সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট এবং সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে, আরও ৬ দিন বৃষ্টি ও মেঘালয় থেকে পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকবে। নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়ছে।বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।

সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি, বজ্রপাতসহ দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে সুনামগঞ্জের ওপর দিয়ে। হাওর অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

এছাড়া নতুন করে তলিয়ে যাচ্ছে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা। শহরে কোথাও হাঁটু আবার কোথাও কোমরসমান পানি বিরাজ করছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১০০ মিলিমিটার, লাউড়ের গড়ে ৭৮ মিলিমিটার, ছাতকে ৮৪ মিলিমিটার এবং দিরাইয়ে ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। নদীর পানি কমলেও বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পানি বাড়তে পারে।

বুধবার (১৯ জুন) সকালে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ছাতক উপজেলায় বিপৎসীমার ১৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং দিরাই উপজেলায় ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

অন্যদিকে সকাল থেকে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সিলেট নগরীর অভিজাত এলাকা উপশহর, তালতলা, জামতলা, ছড়ারপাড়, শেখঘাট, মাছিমপুর, ঘাসিটুলা, শামীমাবাদ ও বাগবাড়িসহ বিভিন্ন নিচু এলাকা তলিয়ে যেতে শুরু করে। দুপুর ১২টার দিকে কয়েকটি এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি দেখা গেছে। এতে চরম আতংকে রয়েছেন বাসিন্দারা। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে শুরু করেছেন।

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) বলছে, নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে এরইমধ্যে ২২টি ওয়ার্ড বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। এসব ওয়ার্ডের অন্তত ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নগরীতে ৮০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরীতে ৮২ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। একইসময় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

অন্যদিকে গত তিন ধরে সুনামগঞ্জের প্রতিটি উপজেলা বন্যা আক্রান্ত হয়ে সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় জেলার সাথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সুরমা নদীর পানি প্রতি মুহূর্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকার ৮০ ভাগ প্লাবিত হয়েছে। সুরমা, যাদুকাটা, চেলাসহ সীমান্তের নদীগুলো দিয়ে পানি ভাটির দিকে প্রবাহিত হওয়ায় তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর, বিশ্বম্ভরপুর, ধর্মপাশা, জগন্নাথপুর, দিরাই, শাল্লা, শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। অনেকেই নিজ নিজ বসতবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু স্থানে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ৬৯টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার প্রায় চার লাখের অধিক মানুষ বন্যাকবলিত। এর মধ্যে প্রায় ১২ হাজার ৪৩৯ জন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। পানিতে ডুবে আছে তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক। ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়ক, দোয়ারাবাজার-ছাতক সড়ক, জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫ হাজার জন, বিশ্বম্ভরপুরে ২২ হাজার, শান্তিগঞ্জে ১৫ হাজার, তাহিরপুরে ১ লাখ ৪০ হাজার, জামালগঞ্জে ১২ হাজার ৬৭০, জগন্নাথপুরে ৩৭ হাজার ৩১০, দিরাইয়ে ৭৮ হাজার ২৫০, শাল্লায় ১১৭, ছাতকে ২ লাখ ও দোয়ারা বাজার উপজেলায় ৫০ হাজার লোক বন্যা কবলিত হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ৫৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৪৩৯ জন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, আগামী ৬ দিন বৃষ্টি ও মেঘালয় থেকে পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকবে। নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়ছে। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। সবাইকে সর্তক থাকতে হবে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, প্রশাসন বন্যার্তদের জন্য প্রতি উপজেলায় ত্রাণ, শুকনো খাবারসহ সরকারি সহায়তা পাঠিয়েছে এবং সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর ও জগন্নাথপুরে ৫ টন করে জিআর চাল দেওয়া হয়েছে। ৬০০ টন জিআর চাল মজুদ রয়েছে। শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য ও গো-খাদ্যের জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি। এছাড়াও এ পর্যন্ত নগদ ১০ লাখ টাকা বিভিন্ন উপজেলায় দেওয়া হয়েছে।