈক এক মহিলা একসময় যুব মহিলা লীগ করতেন তিনি এখন সিলেটে শহরের মস্তবড় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ধাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয় ও তাছাড়া তাকে সিলেটের বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক বৈচিত্র্যয় সিলেট পত্রিকার স্টাফ রিপোটারের পরিচয়ে ও পুলিশ – র‌্যাবের সোর্স ব্যবহার করে মানুষকে হয়রাণীকার অভিযোগে তাকে পত্রিকা থেকে বহিস্কার করা হয়। এছাড়া ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং এর কারণে তার বিরুদ্ধে আদালতে সাইবার মামলাও রয়েছে চলমান। আর ওদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকার জনৈক এক ফেসবুক ভিত্তিক টিভি চ্যানেল ও স্থানীয় জাতীয় দেওয়াল পত্রিকা কার সম্পাদক ও চেয়ারম্যান। ওই ৪ লাইভারদের প্রতিনিধি মানিয়ে সিলেটের সীমান্ত এলাকা ও সিলেটের বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, তীর ও জোয়া খেলার বোর্ড থেকে অবৈধ আদায় করা হচ্ছে মাসিক বখরা। সিলেটে এ ৪ লাইভারের বিরুদ্ধে রয়েছে প্রতারণা ও ব্ল্যাক মেইল এর কারণে ১০/১২ টি মামলা আদালতে চলামান রয়েছে। এই ভুঁইফোড় অনলাইন ও ফেসবুক লাইভারের বিরুদ্ধে স্থানীয় সাংবাদিক কিংবা ভূক্তভোগী সাধারণ মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই হতে হয় ধর্ষণ কিংবা সাবইবার মামলার শিকার। ভালো মানুষের বিরুদ্ধে তাদের ভূঁইফোড় অনলাইন ফেসবুক পেইজে অশ্লীল ভাষায় লাইভ শুরু করে দেয়। যদিও কোন সময় অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ওদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করলেই প্রতিবাদলিপি পাটিয়ে দেয় তাদের চেয়ারম্যান ও ওই দেয়াল পত্রিকার সম্পাদক, ফোন করে নানা হুমকি প্রদান করে থাকে প্রকাশিত সংবাদ মাধ্যমকে। যা সিলেটের সকল অবৈধ চিনি কান্ড থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে এরা বেপরোয়া উঠেছে এ সিন্ডিকেট চক্র। ওই সববের সাথে কিছুটা মদতদাতা হিসেবে রয়েছেন প্রশানের কিছু কর্তারা।