সিলেট বন্যায় ৯ টি উপজেলা প্লাবিত, তারপর উপজেলা নির্বাচন বুধবার

সিলেটের ৯টি উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে সুরমা নদীর ৮টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপরি বন্যার পানি প্রবাহিত হয়েছে। তারপর বুধবার পানি বন্ধী মানুষের মাঝে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সিলেটের ২টি উপজেলা বেশি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে এগুলো হচ্ছে কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ।

ওই উপজেলা পরিষদের নির্বাচন (০৫ জুন) বুধবার। সরকারি হিসাবে এই দুই উপজেলার অন্তত ৩০০ গ্রাম প্লাবিত হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ভোটের প্রস্তুতি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড পাউবো সিলেট সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (৩ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৬১ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার সন্ধ্যায় এই পয়েন্টে পানির অবস্থান ছিল ১৩ দশমিক ৪৪ সে.মি. আর সোমবার সন্ধ্যায় এই পয়েন্টে পানির অবস্থান হচ্ছে ১৩ দশমিক ৩৬ সে.মি.। এই পয়েন্টে বিপদসীমা ১২ দশমিক ৪৪ সে.মি.।

সিলেট: পয়েন্টে সুরমার পানি সোমবার (৩ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় বিপদসীমার ১ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার (৩ জুন) সন্ধ্যায় এই পয়েন্টে পানি ছিল ১০ দশমিক ৮১ সে.মি.। যা রোববার সন্ধ্যায় ১০ দশমিক ৭৮ সে.মি., মঙ্গলবার ( ৪ জুন) সন্ধ্যায় ১০ দশমিক ৭৯ সে.মি. প্রবাহিত হচ্ছে।

পরিসংখ্যা দেখা যায় অমলশীদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি কমলেও এখনো বিপদসীমার ৪০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যায় এই পয়েন্টে পানির সর্বশেষ অবস্থান ছিল ১৫ দশমিক ৮০ সে.মি.। যা রোববার ছিল ১৬ দশমিক ২৭ সে.মি.। এর বিপদসীমা হচ্ছে ১৫ দশমিক ৪০ সে.মি.।

সামবার (৩ জুন) সন্ধ্যায় শেওলা পয়েন্টে একই নদীর পানি কমে বিপদসীমার ৩৯ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির সর্বশেষ অবস্থান ছিল ১২ দশমিক ৬৬ সে.মি.। যা রোববার সন্ধ্যায় ছিল ১২ দশমিক ৯১ সে.মি.। এর বিপদসীমা ১৩ দশমিক ০৫ সে.মি.।

এদিকে ফেঞ্চুগঞ্জে পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার ২১ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যায় পানির অবস্থান ছিল ১৩ দশমিক ৬৬ সে.মি.। যা রোববার ছিল ১০ দশমিক ৫৩ সে.মি.। এর বিপদসীমা ১২ দশমিক ৪৫ সে.মি.।

শেরপুর: পয়েন্টে একই নদীর পানি বিপদসীমার ৫২ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সোমবার সন্ধ্যায় পানির অবস্থান ছিল ৮ দশমিক ০৩ সে.মি.। সোমবার সন্ধ্যায় লোভাছড়া পয়েন্টে লোভা’র পানির অবস্থান ছিল ১৩ দশমিক ৪৩ সে.মি.। যা রোববার ছিল ১৩ দশমিক ৫৩ সে.মি.। ২৪ ঘন্টায় এই পয়েন্টে কমেছে পানি।
সারিঘাট পয়েন্টে সারি’র পানি বাড়লেও বিপদসীমার ৬০ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সোমবার সন্ধ্যায় পানির অবস্থান ছিল ১১ দশমিক ৭৫ সে.মি.। যা রোববার ছিল ১১ দশমিক ৫৭ সে.মি.। জাফলং পয়েন্টে ডাউকি নদীর পানি বাড়লেও বিপদসীমার ২৩৬ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যায় পানির অবস্থান ছিল ১০ দশমিক ৬৪ সে.মি.। যা রোববার ছিল ১০ দশমিক ৫২ সে.মি.।

গোয়াইনঘাট: পয়েন্টে সারি গোয়াইনের পানি বাড়লে বিপদগসীমার ৫৪ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যায় পানির অবস্থান ছিল ১০ দশমিক ২৮ সে.মি.। যা রোববার ছিল ১০ দশমিক ২২ সে.মি.। এদিকে গত ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে সুনামগঞ্জ, ছাতক ও দিরাই পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে, জকিগঞ্জের এক চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট গ্রহণ পেছানোর আবেদন করেছেন। যদিও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, যথাসময়ে ভোট নেওয়া হবে। বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি আশঙ্কায় এই ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত বলে তারা জানিয়েছেন।

সোমবার (৩ জুন) সিলেট জেলা প্রশাসন থেকে প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, জকিগঞ্জের নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং কানাইঘাটের আট ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা বন্যা কবলিত। জকিগঞ্জে ১১০টি এবং কানাইঘাটে ১৯০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া জকিগঞ্জে ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৯৮ জন এবং কানাইঘাটে ৮০ হাজার ৬০০ জন বন্যায় কবলিত।

সিলেটের জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান বলেন, ‘দুটি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা নির্বাচন কমিশনকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। তাই বুধবার (৫ জুন) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এমনটা ধরে নিয়েই সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে।

জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী মরতুজা আহমদ বলেন, তার উপজেলার ৭৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩০টি কেন্দ্রেই বন্যার পানি আছে। উপজেলার অন্তত ১৫০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় সে সব গ্রামের বাসিন্দারা পানিবন্দি সময় কাটাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে (১ জুন) শনিবার তিনি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফসানা তাসলিমের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।

এ বিষয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফসানা তাসলিম বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী সামনে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই ভোট গ্রহণের বিষয়টি নির্দিষ্ট তারিখেই শেষ করার উদ্দেশ্যে কাজ চলছে।

এ বিষয়ে সিলেটের জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান জানান, যথাসময়েই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে জকিগঞ্জ উপজেলার ৫টি কেন্দ্র এবং কানাইঘাট উপজেলার ৪টি কেন্দ্র বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় বিকল্প কেন্দ্রের তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে।